কেনিয়ার কাছে বাজার হারানোর শঙ্কায় ভারত

0

লোকসমাজ ডেস্ক॥তুলনামূলক সস্তা দামে ভালো মানের পণ্য যে বাজারে পাওয়া যাবে, ক্রেতারা সেই বাজারের প্রতি ঝুঁকবেন, এটাই অর্থনীতির স্বাভাবিক রীতি। ফলে তুলনামূলক সস্তা দামে পণ্য বিক্রি করতে পারলে বেচাকেনা বাড়বে। অন্যথায় ক্রেতা হারাবে বাজার। তৈরি হবে তুমুল প্রতিযোগিতা। চায়ের (ব্ল্যাক টি) বৈশ্বিক রফতানি বাণিজ্যে এখন সেই প্রতিযোগিতা তৈরি হয়েছে। করোনা মহামারীর মধ্যে ভারতের বাজারে পানীয় পণ্যটির দাম কিছুটা বেশি রয়েছে। অন্যদিকে আফ্রিকার দেশ কেনিয়ায় পানীয় পণ্যটির দাম অনেক কমে গেছে। এ পরিস্থিতিতে অর্থনীতির রীতি মেনে ক্রেতারা চা আমদানিতে ভারতের তুলনায় কেনিয়াকে প্রাধান্য দিচ্ছে বেশি। ফলে কেনিয়ার কাছে বাজার হারানোর শঙ্কায় রয়েছেন ভারতীয় চা রফতানিকারকরা। খবর ইকোনমিক টাইমস।
চা উৎপাদনকারী ও রফতানিকারক দেশগুলোর বৈশ্বিক শীর্ষ তালিকায় ভারতের অবস্থান বিশ্বে দ্বিতীয়। পানীয় পণ্যটির শীর্ষ উৎপাদনকারীদের বৈশ্বিক তালিকায় তৃতীয় অবস্থানে রয়েছে কেনিয়া। অন্যদিকে কেনিয়া বিশ্বের চতুর্থ শীর্ষ চা রফতানিকারক দেশ। স্বাভাবিকভাবেই চায়ের বৈশ্বিক রফতানি বাণিজ্যে ভারত ও কেনিয়ার মধ্যে আগে থেকেই প্রতিযোগিতা ছিল। করোনা মহামারীর মধ্যে এ প্রতিযোগিতা আরো জোরালো হয়েছে।
উভয় দেশে চায়ের দামে তুলনামূলক বিশ্লেষণ করলে বিদ্যমান প্রতিযোগিতার মাহাত্ম্য ও ভারতের উদ্বেগের জায়গাটা স্পষ্ট হবে। টি বোর্ড অব ইন্ডিয়ার তথ্য অনুযায়ী, গত নভেম্বরে ভারতের বাজারে রফতানিযোগ্য সিটিসি (মিনিমাইজ, টিয়ার, কার্ল) গ্রেডের চায়ের গড় দাম দাঁড়িয়েছে কেজিপ্রতি ২১৫ রুপি (ভারতীয় মুদ্রা), যা আগের মাসের তুলনায় ১৩ শতাংশ। তবে এর আগের মাসে ভারতে পানীয় পণ্যটির গড় দাম ছিল কেজিপ্রতি ২৪৭ রুপি। করোনা মহামারীর মধ্যে টানা ঊর্ধ্বমুখী থাকার পর নভেম্বরে কমে এলেও তা পর্যাপ্ত নয় বলে মনে করছেন খাতসংশ্লিষ্টরা। তাদের মতে, এখনো ভারতের বাজারে চায়ের দাম বাড়তি রয়েছে।
অন্যদিকে কেনিয়ার বাজারে টানা ১১ সপ্তাহ ধরে প্রতি কেজি চায়ের গড় দাম ২ ডলারের নিচে রয়েছে। এ ধারাবাহিকতায় সর্বশেষ সপ্তাহে দেশটিতে পানীয় পণ্যটির গড় দাম দাঁড়িয়েছে কেজিপ্রতি ১ ডলার ৯০ সেন্টে, ভারতীয় মুদ্রায় যা ১৪১ দশমিক ৫৫ রুপি। এর আগের সপ্তাহে কেনিয়ায় প্রতি কেজি চায়ের গড় দাম ছিল ১ ডলার ৯২ সেন্ট।
অর্থাৎ ভারতের বাজারে যেখানে এক কেজি চা কিনতে ২১৫ রুপি ব্যয় করতে হচ্ছে, সেখানে কেনিয়ায় সাকল্যে ১৪১ রুপিতে প্রতি কেজি চা কেনা যাচ্ছে। মূলত এ কারণে আমদানিকারকরা ভারতের তুলনায় কেনিয়াকে চায়ের নির্ভরশীল বাজার বিবেচনা করতে শুরু করেছেন। কেননা তারা ভারতের তুলনায় কম দামে এবং প্রায় একই মানের চা কেনিয়া থেকে আমদানি করতে পারছেন। মানেও ছাড় দিতে হচ্ছে না। দামেও অর্থ সাশ্রয় হচ্ছে।
এর প্রভাব পড়েছে ভারতের চা রফতানিতে। দেশটির সরকারি তথ্য অনুযায়ী, ২০১৯ সালে ভারত থেকে আন্তর্জাতিক বাজারে সব মিলিয়ে ২৫ কোটি ২০ লাখ কেজি চা রফতানি হয়েছিল, যার বেশির ভাগই অথোর্ডক্স সিটিসি গ্রেডের। চলতি বছরের প্রথম আট মাসে (জানুয়ারি-আগস্ট) ভারত থেকে পানীয় পণ্যটির রফতানি দাঁড়িয়েছে ১৩ কোটি ২৫ লাখ কেজিতে, যা আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় ১৯ দশমিক ১১ শতাংশ কম। ২০১৯ সালের জানুয়ারি-আগস্ট সময়ে ভারত থেকে ১৬ কোটি ৩৮ লাখ ১০ হাজার কেজি চা রফতানি হয়েছিল।
ইন্ডিয়ান টি অ্যাফিলিয়েশনের (আইটিএ) সেক্রেটারি সুজিত পাত্র বলেন, ভারতের চা রফতানিতে মন্দা ভাবের পেছনে অন্যতম কারণ করোনা মহামারীর সময় উৎপাদন কমে গিয়ে পানীয় পণ্যটির দাম ক্রমশ বাড়তির পথে থাকা। এর ঠিক বিপরীত চিত্র দেখা গেছে কেনিয়ায়। দেশটিতে উৎপাদন স্বাভাবিক রয়েছে। চায়ের দামে বজায় রয়েছে টানা পতন। ভারতের তুলনায় কেনিয়ায় একই মানের চা কেজিপ্রতি প্রায় ৬৫ রুপি কমে বিক্রি হচ্ছে। ফলে আন্তর্জাতিক ক্রেতারা চা কেনার ক্ষেত্রে ভারতের তুলনায় কেনিয়াকে বেশি প্রাধান্য দিচ্ছেন। এ পরিস্থিতি ভারতীয় চা রফতানিকে ভয়াবহ চ্যালেঞ্জের মুখে ফেলেছে।