ক্লিনিকে ভুল অপারেশনের খেসারত : ২ লাখ টাকা ব্যয় করেও সুস্থ হয়নি প্রসূতি

0

স্টাফ রিপোর্টার ॥ ঝিনাইদহের কালীগঞ্জ উপজেলার বারোবাজার বেসরকারি ন্যাশনাল প্রাইভেট হাসপাতালে মুক্ত খাতুন (২১) নামে এক প্রসূতি ভুল অপারেশনের শিকার হয়েছেন। বর্তমানে তিনি যশোর শহরের মডার্ন হসপিটালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। দেড় মাসের ব্যবধানে তার দু’লাখ টাকা খরচ হয়ে গেছে। কোন পরীক্ষা-নিরীক্ষা না করে অর্থের লোভে তড়িঘড়ি করে রোগীকে সিজার করার ফলে এ সমস্যার সৃষ্টি হয়েছে। মুক্তা খাতুন কালীগঞ্জের বাদেডিহি গ্রামের সাদ্দাম হোসেনের স্ত্রী।
সাদ্দাম হোসেন জানিয়েছেন, গত ৩০ অক্টোবর তার স্ত্রী মুক্তা খাতুনের প্রসব বেদনা ওঠে। রাত ১১টার দিকে তাকে বারোবাজার দিঘিরপাড়াস্থ ন্যাশনাল প্রাইভেট হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। এসময় হাসপাতালে কোন চিকিৎসক ছিলেন না। তখন হাসপাতালের মালিক সুলতান মাহমুদ অপু তড়িঘড়ি করে নাজনীন নাহার নামে এক চিকিৎসককে ডেকে আনেন। ডাঃ নাজনীন নাহার গাইনি বিশেষজ্ঞ নন। তিনি কিনিকে কিনিকে রোগীর আল্ট্রাসনো করেন। সাদ্দাম হোসেন জানিয়েছেন, ডাঃ নাজনীন নাহার একই হাসপাতালে এসেই কোন পরীক্ষা-নিরীক্ষা ছাড়াই মুক্তা খাতুনকে সিজার করেন। এ সময় মুক্ত খাতুন একটি পুত্র সন্তান লাভ করেন। সিজার করার পর ওই চিকিৎসক রোগী নিয়ন্ত্রণে আনতে না পেরে জরায়ুর সাথে পেটের নাড়ী সেলাই করে ছেড়ে দেন। এর একদিন পর রোগীর পেটে প্রচন্ড ব্যথা শুরু হয়। পরে হাসপাতাল ও চিকিৎসক মিলে অপারেশন বাবদ ১০ হাজার টাকা নিয়ে রোগীর ছাড়পত্র দেন। এরপর দ্বিতীয়বার তাকে একই হাসপাতালে ভর্তি করে চিকিৎসা দেয়া হয়। এতে রোগীর অপারেশন খরচের চেয়ে দ্বিগুণ টাকা খরচ হয়। তারপরও অবস্থার কোন উন্নতি না হওয়ায় মুক্তা খাতুনকে ভর্তি করা হয় যশোর শহরের ঘোপ সেন্ট্রাল রোডস্থ সিটি হসপিটালে। যেখানে চিকিৎসায় তার কোন উন্নতি হয়নি। চিকিৎসাসহ অন্যান্য খরচ মিলে সিটি হসপিটালে রোগীর ব্যয় হয় ১ লাখ টাকা।
সাদ্দাম হোসেন তার স্ত্রীকে বাঁচানোর জন্য মারিয়া হয়ে ওঠেন। টাকা খরচ করার পরও সুস্থ না হওয়ায় সিটি হসপিটাল হতে রোগী নিয়ে চলে আসেন। ২৬ নভেম্বর ভর্তি করেন শহরের ঘোপ নওয়াপাড়া রোডস্থ মডার্ন হসপিটালে। সেখানে আদ্ব-দীন সকিনা উইমেন্স মেডিকেল কলেজের সার্জারি বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ডাঃ এসএম আবু আহসান লাল্টু প্রসূতি মুক্তা খাতুনকে চিকিৎসা দিচ্ছেন। বিশেষজ্ঞ তার চিকিৎসায় মুক্ত খাতুন অনেকটা সুস্থ হয়ে উঠেছেন। সেখানেও প্রায় ২০ দিনের চিকিৎসায় তার ১লাখ টাকা খরচ হয়েছে। সর্বমোট ২ লাখ টাকা খরচ হলেও প্রসূতি মুক্তা খাতুন এখনো পূর্ণ সুস্থ হতে পারেননি। তাকে আরো কিছুদিন হাসপাতালে থাকতে হবে। তিনি নিজের সুস্থতার জন্য সকলের কাছে দোয়া প্রার্থনা করেছেন। তাদের অভিযোগ, চিকিৎসক ভুল অপারেশন করায় একটি সিজারের জন্য তার দু’লাখ টাকা খরচ হয়ে গেছে। এ ব্যাপারে ন্যাশনাল প্রাইভেট হাসপাতালের মালিক সুলতান মাহমুদ অপুর সাথে যোগাযোগ করা হলেও তিনি সন্তোষজনক কোন জবাব দেননি। এমনকি ডাঃ নাজনীন নাহারের সাথে যোগাযোগ করতে চাইলে তিনি তার মোবাইল নম্বর দেননি।