উৎপাদন বাড়লেও চালের বাজারে মিলছে না স্বস্তি

0

লোকসমাজ ডেস্ক॥ চাল কিনতে নাভিশ্বাস উঠছে নিম্ন আর মধ্যবিত্ত মানুষের। এমনিতেই গত কয়েক বছর ধরে চালের দাম সর্বোচ্চ পর্যায়ে রয়েছে, তার মধ্যে সম্প্রতি নতুন করে চালের দাম কেজিপ্রতি চার টাকা বেড়েছে। এমন অবস্থায় গত এক দশকে চালের যে উৎপাদন বৃদ্ধি, তার কোনো সুফল পাচ্ছেন না ভোক্তারা। দেশের উৎপাদন ও পণ্যের দামের তথ্য-উপাত্ত বিশ্লেষণে দেখা গেছে, গত এক দশকে চালের উৎপাদন বেড়েছে ৫০ লাখ মেট্রিক টনের বেশি। তারপরও দাম বেড়েছে প্রায় দেড় গুণ। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো এবং ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের তথ্যনুযায়ী, এক দশক আগে (২০১০-১১ অর্থবছর) প্রতি কেজি (মাঝারি মানের) চালের গড় দাম ছিল ৪১ টাকা, যা বর্তমান বাজারে ৬০ টাকায় কিনতে হচ্ছে । গত অর্থবছরও (২০১৯-২০) প্রতি কেজি চালের গড় দাম ছিল ৫৬ টাকা।
তথ্য বিশ্লেষণে দেখা গেছে, গত এক দশকের মধ্যে ২০১৩-১৪ অর্থবছরের আগ পর্যন্ত চালের দাম ছিল সর্বোচ্চ ৪৬ টাকা। এরপর হঠাৎ করেই পরের বছর চালের দাম ৫৩ টাকায় ওঠে। পরে ২০১৫-১৬ অর্থবছরে দাম এক টাকা কমেছিল। কিন্তু এরপর আবার চালের দাম লাগাম ছাড়া হয়। প্রতি বছর লাফিয়ে লাফিয়ে বেড়েছে এ নিত্যপণ্যটির দাম। তথ্য বলছে, পরবর্তী অর্থবছরগুলোতে চালের দাম ছিল যথাক্রমে ৫৩ টাকা, ৫৫ টাকা, ৫৭ টাকা ও ৫৬ টাকা। অন্যদিকে কৃষি অধিদফতরের তথ্য বলছ, এক দশক আগেও দেশে চালের উৎপাদন ছিল তিন কোটি ৩৫ লাখ টন, যা এখন (২০১৯-২০ অর্থবছর) তিন কোটি ৮৭ লাখ টনে এসে দাঁড়িয়েছে। ২০১৬-১৭ অর্থবছরের পরে প্রতি বছর চালের উৎপাদন প্রায় ১০ থেকে ১২ লাখ টন করে বেড়েছে। তারপরও ভোক্তা পর্যায়ে চালের মূল্যবৃদ্ধির বিষয়ে মধ্যস্বত্বভোগীদের দায়ী করছেন সংশ্লিষ্টরা। সরকারের বিভিন্ন মহলও এ বিষয়টি স্বীকার করেছেন অনেকবার। তারপরও নানা অদৃশ্য কারণে চালের দাম কমাতে সরকারের নেয়া কোনো পদক্ষেপের সুফল মেলেনি। এসব বিষয়ে কৃষি অর্থনীতিবিদ ও বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য এম এ সাত্তার মন্ডল জাগো নিউজকে বলেন, চালের দাম বাড়লে নিম্নবিত্তরা কষ্টে থাকে। বিশেষ করে এখন করোনাকালে প্রান্তিক জনগোষ্ঠী আরও বেশি কষ্টে রয়েছে। তিনি বলেন, চালের এ বাড়তি দামের কারণে কৃষকরা যদি লাভবান হতো সেটা একটা বিষয় ছিল, কিন্তু সে কাজটা কতটুকু হয় তা নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে। এমন কোনো ব্যবস্থা দরকার যাতে ভোক্তারা কম দামে চাল খেতে পারে আবার কৃষকরাও ন্যায্যমূল্য পান। মূল্যবৃদ্ধিতে মধ্যস্বত্বভোগীদের দায়ী করে এ কৃষি অর্থনীতিবিদ আরও বলেন, গত কয়েক বছর লক্ষ্য করা গেছে যে, ভরা মৌসুমেও বাজারে পর্যাপ্ত ধানের সরবরাহ থাকে না। ওই সময় সামর্থ্যবান ব্যবসায়ীরা চালের মজুত করেন। পরে ওইসব মজুতদার বাজারে দাম বাড়িয়ে দেন। বিষয়টি নিয়ে চালকল মালিকদের সংগঠন বাংলাদেশ অটো মেজর অ্যান্ড হাসকিং মিল ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক লায়েক আলী বলেন, ধানের দাম বাড়লে কেউ কৃষককে দায়ী করে না, কিন্তু ওই কারণে চলের দাম বাড়লে সবাই মিলারদের দোষ দেয়। প্রকৃতপক্ষে ধানের দামের কারণে মিলাররা এখন লোকসান দিচ্ছে।