“ষড়যন্ত্র বন্ধ না হলে মানুষ রাস্তায় নামতে বাধ্য হবে”

0

লোকসমাজ ডেস্ক॥ দেশের শীর্ষ আলেম-ওলামা ও ধর্মপ্রাণ মানুষকে নিয়ে ষড়যন্ত্র শুরু হয়েছে দাবি করে হেফাজতে ইসলাম বলেছে, এই ষড়যন্ত্র বন্ধ না হলে ধর্মপ্রাণ মানুষ রাস্তায় নামতে বাধ্য হবে। দেশের শান্তি ও স্থিতি ধরে রাখতে ষড়যন্ত্রকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার জন্য সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে সংগঠনটি। ভাস্কর্য ইস্যুতে চলমান পরিস্থিতিতে হেফাজতের বক্তব্য তুলে ধরতে গতকাল দুপুরে ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির সাগর-রুনি মিলনায়তনে সংবাদ সম্মেলনে এই আহ্বান জানানো হয়। সংগঠনের মহাসচিব আল্লামা নূর হোসাইন কাসেমীর পক্ষে নায়েবে আমীর মাওলানা নুরুল ইসলাম লিখিত বক্তব্য পড়ে শোনান।
তিনি বলেন, ইসলামবিদ্বেষী চিহ্নিত মহল মরহুম শায়খুল হাদিস আল্লামা আজিজুল হক ও মরহুম সৈয়দ ফজলুল করিম পীর সাহেব চরমোনাইসহ দেশের শীর্ষ ওলামায়ে কেরামের বিরুদ্ধে মিথ্যা ও জঘন্য কটূক্তি করছে এবং ঘৃণা ছড়াচ্ছে। তারা লাগামহীনভাবে অভদ্র ও অশোভন বক্তব্য দিয়ে বিষোদ্গার করছে। এতে দেশের শান্তি-শৃঙ্খলা অবনতির আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। ইসলামবিদ্বেষীদের নিয়ন্ত্রণ করতে না পারলে বাংলাদেশের ধর্মপ্রাণ মানুষ এই কুচক্রী মহলকে রুখে দিতে রাস্তায় নামতে বাধ্য হবে। তিনি বলেন, শান্তির ধর্ম ইসলামের বিস্তার, মানুষের নৈতিক উৎকর্ষতা বৃদ্ধি ও ঈমান-আমলের উন্নতি সাধনে আবহমানকাল থেকে শীতের মৌসুমে দেশের সর্বত্র অনুষ্ঠিত ওয়াজ মাহফিলের ভূমিকা সর্বজনবিদিত। এই সময়ে কওমি মাদ্রাসাগুলো তাদের বার্ষিক মাহফিল অনুষ্ঠান করে থাকে। মানুষকে হেদায়াতের পথে চলার আহ্বান ও সৎ সুন্দর শৃঙ্খলাপূর্ণ জীবন যাপনে উদ্বুদ্ধকরণে উলামায়ে কেরাম তাদের ধর্মীয় কর্তব্য পালন করে থাকে। অথচ নানা অজুহাতে এই সকল আয়োজনের বাধা দেয়া হচ্ছে। আজকের এই সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে নির্বিঘ্নে ওয়াজ মাহফিল আয়োজনের পথে ইসলামবিদ্বেষী প্রশাসনিক বাধা বিপত্তিসমূহ তুলে নিতে সরকারের প্রতি জোর দাবি জানাচ্ছি।
মাওলানা নুরুল ইসলাম বলেন, পদ্মা সেতু ও এর সংযোগ সড়কের গোড়ায় রাজধানীর ধোলাইপাড়ে নির্মিতব্য ভাস্কর্য দেশের সর্বত্র ব্যাপক বিতর্ক তৈরি করেছে। এর পরিপ্রেক্ষিতে শীর্ষ উলামায়ে কেরামের পক্ষ থেকে যেকোনো প্রাণীর ভাস্কর্য নির্মাণের বিষয়টি ইসলাম সম্মত নয় বলে সর্বসম্মত ফতোয়া প্রদান করা হয়। যা একটি পত্র দিয়ে প্রধানমন্ত্রীকে অবহিত করা হয়েছে। সেখানে বাংলাদেশের ধর্মপ্রাণ জনতা এবং আলেম সমাজের সর্ববৃহৎ ধর্মীয় সংগঠন হেফাজতে ইসলাম ভাস্কর্য নির্মাণ বিষয়ে সরকারকে ইসলামের আকিদা, ঈমান ও শিক্ষার বিরুদ্ধে গিয়ে পুত্তলিকতা প্রসারের