চীন-অস্ট্রেলিয়া বিরোধে গমের বাজারে অনিশ্চয়তা

0

লোকসমাজ ডেস্ক॥চীন ও অস্ট্রেলিয়ার মধ্যকার সাম্প্রতিক বিরোধ রাজনীতি ও কূটনীতির সীমানা ছাড়িয়ে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্যে প্রভাব ফেলতে শুরু করেছে আগেই। যত দিন যাচ্ছে দুই দেশের বিদ্যমান বিবাদপূর্ণ সম্পর্কে জটিলতা ততই বাড়ছে। বাড়ছে উত্তেজনা। বাড়তির পথে রয়েছে দ্বিপক্ষীয় রাজনীতি ও বাণিজ্যে অনিশ্চয়তা। চীন-অস্ট্রেলিয়ার এ বিরোধ গমের আন্তর্জাতিক বাজারেও বড় ধরনের অনিশ্চয়তা তৈরি করেছে। খাতসংশ্লিষ্টরা বলছেন, বিরোধের জের ধরে চীনা আমদানিকারকরা অস্ট্রেলিয়া থেকে কৃষিপণ্যটির আমদানি পুরোপুরি বন্ধ করে দিলে কিংবা বিকল্প আমদানি উৎস খুঁজতে শুরু করলে আন্তর্জাতিক বাজারে গমের চাহিদা-সরবরাহে ভারসাম্য ও দামে প্রভাব পড়তে পারে।
চীনা টেলিকম জায়ান্ট হুয়াওয়েকে নিয়ে যখন পশ্চিমা দেশগুলোয় বিতর্ক তুঙ্গে তখন অস্ট্রেলিয়া ফাইভজি নেটওয়ার্ক সম্প্রসারণে হুয়াওয়ের যন্ত্রাংশ ব্যবহারে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে। বিশ্লেষকদের ধারণা, অস্ট্রেলিয়া সরকার মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পকে খুশি করতে ২০১৮ সালে হুয়াওয়ের বিরুদ্ধে এমন অবস্থান নিয়েছিল। সেই থেকে চীন-অস্ট্রেলিয়ার সম্পর্ক শীতল হতে শুরু করে। যদিও একে অন্যের ওপর রাজনীতিতে প্রভাব বিস্তারের অভিযোগ নিয়ে দুই দেশের বিরোধ আগে থেকেই ছিল।
২০১৯ সালের শেষভাগে চীনের উহানে করোনা সংক্রমণের প্রথম ঘটনা শনাক্ত হয়। এরপর প্রাণঘাতী এ ভাইরাস পুরো পৃথিবীতে ছড়িয়েছে। বিশ্বজুড়ে করোনা ছড়ানোর দায় চীনকে দিতে চায় যুক্তরাষ্ট্র ও এর মিত্র দেশগুলো। এর মধ্যে সবচেয়ে সোচ্চার কণ্ঠ অস্ট্রেলিয়ার। দেশটি করোনা ছড়ানোর দায়ে আন্তর্জাতিক আদালতে চীনের বিচারের দাবি তুলেছে। যদিও এসব অভিযোগ অস্বীকার করেছে বেইজিং। তবে এর জের ধরে অস্ট্রেলিয়ার সঙ্গে প্রকাশ্য রাজনৈতিক, কূটনৈতিক ও বাণিজ্যিক বিরোধে জড়িয়েছে চীন।
