করোনা সংক্রমণে বাসায় চিকিৎসা নেওয়া উচিৎ নয় যাদের

0

লোকসমাজ ডেস্ক॥ গত ২৪ ঘণ্টায় করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন ২৭ জন। তার আগের দিন (১৫ ডিসেম্বর) মারা গেছেন ৪০ জন, ১৪ ডিসেম্বর মারা গেছেন ৩৭ জন, ১৩ ডিসেম্বর ৩২ জন, ১২ ডিসেম্বর ৩৪ জন, ১১ ডিসেম্বর ১৯ জন, ১০ ডিসেম্বর ৩৭ জন এবং ৯ ডিসেম্বর মারা গেছেন ২৪ জন। করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে মৃতদের অধিকাংশ হাসপাতালে মারা গেছেন। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এখন মৃদু সংক্রমণ নিয়ে হাসপাতালে কেউ ভর্তি হচ্ছে না। হাসপাতালে সেসব রোগীরা আসছেন যাদের সংক্রমণ-লক্ষণ তীব্র। যখন একেবারেই ভর্তি না হলে হচ্ছে না তখনই মানুষ ভর্তি হচ্ছে। ততদিনে সংক্রমণ তীব্র হচ্ছে আর কোভিডে তীব্র সংক্রমণ থাকলেই মৃত্যু হার বেশি।
স্বাস্থ্য অধিদফতরের করোনা বিষয়ক নিয়মিত সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হচ্ছে, যারা পূর্বে থেকেই দীর্ঘমেয়াদী রোগে আক্রান্ত তারাসহ বয়োজ্যেষ্ঠদের করোনা পজিটিভ হলে দ্রুত হাসপাতালে ভর্তি করতে হবে। স্বাস্থ্য অধিদফতরের একটি সূত্র বাংলা ট্রিবিউন জানায়, মৃত্যু বেড়ে যাওয়াতে গত ২৭ নভেম্বরে বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য যোগ করার সিদ্ধান্ত নেয় স্বাস্থ্য অধিদফতর। তারপর থেকেই বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য যোগ হচ্ছে। দেশে এখন পর্যন্ত করোনাতে আক্রান্ত হয়ে সরকারি হিসেবে মারা গেছেন সাত হাজার ১৫৬ জন। গত ১২ ডিসেম্বর মৃত্যু সংখ্যা সাত হাজার ছাড়ায়। আর গত ৩০ জুন স্বাস্থ্য অধিদফতর একদিনে ৬৪ জনের মৃত্যুর কথা জানায়, যা ছিল সর্বোচ্চ। বিশ্বে করোনাতে রোগী শনাক্তের দিক থেকে জনস হপকিন্স বিশ্ববিদ্যালয়ের তালিকাতে বাংলাদেশের অবস্থান ২৬তম, আর মৃত্যুর তালিকাতে রয়েছে ৩৩তম । করোনাতে সবচেয়ে বেশি মারা গেছেন ষাটোর্ধ্বরা। মোট মারা যাওয়া সাত হাজার ১৫৬ জনের মধ্যে ষাটোর্ধ্ব তিন হাজার ৮৭০ জন, শতকরা হিসাবে যা ৫৪ দশমিক শূন্য ৮ শতাংশ।ষাটোর্ধ্বরা অন্যান্য জটিল রোগে আক্রান্তসহ সবসময়ই করোনার জন্য ঝুঁকিপূর্ণ বলে এসেছেন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা। মৃত্যুর হারে এরপর রয়েছে ৫১ থেকে ৬০ বছর বয়সীরা। মোট মৃত্যুর মধ্যে এই বয়সের রয়েছেন এক হাজার ৮৩৪ জন; যা ২৫ দশমিক ৬৩ শতাংশ। ৪১ থেকে ৫০ বছরের মধ্যে ৮৪৪ জন; যা ১১ দশমিক ৭৯ শতাংশ। ৩১ থেকে ৪০ বছরের মধ্যে ৩৬৩ জন; যা পাঁচ দশমিক শূন্য সাত শতাংশ, ২১ থেকে ৩০ বছরের মধ্যে ১৫৭ জন; যা দুই দশমিক ১৯ শতাংশ। ১১ থেকে ২০ বছরের মধ্যে ৫৫ জন; যা শূন্য দশমিক ৭৭ শতাংশ আর শূন্য থেকে ১০ বছরের মধ্যে রয়েছে ৩৩ জন; যা শূন্য দশমিক ৪৬ শতাংশ।
