ঋণ দেয়ার লোভ দেখিয়ে টাকা নিয়ে পালালো চৌগাছার সাইনবোর্ড সর্বস্ব এনজিও

0

এম এ রহিম চৌগাছা (যশোর) ॥ যশোরের চৌগাছায় কৃষক উন্নয়ন ফাউন্ডেশন নামে একটি এনজিও প্রতারণা করে গ্রাহকের প্রায় অর্ধকোটি টাকা নিয়ে পালিয়েছে বলে গ্রাহকরা অভিযোগ করেছেন। প্রতারক চক্রটি উপজেলার সুখপুকুরিয়া ইউনিয়নের রামকৃষ্ণপুর, সুখপুকুরিয়া, আন্দুলিয়া ও মাকাপুর, স্বরুপদহ ইউনিয়নের মাধবপুর, খড়িঞ্চা, দেবালয়, কাকুড়িয়া ও খড়িঞ্চা নওদাপাড়া (দানবাক্স) ও পাঁচবাড়ীয়াসহ কয়েকটি গ্রামের প্রায় ২শ’ পরিবারকে প্রতারণার ফাঁদে ফেলে প্রায় অর্ধকোটি টাকা হাতিয়ে নিয়ে চ¤পট দিয়েছে। এ ঘটনায় ভুক্তভোগীরা স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও চৌগাছা উপজেলা নির্বাহীকর্মকর্তার দপ্তরে লিখিত অভিযোগ করেছেন। অভিযোগে জানা যায়, উপজেলার পৌর শহরের তারনিবাস এলাকায় অফিস ভাড়া নেয় কৃষক উন্নয়ন ফাউন্ডেশন নামে এনজিওটি, যার রেজি নং-০০২৯২-০০৬৭৯-২০০০-১৯৯০। সেখানে প্রতিষ্ঠানটি ঋণ ও সঞ্চয় কার্যক্রম শুরু করে। এনজিওটির কর্মকর্তারা গ্রামের সহজ-সরল কৃষক ও মহিলাদের কাছ থেকে সঞ্চয়ের নামে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নেয়। বর্তমানে এনজিওটি তাদের সকল কার্যক্রম বন্ধ করে অফিসের সাইনবোর্ড খুলে নিয়ে পালিয়ে গেছে। অন্যদিকে সঞ্চয়ী গ্রাহকদের টাকা ফেরত দেয়া হবে বলে অনেকের পাশ বইও হাতিয়ে নিয়েছে তারা।
সরেজমিনে ওই এলাকায় গেলে রামকৃষ্ণপুর গ্রামের আনজুরা বেগম বলেন, এনজিওটির কর্মকর্তারা কৌশলে প্রমাণ লোপাটের উদ্দেশ্যে অনেক সদস্যের কাছ থেকে পাশ বই নিয়ে নিয়েছেন। পরিদর্শনকালে দেখা যায়, ফাউন্ডেশনের পাশ বইয়ে সঞ্চয় হিসেবে রামকৃষ্ণপুর গ্রামের মোশারফ হোসেনের স্ত্রী সোনীয়া বেগম ৫ হাজার ২শ ৫০ টাকা, আব্দুর রাজ্জাকের স্ত্রী আনজুরা খাতুন ১০হাজার ২শ ৫০ টাকা, কবির উদ্দীনের স্ত্রী জোসনা খাতুন ৩ হাজার ২শ ৫০ টাকা, আমিনুর রহমানের স্ত্রী জীবন নেছা ১০হাজার ২শ ৫০টাকা ও সুখপুকুরিয়া গ্রামের সামছুল হকের স্ত্রী নাজমা খাতুনের পাশ বইয়ে ১০ হাজার ২শ ৫০ টাকা, কদম আলীর স্ত্রী মনোয়ারা বেগমের ১০ হাজার ২শ ৫০ টাকা, ফজলুর রহমানের স্ত্রী চায়না খাতুনের ১০ হাজার ২শ ৫০ টাকা, রিয়াজুল ইসলামের স্ত্রী জরনা খাতুনের ৫ হাজার ২শ ৫০ টাকা, নজরুল ইসলামের ৫ হাজার ২শ ৫০ টাক,া মতিয়ার রহমানের ১০ হাজার ২শ ৫০ টাকা, রবিদাসের ৫ হাজার ২শ ৫০ টাকা, বাবলুর রহমানের ১০ হাজার ২শ ৫০ টাকা জমা করেছেন। গ্রাহকদের পাশ বইয়ে এমনিভাবে একেকজন একেক অংকের টাকা জমা করেছেন সংস্থাটির নিকট। এ ব্যাপারে রামকৃষ্ণপুর গ্রামের আমিনুর রহমান বলেন, সংস্থাটি সহজ কিস্তিতে লোন দেওয়ার নামে লাখে ৫ হাজার ২শ ৫০ টাকা সঞ্চয় জমা করতে বলেন। যা ২ বছর মেয়াদী মাসে আড়াই হাজার টাকা কিস্তি দিতে হবে। লাখে বছরে ১৫ হাজার টাকা সুদ দিতে হবে। সুখপুকুরিয়া গ্রামের কদম আলী বলেন, কৃষক উন্নয়ন ফাউন্ডেশন নামে একটি এনজিও চৌগাছা পৌর শহরের তারনিবাস এলাকার একটি বাড়িতে ২০২০ সালের অক্টোবর মাসের প্রথম দিকে অফিস ভাড়া নিয়ে তাদের ঋণ কার্যক্রম চালাতে থাকে। ১১ নভেম্বর তারা আমাদের গ্রামে জবা মহিলা দল গঠন করে জন প্রতি ২শ ৫০ টাকা ফি নিয়ে সদস্য সংগ্রহ করতে থাকেন। তারা পাশ বই রশিদ ও অফিসিয়াল হাজিরা খাতা তৈরি করে। সুখপুকুরিয়া গ্রামের সামছুল হক বলেন, প্রতারক চক্রটি এলাকার প্রায় ২শটি পরিবারের নিকট থেকে প্রতারণা করে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়েছে। স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাসহ বিভিন্ন দপ্তরে অভিযোগ করেও বিষয়টির কোন প্রতিকার পাওয়া যাচ্ছে না। এ ব্যাপারে সুখপুকুরিয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান তোতা মিয়া ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, ভুক্তোভোগীরা আমার নিকট এসেছিলেন। কৃষক উন্নয়ন ফাউন্ডেশন নামে একটি এনজিও প্রতারণা করে এ এলাকার বিভিন্ন গ্রামের মানুষকে, বিশেষ করে কৃষক ও নারীদের ঠকিয়ে এনজিওটির মালিকপক্ষ বিপুল পরিমান টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন। কিছু বুঝে ওঠার আগেই প্রতারক এ চক্রটি এলাকা ছেড়ে চম্পট দিয়েছে। এ ঘটনায় চৌগাছা থানায় একটি লিখিত অভিযোগ করা হয়েছে। বিষয়টি নিয়ে কৃষক উন্নয়ন ফাউন্ডেশনের আঞ্চলিক ম্যানেজার পরিচয়দানকারী সজল মাহমুদ নামে এক ব্যক্তির ব্যবহৃত ০১৭৬২৭৪৮৪৬১ নম্বর মোবাইলে বারবার ফোন করলেও বন্ধ পাওয়া গেছে। এ ব্যাপারে চৌগাছা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা প্রকৌশলী এম এনামুল হক বলেন, কৃষক উন্নয়ন ফাউন্ডেশন নামে একটি এনজিও প্রতারণা করে এ এলাকার বিভিন্ন গ্রাম থেকে টাকা তুলে নিয়ে চম্পট দিয়েছে। ভুক্তভোগীরা আমার দপ্তরে এসেছিলেন। আমি তাদেরকে একটি অভিযোগ করতে বলেছি। কোন লিখিত অভিযোগ পেলে ব্যবস্থা নেব।