বিরোধের অংশ হিসেবে অস্ট্রেলিয়া থেকে যব, তামা, ওয়াইনের আমদানি চালান স্থগিত করেছে বেইজিং। আরোপ করা হয়েছে বাড়তি আমদানি শুল্ক। বন্ধ করে দেয়া হয়েছে মূল্যবান কাঠ আমদানিও। বিরোধের কালো ছায়া পড়েছে গমের বাজারেও। অস্ট্রেলীয় গম আমদানি উল্লেখযোগ্য পরিমাণে কমিয়ে দিয়েছেন চীনা আমদানিকারকরা। কৃষিপণ্যটি আমদানিতে নিষেধাজ্ঞা আরোপের চিন্তাভাবনা করছে বেইজিং।
অস্ট্রেলীয় গমের অন্যতম ক্রেতা চীন। এখন দেশটি যদি অস্ট্রেলিয়া থেকে গম আমদানি বন্ধ করে দেয়, তবে দুই দেশের মধ্যে বছরে ৩৯ কোটি ৪০ লাখ ডলারের বাণিজ্য ঝুঁকিতে পড়বে বলে জানান খাতসংশ্লিষ্টরা।
এ বিষয়ে অস্ট্রেলিয়ার নিউ সাউথ ওয়েলসের রফতানিকারক প্রতিষ্ঠান এগ্রোকমের এক্সপোর্ট ম্যানেজার ব্রেট দোনোঘুই বলেন, রাজনৈতিক বিরোধের প্রভাব বাণিজ্যে দেখা যাওয়া নতুন কিছু নয়। তবে চীন-অস্ট্রেলিয়ার বিষয়টি ভিন্ন। চীনের বাজারে অস্ট্রেলিয়ার যব ও গমের চাহিদা বেশি। বিরোধের জের ধরে এসব পণ্যের ব্যবসা চ্যালেঞ্জের মুখে পড়তে পারে।
এখন প্রশ্ন হলো চীন-অস্ট্রেলিয়ার বিরোধে গমের আন্তর্জাতিক বাজারে সম্ভাব্য চ্যালেঞ্জগুলো কেমন হবে? বিশ্লেষকদের ভাষ্য, বিরোধের জের ধরে বেইজিং অস্ট্রেলিয়া থেকে গম আমদানি পুরোপুরি বন্ধ করে দিতে পারে। কিংবা যবের মতো গমের আমদানি শুল্ক রেকর্ড পরিমাণ বাড়াতে পারে। এমনটা হলে বিশ্বের ষষ্ঠ শীর্ষ গম রফতানিকারক দেশ অস্ট্রেলিয়ায় কৃষিপণ্যটির মজুদ বাড়বে। দেশটি গমের নির্ভরযোগ্য ক্রেতা হারাবে। ফলে কমে আসতে পারে কৃষিপণ্যটির দাম।
অন্যদিকে আমদানিনির্ভর দেশ হওয়ায় গমের ক্ষেত্রে অস্ট্রেলিয়ার বিকল্প বাজার খুঁজবেন চীনা আমদানিকারকরা। এতে যুক্তরাষ্ট্র, রাশিয়া, ইউক্রেন, অস্ট্রেলিয়া, ব্রাজিল, ভারত, ইউরোপীয় ইউনিয়নসহ (ইইউ) বিভিন্ন দেশে গমের রফতানি চাহিদা আগের তুলনায় বাড়তে পারে। বাড়তি রফতানি চাহিদা এসব দেশে কৃষিপণ্যটির দাম বাড়িয়ে দিতে পারে।
ব্রেট দোনোঘুই বলেন, চলমান বিরোধ আন্তর্জাতিক বাজারে গমের চাহিদা-সরবরাহে ভারসাম্য বিঘ্নিত করবে এটা অনুমেয়। ফলে কোনো কোনো দেশে কৃষিপণ্যটির দাম বাড়তে পারে। কোথাও কোথাও উল্টো চিত্র দেখা যাওয়ার সম্ভাবনা প্রবল। ফলে আগামী দিনগুলোয় গমের আন্তর্জাতিক বাজারে চীন ও অস্ট্রেলিয়ার বিরোধ ঘিরে অনিশ্চয়তা বজায় থাকতে পারে।
ওয়ার্ল্ডগ্রেইনডটকম, রয়টার্স ও ব্লুমবার্গ অবলম্বনে