বৈষম্য, ১৪ ভাগ ধনীর কব্জায় ৫৩ ভাগ ভ্যাকসিন

0

লোকসমাজ ডেস্ক॥ কার্যকর বলে প্রমাণিত ভ্যাকসিনগুলোর ৫৩ শতাংশই এরইমধ্যে ধনী দেশগুলো কিনে ফেলেছে। অথচ বিশ্বের মাত্র ১৪ শতাংশ মানুষ ধনী দেশগুলোতে থাকেন। ফলে দরিদ্র দেশগুলো করোনাভাইরাসের ভ্যাকসিন পাওয়া থেকে বঞ্চিত হবে- এমন আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। ভ্যাকসিনের মজুত গড়তে ধনী দেশগুলোর এমন প্রতিযোগিতা নিয়ে উদ্বেগ জানিয়েছে করোনা ভ্যাকসিনের প্রচারণা বিষয়ক জোট পিপল’স ভ্যাকসিন অ্যালায়েন্স। এ খবর দিয়েছে বিবিসি।
খবরে বলা হয়, বৃটেনে আনুষ্ঠানিকভাবে ফাইজারের তৈরি প্রথম করোনার ভ্যাকসিন প্রদানের মাধ্যমে করোনা ভ্যাকসিনের যুগে পা রেখেছে বিশ্ব। তবে পিপল’স ভ্যাকসিন অ্যালায়েন্স বলছে, করোনার এই ভ্যাকসিনের মজুত গড়ে তুলতে প্রতিযোগিতায় নেমেছে বিশ্বের ধনী রাষ্ট্রগুলো। এরফলে বিশ্বের ৮৬ ভাগ মানুষ যারা অপেক্ষাকৃত দরিদ্র বা অনুন্নত দেশগুলোতে বাস করে তাদের এই ভ্যাকসিন প্রাপ্তি অনেকটা অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। পিপল’স ভ্যাকসিন অ্যালায়েন্সের আশঙ্কা, নিম্ন-আয়ের দেশগুলোর মধ্যে প্রায় ৭০টি দেশের প্রতি ১০ জন মানুষের মধ্যে একজন করে এই ভ্যাকসিন পেতে পারেন।
যেখানে ধনী দেশগুলো তাদের প্রয়োজনে অধিক ভ্যাকসিনের মজুত গড়ে তোলার চেষ্টা চালাচ্ছে।
যদিও এক্ষেত্রে ভ্যাকসিন উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকা তার উৎপাদিত ৬৪ শতাংশ টিকা উন্নয়নশীল দেশগুলোতে সরবরাহ করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। বিশ্বজুড়ে এই ভ্যাকসিন পৌঁছে দেয়ার জন্য পদক্ষেপ নেয়া হচ্ছে। ভ্যাকসিন কমিটমেন্ট হিসেবে পরিচিত কোভ্যাক্স এরইমধ্যে ৯২টি নিম্ন আয়ের দেশের জন্য ৭০ কোটি ডোজ ভ্যাকসিন বিতরণের ব্যবস্থা নিশ্চিত করেছে। তবে যেসব দেশ এই উদ্যোগে স্বাক্ষর করেছে তাদেরকে দেয়া হবে এই ভ্যাকসিন।
এই পরিকল্পনাটি সামনে থাকলেও, অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল, অক্সফাম এবং গ্লোবাল জাস্টিস নাউ-এর মতো সংগঠনগুলো বলছে, যে ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে তা যথেষ্ট নয়। ভ্যাকসিন প্রস্তুতকারক প্রতিষ্ঠানগুলোর উচিত, অন্যরা যাতে চাহিদা অনুযায়ী আরো বেশি ভ্যাকসিন উৎপাদন করতে পারে সেজন্য তাদের সঙ্গে প্রযুক্তি শেয়ার করা। ওইসব সংগঠনের বিশ্লেষণে দেখা গেছে যে, ধনী দেশগুলো এরই মধ্যে তাদের জনসংখ্যার বিপরীতে এতো বেশি ভ্যাকসিনের ডোজ কিনে নিয়েছে, যা দিয়ে পুরো জনগোষ্ঠীকে তিনবার ভ্যাকসিন দেয়া যায়। অবশ্য যদি তাদের কেনা সব ভ্যাকসিনকে ব্যবহারের অনুমোদন দেয়া হয়। উদাহরণ হিসেবে, কানাডার কথা উল্লেখ করা হয়। বলা হয়, কানাডা এতো বেশি ভ্যাকসিন কিনেছে যে, তা দিয়ে তাদের প্রতিজন নাগরিককে ৫ বার করে ভ্যাকসিন দেয়া যাবে।
অক্সফামের স্বাস্থ্য বিষয়ক ব্যবস্থাপক অ্যানা ম্যারিয়েট বলেন, ধনী দেশগুলোর কাছে বেশি পরিমাণে টাকা থাকা মানে এটা নয় যে, তারা অন্য কাউকে এই জীবন রক্ষাকারী ভ্যাকসিন পেতে বাধা সৃষ্টি করবে। মানুষ কোন দেশে বাস করছেন সেটা দেখার বিষয় নয়। এটা বিবেচনা করে কাউকে জীবন রক্ষাকারী ভ্যাকসিন থেকে বঞ্চিত রাখা ঠিক হবে না। কিন্তু দ্রুত নাটকীয়তার সঙ্গে পরিবর্তন না এলে সামনের বছরগুলোতে বিশ্বের কয়েক শত কোটি মানুষ নিরাপদ এবং কার্যকর করোনার ভ্যাকসিন পাবে না। করোনার ভ্যাকসিন তৈরি নিয়ে যেসব ওষুধ প্রস্তুতকারক কোম্পানি কাজ করছে তাদের প্রতি পিপল’স ভ্যাকসিন অ্যালায়েন্স তাদের প্রযুক্তি এবং ইন্টেলেকচুয়াল প্রপার্টি মুক্তভাবে শেয়ার করার আহ্বান জানিয়েছে। এর ফলে বিভিন্ন দেশে শত শত কোটি ডোজ করোনার ভ্যাকসিন উৎপাদন করা সহজ হবে এবং প্রয়োজন অনুযায়ী তাতে সবাই ভ্যাকসিন পাবেন। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার কোভিড-১৯ প্রযুক্তি ব্যবহার করে এটা করা যেতে পারে বলে তারা মনে করেন।