রাষ্ট্রীয় গোমরাহির পথ পরিহার করার আহ্বান জানিয়েছে। এই সময়ে দেশ বরেণ্য আলেমদের শান্তিপূর্ণ ও যৌক্তিক উপদেশ এবং দাবিকে বিতর্কিত করার জন্য কুষ্টিয়ায় কে বা কারা বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য ভাঙার মাধ্যমে একটি ষড়যন্ত্রের জাল বিস্তার করেছে। ভাস্কর্য ভাঙার দায় হেফাজতে ইসলামের ওপর ‘চাপিয়ে’ সংগঠনটিকে ‘ঘায়েল করার’ চেষ্টা করছে। তিনি বলেন, হেফাজতে ইসলাম এভাবে নিজ হাতে আইন তুলে নেয়া বা গোপন তৎপরতার পথ অনুসরণ ও অনুমোদন করে না। তিনি বলেন, সামপ্রতিক হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের আমীর ও দেশের স্থানীয় আলেমেদ্বীন হাটহাজারী মাদ্রাসার সম্মানিত শায়খুল হাদিস আল্লামা জুনায়েদ বাবুনগরী, হেফাজতে ইসলামের যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা মামুনুল হক এবং ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ-এর নায়েবে আমীর মাওলানা সৈয়দ ফয়জুল করিমের বিরুদ্ধে মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চ ও জননেত্রী পরিষদ নামক দুটি সংগঠনের পক্ষ থেকে আদালতে রাষ্ট্রদ্রোহ ও মানহানির মিথ্যা মামলা দায়ের করা হয়েছে। এ রাষ্ট্রদ্রোহের মামলার আর্জিতে মদিনা সনদের প্রসঙ্গ উল্লেখ করা হয়েছে, যা এক ভয়াবহ ও সুদূরপ্রসারি চক্রান্তের সুস্পষ্ট আলামত। এটা শুধু হেফাজতে ইসলাম নয়, বরং এটা সরাসরি প্রধানমন্ত্রী ও বাংলাদেশ রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে গভীর চক্রান্ত বলে আমরা মনে করছি। কুষ্টিয়ায় বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য ভাঙার ঘটনার সিসি টিভি ভিডিও এবং তার ভিত্তিতে দুই মাদ্রাসা ছাত্রকে গ্রেপ্তার নিয়েও প্রশ্ন তুলে হেফাজতের নায়েবে আমীর নুরুল ইসলাম বলেন, কুষ্টিয়ার ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত আমরা চাই। তবে সিসি টিভি ফুটেজে দেখা যায় চিকন দুজন মানুষ উঠেছে, কিন্তু ধরে আনলো মোটা মোটা দাড়িওয়ালা দু’জন। রাতারাতি তারা মোটা ও দাড়িওয়ালা হলেন কীভাবে? এ ছাড়া, সিসি টিভি ফুটেজের দু’জনকে উঠতে দেখা গেলেও নামতে দেখা যায়নি। সুতরাং সেখানে তদন্ত কীভাবে হচ্ছে তা নিয়ে আমাদের প্রশ্ন রয়েছে। উদ্ভূত এমন পরিস্থিতিতে দেশের উন্নয়ন-অগ্রগতি অব্যাহত রাখার লক্ষ্যে সরকারের সঙ্গে আলাপ-আলোচনার চেষ্টা চলছে বলেও সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়। সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন, হেফাজতে ইসলামের উপদেষ্টা মাওলানা আবুল কালাম, আব্দুল হামিদ, আব্দুল আউয়াল, মাহফুজুল হক, যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা জুনায়েদ আল হাবীব, মাওলানা মামুনুল হক, সহকারী মহাসচিব মাওলানা ফজলুল করীম কাসেমী, মঞ্জুরুল ইসলাম আফেন্দী, শফিক উদ্দিন, মূসা বিন ইজহার প্রমুখ।