একের পর এক শিশু নির্যাতন ও হত্যা

0

দেশে একের পর এক শিশু নির্যাতন ও শিশুহত্যার মতো নির্মম অপরাধ কমাতে দ্রুততম সময়ে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি প্রদান এবং সেটা দৃশ্যমান করার ওপর জোর দিয়ে আসছেন মানবাধিকার কর্মীরা। কিন্তু বাস্তবতা হলো, দীর্ঘ মামলাজটের কারণে বেশিরভাগ েেত্রই শিশুহত্যা মামলার রায় বছরের পর বছর ঝুলে থাকে। আর মামলাটি যদি যৌননিপীড়ন ও ধর্ষণের সঙ্গে যুক্ত হয় তাহলে স্যাপ্রমাণসহ নানা কারণে বিচারের গতি আরও ধীর হয়ে যায়। কিন্তু হত্যা ও ধর্ষণের মতো ফৌজদারি মামলা সরকার চাইলে দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে দিতে পারে। সারা দেশে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল আছে ৫৪টি। এসব ট্রাইব্যুনালে ১৮০ দিনের মধ্যে বিচারের সময়সীমা বাঁধা থাকলেও বেশিরভাগ েেত্রই সেটা ঘটছে না। বছর দেড়েক আগে তৎকালীন প্রধান বিচারপতির দেওয়া হিসাব অনুযায়ী, সারা দেশে বিচারাধীন নারী ও শিশু নির্যাতনের মামলার সংখ্যা ছিল ১ লাখ ৬৬ হাজার ৩৮২টি। সন্দেহ নেই যে, দেশের বিচারাঙ্গনে এ ধরনের মামলা নিষ্পত্তিতে স্থবিরতা করোনা মহামারীর কালে আরও বেড়ে গেছে। এমন বাস্তবতার মধ্যেই সোমবার নারায়ণগঞ্জের বহুল আলোচিত শিশু সোয়াইব হত্যা মামলার রায় ঘোষিত হলো। তিন আসামির মৃত্যুদন্ডের রায় দেশে শিশুহত্যা রোধে ইতিবাচক ভূমিকা রাখবে বলে আশা করা যায়। তবে খেয়াল করা দরকার যে মামলাটিতে স্যাপ্রমাণ শেষে রায় ঘোষণা করতে সাত বছরেরও বেশি সময় লেগে গেছে। শিশু অধিকার নিয়ে কাজ করা মানবাধিকারকর্মী ও আইনজীবীরা বলছেন, পারিবারিক সহিংসতা, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি, বিচারহীনতা, মূল্যবোধের অবয় ও দারিদ্র্যের কারণে শিশু নির্যাতন, শিশু ধর্ষণ, শিশু অপহরণ ও শিশুহত্যা বাড়ছে। দেশে সাম্প্রতিককালে শিশুহত্যার সংখ্যা ও ধরন মারাত্মক উদ্বেগজনক। আরও উদ্বেগজনক হলো, শিশুদের প্রতি সহিংসতার ধরন দিন দিন ভয়ংকর হ”েছ। মানুষ আরও বেপরোয়া হ”েছ, কোনো অপরাধ করতেই দ্বিধা করছে না। বাংলাদেশ শিশু অধিকার ফোরাম-বিএসএএফ এর ওয়েবসাইটে প্রকাশিত হালনাগাদ তথ্য বলছে ২০২০ সালের জানুয়ারি থেকে আগস্ট পর্যন্ত ৮ মাসে হত্যার শিকার হয়েছে ১৬৪টি শিশু। একই সময়ে দেশে ধর্ষণের শিকার হয়েছে মোট ৩২৪ শিশু; এর মধ্যে দলবদ্ধ ধর্ষণের শিকার হয়েছে মোট ৪৯টি শিশু। এছাড়া নানারকম যৌন হয়রানির শিকার হয়েছে ১০৪ শিশু। আর ধর্ষণের পর হত্যার শিকার হয়েছে ১৮টি শিশু। পর্নোগ্রাফির শিকার ১৬ এবং অপহরণের শিকার ৮১। জাতীয় দৈনিকগুলোর প্রকাশিত সংবাদ থেকে তৈরি করা প্রতিবেদনে শিশু অধিকার ফোরাম জানায় ২০১৫ সাল থেকে ২০১৯ সাল পর্যন্ত পাঁচ বছরের মধ্যে ২০১৯ সালে শিশুহত্যার ঘটনা ছিল সবচেয়ে বেশি। ওই বছর ৪৪৮ শিশুকে হত্যা করা হয়েছে। ২০১৮ সালে এ সংখ্যা ছিল ৪১৮। শিশুহত্যার এই নির্মম মানবিক সংকট উত্তরণে শিশু নির্যাতন ও শিশুহত্যার বিচার দ্র“ত নিষ্পত্তিতে আদালতের বিশেষ পদপে নেওয়া এবং সেটা ত্বরান্বিত করতে সরকারের তরফ থেকে আন্তরিক সহায়তা একান্ত জর“রি হয়ে পড়েছে। দেশের ভবিষ্যৎ নাগরিক আজকের শিশুদের রায় একইসঙ্গে সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠনগুলোকেও এগিয়ে আসতে হবে। পাশাপাশি দেশের সামগ্রিক সমাজ-বাস্তবতায় অসহিষ্ণুতা, অ¯ি’রতা ও অপরাধপ্রবণতা কমিয়ে আনতে আর্থ-সামাজিক বৈষম্য কমিয়ে আনায় মনোযোগী হতে হবে রাজনীতিক থেকে শুর“ করে প্রশাসনসহ সব পর্যায়ের দায়িত্বশীলদের। তাহলেই কেবল আমরা শিশুদের জন্য একটা নিরাপদ সমাজ তৈরিতে সম হব।