ভারত সীমান্তে ইয়াবা কারখানা, থামছে না মাদকের পাচার

0

লোকসমাজ ডেস্ক॥ মরণ নেশা ইয়াবা। বাংলাদেশে তৈরি হয় না। এমনকি গাঁজা, ফেনসিডিল কোনোটাই এই দেশে উৎপাদন হয় না। তবু সারা দেশে ছড়িয়ে গেছে এই ভয়ঙ্কর মাদক। অতীতে মিয়ানমার থেকে ইয়াবা দেশে ঢুকলেও সম্প্রতি সীমান্তের তিন দিক থেকেই আসছে ইয়াবা। সীমান্তের ওপারে ভারতে তৈরি হচ্ছে এই মরণনেশা, এমন তথ্য রয়েছে দেশের গোয়েন্দাদের কাছে। তা অবহিত করা হয়েছে ভারতের বর্ডার সিকিউরিটি ফোর্স (বিএসএফ)কেও। তারপরও প্রায়ই ভারত সীমান্ত দিয়ে আসছে ইয়াবা। তার আগে একই কায়দায় ভারতীয় সীমান্তে গড়ে উঠেছিল প্রায় আড়াই হাজার ফেনসিডিলের কারখানা। বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি)’র তৎপরতায় সেগুলো বন্ধ হয়েছিল। এবারও ইয়াবা রুখতে তৎপরতা চালাচ্ছে বিজিবি।
সূত্রে জানা গেছে, চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে গত জুলাই পর্যন্ত পুলিশ, বিজিবি, র‌্যাব, কোস্টগার্ড ও মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর কর্তৃক পরিচালিত অভিযানে ১ কোটি ৭১ লাখ ৩৯ হাজার ৫শ’ ৮৩ পিস ইয়াবা জব্দ করা হয়। এরমধ্যে গত অক্টোবরে ৯ লাখ ১১ হাজার ৭শ’ ৪২ পিস ইয়াবা জব্দ করেছে বিজিবি। তার আগে সেপ্টেম্বরে ১৬ লাখ ৩৭ হাজার ৭শ’ ৭১ পিস ইয়াবা জব্দ করা হয়। আগস্টে বিজিবি কর্তৃক জব্দ করা হয় ১২ লাখ ৫৭ হাজার ৮শ’ ৮৪ পিস। জব্দকৃত ইয়াবার বেশির ভাগ মিয়ানমার থেকে এলেও এর বড় একাংশ জব্দ করা হয়েছে ভারত সীমান্ত এলাকায়। যশোর, বেনাপোল, হিলি, সাতক্ষীরা, কুমিল্লা সীমান্তে একের পর এক ইয়াবা জব্দের পর বিজিবি ও মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর নিশ্চিত হয় যে, ভারত থেকে মাদক দেশে আসছে। সীমান্তের ফুটবল খেলার মাঠ, জিলাপিপট্টি, পুরিপট্টি, মণ্ডলগেট, কামালগেট স্টেশন, বালুরচর, ডাব বাগান, ফকিরপাড়া, হিন্দু মিশন, নওপাড়া, হাড়িপুকুর, নন্দিপুর, ঘাসুরিয়া এবং পাঁচবিবি সীমান্তের কয়া, চেঁচড়া, ভুইডোবা, রাম ভদ্রপুর, উত্তর গোপালপুর, উচনাসহ ৩০টির বেশি স্থান দিয়ে ইয়াবা আমদানি হয়ে থাকে। এ ছাড়া সিলেটের জকিগঞ্জ, সুনামগঞ্জের মধ্যনগর ও টেকেরঘাট এবং হবিগঞ্জের বাল্লা, ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সীমান্তবর্তী উপজেলা বিজয়নগর, আখাউড়া ও কসবা দিয়ে আসছে ইয়াবা। সিলেটের জকিগঞ্জ সীমান্তে প্রায়ই ইয়াবা জব্দ করা হচ্ছে। গত বছরের শুরুতে সেনাপতি চক এলাকায় ৬১ হাজার ৪ শ’ পিস ইয়াবা জব্দ করে বিজিবি। গত ১৬ই অক্টোবর যশোরের বেনাপোল সীমান্ত থেকে জিয়া সরদার (৩৪) নামে এক মাদক ব্যবসায়ীকে আটক করেছে পুলিশ। তার কাছ থেকে ইয়াবা জব্দ করা হয়। একইভাবে গত ২৫শে জুন যশোরের শার্শা সীমান্ত থেকে ১ হাজার ৩শ’ ৩৫ পিস ইয়াবাসহ আবু সাঈদ (২৩) নামে এক ব্যক্তিকে আটক করে বিজিবি। ভারত থেকে ইয়াবা নিয়ে শার্শা থানাধীন অগ্রভুলাটে এলে বিজিবি তাকে আটক করে।
গোয়েন্দা তৎপরতা চালিয়ে সংশ্লিষ্টরা জানতে পারেন ভারত সীমান্তে ইয়াবা তৈরির কারখানা গড়ে উঠেছে। এ বিষয়ে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি)’র পরিচালক (অপারেশন) লে. কর্নেল ফয়জুর রহমান বলেন, ভারতে ইয়াবা তৈরির অনেক ফ্যাক্টরি রয়েছে, এমন তথ্যের ভিত্তিতে আমরা বিএসএফ’কে তা বন্ধ করতে বলেছি। এ ছাড়াও রুট পরিবর্তন করে ইয়াবা ভারত সীমান্ত দিয়ে আসতে পারে। ভারত সীমান্তে প্রায়ই ইয়াবা ধরা পড়ছে। এ বিষয়ে বিজিবি তৎপর রয়েছে বলে জানান তিনি। ইয়াবা, ফেনসিডিল, গাঁজা কোনো মাদকেরই উৎস বাংলাদেশ না। তবুও এই দেশে মাদক ছড়িয়ে পড়েছে। সীমান্ত দিয়ে মাদক আসছে। এ প্রসঙ্গে বিজিবি’র ওই কর্মকর্তা বলেন, দীর্ঘ সীমান্তে বিজিবি’র সদস্য সংখ্যা অপ্রতুল। এটি একটি কারণ। বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, বিজিবি ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনী কঠোর হলে দেশে মাদক প্রবেশ প্রায় বন্ধ হয়ে যাবে। ভারত থেকে নানা কৌশলে ইয়াবা আসছে দেশে। পণ্যবাহী বিভিন্ন ট্রাকে করে ইয়াবা ঢুকছে। আবার সীমান্তের ওপার থেকে এপারের মাদক পরিবহনকারীদের কাছে সহজে চোখের পলকে পৌঁছে দেয়া হচ্ছে ইয়াবা। নানা ধরনের মৌসুমী ফল তরমুজ, কাঁঠাল, লাউ, কুমড়ার ভেতর ঢুকিয়ে ভারত থেকে আনা হচ্ছে ইয়াবা ও ফেনসিডিল। পিয়াজের ভেতর ঢুকিয়েও আনা হচ্ছে মরণনেশা ইয়াবা।