সবার আগে একটি গণতান্ত্রিক সরকার প্রতিষ্ঠা করার দিকে মনোযোগ দিতে হবে : মির্জা ফখরুল

0

লোকসমাজ ডেস্ক॥ সরকারের সার্বিক অব্যবস্থাপনার কারণেই রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধানে কূটনৈতিক স্থবিরতার সৃষ্টি হয়েছে দাবি করে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, এজন্য সবার আগে একটি গণতান্ত্রিক সরকার প্রতিষ্ঠা করার দিকে আমাদের মনোযোগ দিতে হবে। তাহলেই রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধানের জন্য নির্বাচিত সরকার আন্তর্জাতিকভাবে কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারবে। সোমবার দুপুরে গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন।
মির্জা ফখরুল বলেন, রোহিঙ্গা ইস্যুতে শুরু থেকেই জনবিচ্ছিন্ন এই অনির্বাচিত সরকার চরম ব্যর্থতার পরিচয় দিয়ে আসছে। ১২ লাখের বেশি রোহিঙ্গা তাদের মাতৃভূমি রাখাইনে প্রত্যাবাসনে মিয়ানমারের ওপর কার্যকর চাপ সৃষ্টি করতে চরমভাবে ব্যর্থ হয়েছে। এ পর্যন্ত একজন রোহিঙ্গা শরণার্থীকেও সরকার রাখাইনে ফেরত পাঠাতে পারেনি। রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে সরকারের আন্তরিকতা ও সদিচ্ছাও তারা প্রমাণ করতে পারেনি। দীর্ঘদিনের এই সমস্যাকে কার্যকরভাবে আন্তর্জাতিকীকরণ করতে না পারা নিঃসন্দেহে সরকারের চরম ব্যর্থতা। ফলে প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। এহেন মুহূর্তে জাতিসঙ্ঘ ও আন্তর্জাতিক সাহায্য সংস্থা ও পশ্চিমা বৃহৎ শক্তিগুলোর ‘না’ উপেক্ষা করে বঙ্গোপসাগরের মুখে নুতন সৃষ্ট ভাসানচর দ্বীপে রোহিঙ্গাদের একাংশকে স্থানান্তরের ফলে রোহিঙ্গা শরণার্থীদের সম্মান ও নিরাপত্তার সাথে স্বদেশ প্রত্যাবর্তনের দাবি দুর্বল হয়ে পড়েছে। তিনি বলেন, সম্প্রতি বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত সংবাদে আমরা অবগত হয়েছি যে গত ৩ ডিসেম্বর রোহিঙ্গা শরণার্থীদের মধ্যে থেকে ১,৬৪২ জনের একটি দলকে কক্সবাজার থেকে নতুন প্রতিষ্ঠিত ভাসানচরে স্থানান্তর করা হয়েছে। ২০১৭ সালের আগস্টে মিয়ানমার সেনাবাহিনীর গণহত্যা ও নিপীড়নের মুখে দেশটি থেকে কয়েক লাখ রোহিঙ্গা প্রাণের ভয়ে বাংলাদেশে পালিয়ে আসে। একই বছরের নভেম্বরে কক্সবাজার থেকে এক লাখ রোহিঙ্গাকে ভাসানচরে সরিয়ে নেয়ার লক্ষ্যে একটি প্রকল্প হাতে নেয় সরকার। তখন থেকেই রোহিঙ্গারা ভাসানচরে যেতে তীব্র আপত্তি জানিয়ে আসছিল। তাছাড়া জাতিসঙ্ঘ, ইউরোপীয় ইউনিয়ন, হিউম্যান রাইটস ওয়াচ, অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালসহ আন্তর্জাতিক অর্থায়নে পরিচালিত উন্নয়ন সংস্থাগুলো এর বিরোধিতা করে আসছে। জাতিসঙ্ঘসহ অন্যান্য আন্তর্জাতিক সংস্থার আপত্তি উপেক্ষা করে সরকার এ স্থানান্তর কার্যক্রম শুরু করায় নতুন সঙ্কট সৃষ্টির আশঙ্কা তৈরি হয়েছে। তিনি বলেন, রোহিঙ্গা শরণার্থী সমস্যা বাংলাদেশের একক সমস্যা নয়। এ সমস্যা একটি বৈশ্বিক সমস্যা। জাতিসঙ্ঘসহ অন্যান্য আন্তর্জাতিক সংস্থার এ সঙ্কট নিরসনে সমান দায়িত্ব রয়েছে। সবার সাথে সমন্বয় না করে সম্পূর্ণ এককভাবে বাংলাদেশ ভাসানচরে রোহিঙ্গাদের স্থানান্তর কার্যক্রম শুরু করে সঙ্কট সমাধানে আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোকে নাখোশ করেছে। এটি রোহিঙ্গা শরণার্থী সমাধানে বাংলাদেশের কূটনৈতিক ব্যর্থতার একটি নূতন সংযোজন।
বিএনপি মহাসচিব বলেন, ভাসানচর প্রকল্পটি মূলত সরকারের আশ্রয়ন প্রকল্প-৩-এর একটি বর্ধিত প্রকল্প। এই প্রকল্পটি বর্তমান আকণ্ঠ দুর্নীতিতে নিমজ্জিত সরকারের দুর্নীতিগ্রস্ত একটি মেগা প্রজেক্ট। ভাসানচরে রোহিঙ্গাদের স্থানান্তরের জন্য প্রকল্পটিতে প্রাথমিকভাবে ২ হাজার ৩১২ কোটি টাকা বরাদ্দ করা হয়। পরে অন্যান্য প্রজেক্টের মতো প্রকল্প ব্যয় বৃদ্ধি করে তা ৩ হাজার ৯৫ কোটি টাকা করা হয়। যথাযথ টেন্ডার প্রক্রিয়া অনুসরণ না করেই এসব প্রকল্পে দীর্ঘমেয়াদে হাজার হাজার কোটি টাকা লুটপাটের সুযোগ রয়েছে। হতাশার কথা হলো, এই প্রকল্প তথা সরকারের সুদূরপ্রসারী দুর্নীতির পক্ষে সাফাই গাইতে কিছু দলকানা সাংবাদিক দিয়ে ভাসানচরের আশ্রয় শিবিরের পক্ষে নানা ধরনের প্রচার প্রপাগান্ডা চালানো হচ্ছে। ভাবখানা এমন, রোহিঙ্গাদের ভাসানচরে প্রেরণ করাই যেন সঙ্কট সমাধানে সরকারের প্রধান লক্ষ্য। এটাই যেন প্রত্যাবাসন। ভাসানচরে শরণার্থী স্থানান্তরে সরকারের পক্ষে সাফাই না গেয়ে মিয়ানমারে নিরাপদ ও স্থায়ী রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের পক্ষে তাদের সরব অবস্থান ব্যক্ত করলে রোহিঙ্গা সঙ্কট সমাধান ত্বরান্বিত হতে পারে বলে আমরা মনে করি।