জানতে চাইলে পাবলিক হেলথ অ্যাডভাইজারি কমিটির সদস্য ডা. আবু জামিল ফয়সাল বলেন, বাড়িতে থেকে যারা চিকিৎসা নেন তাদের লক্ষণ-উপসর্গ অতিরিক্ত হয় না বা অতিরিক্ত হবার মতো অবস্থা রোগীরা বুঝতেই পারে না। যার কারণে আমাদের রিকমেন্ডশন ছিল, বাড়িতে থাকা রোগী ম্যানেজমেন্টের জন্য একটা গাইডলাইন থাকা দরকার। তিন চারদিনের বেশি জ্বর থাকলে, শ্বাসপ্রশ্বাসের সমস্যা হলে আর অন্যান্য জটিল রোগ যেমন ডায়াবেটিস, অ্যাজমা, হার্টের সমস্যা, উচ্চ রক্তচাপ আক্রান্তদের বাড়িতে থাকা উচিত না। এটা সরকার করলো না। সরকার মানুষের ওপরে ছেড়ে দিলো, কিন্তু এটা করা উচিত ছিল। যার কারণে রোগী হাসপাতালে আসছে একেবারে শেষ সময়ে কিন্তু সেসময় আর তাকে ফেরানোর পথ থাকে না। কিন্তু শুরুতে যদি হাসপাতালে আসতো তাহলে এই রোগীদের কাউকে কাউকে হয়তো বাঁচানো যেত। ‘খুব আর্লি হাসপাতালে আসতে হবে, নিদেনপক্ষে অক্সিজেন সেচুরেশন কমে যাবার আগে’—মন্তব্য করে করোনা ডেডিকেটেড মুগদা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের মেডিসিন বিভাগের অধ্যাপক ডা. রুবিনা ইয়াসমিন বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, যখন কারও শ্বাসকষ্ট হবে, জ্বর থাকবে অনেকদিন, দুর্বল হয়ে যাচ্ছে তাদেরকে অবশ্যই হাসপাতালে আসতে হবে। যে রোগীদের জ্বর কমছে না তাদের অবস্থাই বেশি খারাপ হয়ে যায় জানিয়ে তিনি বলেন, আর যাদের রিস্ক ফ্যাক্টর রয়েছে তাদের লক্ষণ দেখা দেওয়ার সাত দিনের মধ্যে যদি লক্ষণ কন্টিনিউ করতে থাকে তাহলে অবশ্যই শারীরিকভাবে (ফিজিক্যালি) গিয়ে চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে, টেলিমেডিসিনের পরামর্শ নয়, যেন চিকিৎসক অক্সিজেন সেচুরেশনও দেখতে দেখতে পারেন। অধ্যাপক ডা. রুবিনা ইয়াসমিন বলেন, মাইল্ড কেস অর্থাৎ খুবই অল্প লক্ষণ, তরুণ, কোনও রিস্ক ফ্যাক্টর নেই তারাই কেবল ঘরে থেকে চিকিৎসা নেবেন। কিন্তু যারা মডারেট অর্থাৎ যাদের ফুসফুস ক্ষতিগ্রস্ত হয়, যাদের বয়স ৫০ এর ওপরে, যার উচ্চ রক্তচাপ, ডায়াবেটিস, জ্বর কমছে না তাদেরকে সিভিয়ারের দিকে চলে যেতে পারে ধরে নিয়ে দ্রুত হাসপাতালে যেতে হবে, তাদেরকেই হাসপাতালে আসতে হবে। আর যার অক্সিজেন সেচুরেশন কমে যাচ্ছে তাকে অবশ্যই ‘ইমিডিয়েটলি’ হাসপাতালে ভর্তি হতে হবে।