যশোর জেল রোডে সাগর হত্যাকাণ্ড : বন্ধু নয়ন আটক, মা তুলে গালি দেওয়ায় ডেকে নিয়ে খুন

0

স্টাফ রিপোর্টার ॥ ‘মা তুলে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করায়’ ক্ষুব্ধ হয়ে মেহেদী হাসান সাগরকে হত্যা করেন তারই বন্ধু আল-আমিন ইসলাম ওরফে নয়ন। গাঁজা সেবন করানোর প্রলোভন দেখিয়ে পরিকল্পিতভাবে বাড়ি থেকে ডেকে নিয়ে তাকে হত্যা করা হয়। যশোরের বিরামপুরের সাগর হত্যা মামলার আসামি নয়নকে আটকের পর জিজ্ঞাসাবাদে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনকে (পিবিআই) এমনই তথ্য জানিয়েছেন তিনি। গত মঙ্গলবার বিকেলে শহরের পূর্ব বারান্দীপাড়ায় থেকে নয়নকে আটক ও হত্যাকান্ডে ব্যবহৃত বার্মিজ চাকু উদ্ধার করেন পিবিআই কর্মকর্তারা। গতকল বুধবার আটক নয়নকে আদালতে সোপর্দ করা হলে তিনি ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন। জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের বিচারক মো. সাইফুদ্দীন হোসাইন তার জবানবন্দি গ্রহণ শেষে তাকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দিয়েছেন।
মামলার তদন্ত কর্মকর্তা পিবিআই যশোর জেলা ইউনিটের এসআই দ্বৈপায়ন মন্ডল জানান, সাগর হত্যাকান্ডে অভিযুক্ত নয়নকে গত মঙ্গলবার বিকেলে পূর্ব বারান্দীপাড়ার খেঁজুরবাগান এলাকায় তার খালাতো বোনের ভাড়াবাড়ি থেকে তারা আটক করেন। পিবিআই পুলিশ সুপার রেশমা শারমিনের নেতৃত্বে অভিযান চালিয়ে তাকে আটক করা হয়। পরে সন্ধ্যায় নয়নের স্বীকারোক্তিতে খালাতো বোনের বাসার পাশের একটি স্থান থেকে হত্যাকান্ডে ব্যবহৃত একটি বার্মিজ চাকু উদ্ধার করেন তারা। জিজ্ঞাসাবাদে নয়ন পিবিআইকে জানিয়েছেন, সাগর তার ঘনিষ্ঠ বন্ধু। দুজনেই মাদকসেবন করে থাকেন। গত সোমবার রাত সোয়া ১০টার দিকে তিনি বিরামপুর ফকিরার মোড়ে সাগরের পিতার দোকান থেকে বিস্কুট কেনার পর পাশে দাঁড়িয়ে খাচ্ছিলেন। এ সময় সাগর এসে তার কাছ থেকে বিস্কুট কেড়ে নিয়ে খান। এ নিয়ে দুজনের মধ্যে কথা কাটাকাটি হয়। এক পর্যায়ে সাগর তাকে (নয়ন) ‘মা তুলে’ অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করেন। তবে এ নিয়ে পরিবেশ আরও উত্তপ্ত হয়ে পড়লে উপস্থিত স্থানীয় লোকজনের তাৎক্ষণিক হস্তক্ষেপে বিষয়টি মীমাংসা হয়। কিন্তু তাকে ‘মা তুলে’ গালি দেওয়ায় তার মধ্যে প্রচন্ড ক্ষোভের সৃষ্টি হয়। তিনি সাগরকে হত্যার পরিকল্পনা করেন। এ কারণে গাঁজা সেবন করানোর প্রলোভন দেখিয়ে পরে রাতে সাগরকে বাড়ি থেকে ডেকে নিয়ে আসেন। রাতে বিভিন্ন স্থানে ঘোরাঘুরির পর যশোর ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতাল এলাকার রোদেলে ফার্মেসিতে এসে বসেন এবং রাত সাড়ে ৩টা পর্যন্ত সেখানে তারা ধুমপান করেন। এরপর রাত ৪ টার দিকে গাঁজা সেবন করার কথা বলে তিনি সাগরকে ডেকে ঘটনাস্থলে (ঘোপ জেল রোডে ট্রাফিক অফিসের পাশ ও পৌর কাউন্সিলর মোকছিমুল বারী অপুর বাড়ির মাঝামাঝি স্থানে) নিয়ে যান। এ সময় কোনোকিছু বুঝে ওঠার আগেই তিনি লুকিয়ে আনা চাকু দিয়ে সাগরের বুকের বিভিন্ন স্থানে একাধিক আঘাত করলে তার বন্ধু লুটিয়ে পড়েন। মৃত্যু নিশ্চিত হওয়ার পর ওই রাতেই পূর্ব বারান্দীপাড়ায় তার এক বোনের বাসায় যান। রক্ত লেগে থাকায় পথে ড্রেনের পানিতে হাত ধুয়ে নেন। তবে বোনের বাসায় ঢোকার আগে পাশের একটি নোংরা স্থানে (জনৈক মনির হোসেনের পরিত্যক্ত খামারের গোবর ফেলার স্থান) চাকুটি ফেলে দেন নয়ন। তদন্ত কর্মকর্তা জানান, আটক নয়নকে তারা বুধবার আদালতে সোপর্দ করেন। এ সময় আসামি আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন। উল্লেখ্য, আটক নয়ন বিরামপুর পশ্চিমপাড়া ফকিরার মোড় এলাকার সেলিমের ছেলে। গত সোমবার রাত ১১টার দিকে তিনি তার বন্ধু একই এলাকার মুদি ব্যবসায়ী শেখ হানিফের ছেলে সাগরকে বাড়ি থেকে ডেকে নিয়ে যান। পরদিন মঙ্গলবার সকালে ঘোপ জেল রোডের ঘটনাস্থলে সাগরের লাশ পাওয়া যায়। এ ঘটনায় নিহতের পিতা শেখ হানিফ ওইদিন রাতে কোতয়ালি থানায় মামলা করেন।