যশোরে বাড়ি থেকে বন্ধু ডেকে নিয়ে যাওয়ার পর যুবক খুন

0

স্টাফ রিপোর্টার॥ যশোরে বাড়ি থেকে বন্ধু ডেকে নিয়ে যাওয়ার পরদিন মেহেদী হাসান সাগর (২০) নামে এক যুবকের মরদেহ উদ্ধার হয়েছে। গতকাল মঙ্গলবার সকালে শহরের ঘোপ জেল রোডে ট্রাফিক অফিসের পূর্ব পাশ ও পৌর কাউন্সিলর মোকছিমুল বারী অপুর বাড়ির মাঝামাঝি স্থান থেকে তার লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। পরিবারের অভিযোগ, পূর্ব শত্রুতার জের ধরে বন্ধু নয়নের নেতৃত্বে কয়েকজন তাকে হত্যা করেছে। তবে কী কারণে তাকে হত্যা করা হয়েছে তা এখনো নিশ্চিত হতে পারেনি পুলিশ। নিহত মেহেদী হাসান সাগর শহরতলীর বিরামপুর পশ্চিমপাড়া ফকিরার মোড় মসজিদ এলাকার মুদি ব্যবসায়ী হানিফ শেখের ছেলে। নিহতের মা সালেহা বেগম জানান, গত সোমবার রাত ১১ টার দিকে সাগরের বন্ধু একই এলাকার সেলিমের ছেলে নয়ন তার ছেলেকে বাড়ি থেকে ডেকে নিয়ে যায়। এরপর তার ছেলে আর বাড়ি ফিরে আসেনি। পরদিন মঙ্গলবার সকালে লোকমুখে খবর পান ঘোপে পৌর কাউন্সিলর মোকছিমুল অপুর বাড়ির পাশের গলি থেকে তার ছেলের লাশ উদ্ধার করেছে পুলিশ। পরে হাসপাতাল মর্গে গিয়ে তারা ছেলের লাশ শনাক্ত করেন।


উপশহর পুলিশ ক্যাম্পের ইনচার্জ এসআই সাইফুল মালেক জানান, স্থানীয় লোকজনের কাছ থেকে খবর পেয়ে তারা মঙ্গলবার সকাল সোয়া সাতটার দিকে ঘোপ জেল রোডের বাসিন্দা পৌর কাউন্সিলর মোকছিমুল বারী অপুর বাড়ির পশ্চিম পাশের রাস্তা থেকে অজ্ঞাত পরিচয় এক যুবকের লাশ উদ্ধার করেন। নিহতের বুকে ও পেটের বিভিন্ন স্থানে ধারালো অস্ত্র দিয়ে কোপানোর একাধিক চিহ্ন রয়েছে। পরে যশোর ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালে এসে লাশটি মেহেদী হাসান সাগরের বলে শনাক্ত করেন তার মা সালেহা বেগম ও পিতা হানিফ শেখ। তিনি আরও জানান, কী কারণে যুবককে হত্যা করা হয়েছে তা তারা এখনো জানতে পারেননি। পৌর কাউন্সিল মোকছিমুল বারী অপু জানান, গত সোমবার রাতের কোনো একসময় ওই যুবককে দুর্বৃত্তরা অন্য কোথাও হত্যার পর লাশটি তার শোবার ঘর সংলগ্ন রাস্তায় ফেলে গেছে। কারণ, প্রতিদিন রাত আড়াইটা পর্যন্ত তিনি জেগে থাকেন। তার ঘরের পাশে রাস্তায় হত্যা করা হলে তিনি নিশ্চয় ধস্তাধস্তির শব্দ শুনতে পেতেন। তাছাড়া যেখানে যুবকের লাশ পাওয়া যায় সেখানে রক্ত পাওয়া যায়নি। তিনি আরও জানান, তার বাড়ির বিপরীতে জাহিদ নামে এক চা দোকানি প্রথমে সকালে লাশটি দেখতে পান। পরে জাহিদ তাকে জানালে তিনি পুলিশকে খবর দেন। মেহেদী হাসান সাগরের মা সালেহা বেগম জানান, নয়নের সাথে একটি মেয়ের সম্পর্ক রয়েছে। কিছুদিন আগে তার ছেলে মোবাইল ফোনে মেয়েটির সাথে কথা বলেছিলো। এ খবর পেয়ে নয়ন এসে সাগরকে হুমকি দেয়। তার ধারণা, এ সংক্রান্ত পূর্ব আক্রোশে তার ছেলেকে বাড়ি থেকে ডেকে নিয়ে হত্যা করা হয়েছে।
নিহতের পিতা শেখ হানিফ জানান, রাতে সাগর বাড়ি না ফেরায় মঙ্গলবার সকালে নয়নকে তিনি মোবাইল ফোন করে তার ছেলের খোঁজ জানতে চান। প্রথমে নয়ন তাকে বলে যে, রাতেই তার ছেলে বাড়ি ফিরে গেছে। এরপর আবারও তাকে ফোন করা হলে সে তার ছেলের কোনো খোঁজ জানে না বলে জানায়। শুধু তাই নয়, নয়নকে বারবার তিনি দেখা করতে বলেন। অথচ ‘এই আসছি’ এমন কথা একাধিকবার বললেও নয়ন তার সাথে দেখা করেনি। তিনি অভিযোগ করেন, নয়ন তার ছেলেকে হত্যা করেছে। এ ঘটনার সাথে আরো লোকজন জড়িত আছে। নয়নকে আটক করে জিজ্ঞাসাবাদ করলে হত্যার সবকিছু জানা যাবে। নিহতের স্বজনেরা জানান, নয়ন গত বছর এসএসসি পরীক্ষা দিয়ে অকৃতকার্য হয়। এ কারণে সে এবার ফের পরীক্ষা দিতে চেয়েছিলো। কিন্তু করোনার কারণে পড়াশোনা করতে না পেরে সে রাজমিস্ত্রির কাজসহ বিভিন্ন ছোটোখাটো কাজ করতো। স্থানীয় মহিলা মেম্বার তাসলিমা ইসলাম লিপা জানান, নয়ন মাদকসেবী। তার বন্ধুরাও মাদকসেবী। এসব কোনো ঝামেলা নিয়ে হয়তো হত্যার ঘটনা ঘটেছে। কোতয়ালি থানা পুলিশের ইনসপেক্টর (তদন্ত) শেখ তাসমীম আলম জানান, সাগরকে হয়তো অন্য কোথাও হত্যার পর লাশ ঘোপের ওই গলিতে ফেলে গেছে। তিনি বলেন, পরিবারের পক্ষ থেকে রাতে হত্যার বিষয়ে অভিযোগ দেওয়ার কথা রয়েছে।