আ.লীগ-হেফাজতে ইসলাম পাল্টাপাল্টি

0
বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য স্থাপন নিয়ে ধর্মীয় সাম্প্রদায়িক গোষ্ঠী বিতর্কের সৃষ্টি করছে : কাদের
লোকসমাজ ডেস্ক॥ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ভাস্কর্য স্থাপন নিয়ে একটি ধর্মীয় সাম্প্রদায়িকগোষ্ঠী অনাহুত বিতর্কের সৃষ্টি করছে বলে মন্তব্য করেছেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। গতকাল শনিবার সকালে সংসদ ভবনস্থ তার সরকারি বাসভবনে সমসাময়িক বিষয় নিয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ কথা বলেন। আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বলেন, ‘বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য নিয়ে মনগড়া ব্যাখ্যা মুক্তিযুদ্ধেরচেতনা ও দেশের সংস্কৃতির প্রতি চ্যালেঞ্জ। স্বাধীন বাংলাদেশের স্থপতি বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য নিয়ে একটি ধর্মীয় সাম্প্রদায়িক গোষ্ঠী ইসলামের অপব্যাখ্যা দিয়ে ধর্মপ্রিয় মানুষের মনে বিদ্বেষ ছড়ানোর অপচেষ্টা করছে।’ ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘সরকারের সরলতাকে দুর্বলতা ভাববেন না,জনগণের শান্তি বিনষ্টের যে কোনো অপচেষ্টায় জনগণই রুখে দাঁড়াবে। দেশের মুক্তিযুদ্ধ, মুক্তিযুদ্ধেও চেতনা, সংবিধান এবং রাষ্ট্রবিরোধী কোনো বক্তব্য বরদাশত করা হবে না।’ যারা দেশের স্বাধীনতায় বিশ্বাস করে, বিশ্বাস করে মুক্তিযুদ্ধের চেতনায়, তাদের সবাইকে এক হয়ে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বিরোধী সকল কর্মকাণ্ডের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহবান জানিয়ে তিনি বলেন, সরকার প্রধান আগেই বলেছেন, দেশে কোরআান – সুন্নাহ বিরোধী কোনো আইন হবে না। তাই অন্য কোনো পথ না পেয়ে ধর্মীয় ইস্যুকে সামনে এনে ধর্মীয় সহনশীলতা বিনষ্টের অপচেষ্টা করা হচ্ছে, যা কঠোর হস্তে দমন করা হবে। ওবায়দুল কাদের বলেন, স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ে এদেশে ইসলাম সম্পর্কে গবেষণা, চর্চা এগিয়ে নিতে বঙ্গবন্ধু প্রতিষ্ঠা করেছিলেন ইসলামিক ফাউন্ডেশন। ধর্মীয় শিা প্রসারে মাদ্রাসা বোর্ড পুনর্গঠনসহ ইসলাম প্রচারে তাবলিগ জামাতকে জমি প্রদান করেছিলেন জানিয়ে তিনি বলেন, এরই ধারাবাহিকতায় বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা পবিত্র ধর্মের একজন নিবেদিত প্রাণ ও অনুসারি হিসেবে ইসলামের সাথে জ্ঞানবিজ্ঞানের সমন্বয় করে প্রকৃত ইসলামের চর্চা এগিয়ে নিতে জনমানুষের ধর্মানুরাগের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে দেশের প্রতিটি উপজেলায় নির্মাণ করেছেন মডেল মসজিদ কমপ্লেক্স। ওবায়দুল কাদের বলেন, একজন ধর্মপ্রাণ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যখন সরকার পরিচালনার দায়িত্বে তখন এদেশে ইসলাম বিরোধী কোনো কার্যক্রম হবে, তা বিশ্বাস করার কোনো কারণ নেই। তিনি বলেন, ভাস্কর্যকে যারা মূর্তি বলে অপপ্রচারে নেমেছে তারা নিজেরাই ভ্রান্তিতে আছে, দেশের আলেম সমাজ এবং বিশেষজ্ঞগণ ইতোমধ্যেই বারবার বলেছেন মূর্তি আর ভাস্কর্য এক নয়। ওবায়দুল কাদের বলেন, ইসলাম আমাদের ধর্ম, এ ধর্মের বিধিবিধানে ধর্মীয় ইস্যুতে বাড়াবাড়ির সুযোগ নেই। নিরুৎসাহিত করা হয়েছে ধর্মীয় বিষয়ে বিতর্ক করতে, নিষেধ করা হয়েছে ফিতনা – ফ্যাসাদ সৃষ্টিতে। বাংলাদেশের স্থপতির ভাস্কর্য টেনে হেঁচড়ে নামাবে বলে কোনো কোনো ধর্মীয় নেতা ঔদ্ধত্যপূর্ণ বক্তব্য রাখছেন, তাদের এমন রুচি এবং ভাষা ব্যবহার দেখে তাদের ধর্মচর্চা ও ইসলামি রুচিবোধ নিয়ে জনমনে প্রশ্ন তৈরি হয়েছে বলেও মন্তব্য করেন ওবায়দুল কাদের। প্রকৃত ইসলাম চর্চার আহবান জানিয়ে তিনি বলেন, ধর্ম নিয়ে বাড়াবাড়ি করা থেকে সবাই বিরত থাকি। ধর্মকে রাজনৈতিক ইস্যুতে ব্যবহার না করি।
সূত্র : বাসস

ভাস্কর্য বসালে ‘টেনে হিঁচড়ে ফেলে দেব’: বাবুনগরী
লোকসমাজ ডেস্ক॥ যে কোনো দল ভাস্কর্য বসালে তা ‘টেনে হিঁচড়ে ফেলে দেওয়ার’ হুমকি দিয়েছেন হেফাজতে ইসলামের আমীর জুনাইদ বাবুনগরী। শুক্রবার রাতে হাটহাজারীর পার্বতী সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে আল আমিন সংস্থা আয়োজিত তিন দিনের তাফসীরুল কুরআন মাহফিলের সমাপনী দিনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তার এমন বক্তব্য আসে। বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্যের বিরোধিতাকারী হেফাজত ইসলামের যুগ্ম মহাসচিব মামুনুল হকের এই মাহফিলে অন্যতম প্রধান বক্তা হিসেবে বক্তব্য রাখার কথা ছিল। কিন্তু দুদিন ধরে যুবলীগ-ছাত্রলীগ, শ্রমিক লীগসহ বিভিন্ন সংগঠনের প্রতিরোধের মুখে মামুনুল হক চট্টগ্রামে আসেনি। তবে ওই মাহফিল থেকেই ভাস্কর্যবিরোধী বক্তব্য দেন হেফাজতের আমীর জুনাইদ বাবুনগরী। তিনি বলেন, “প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, মদিনার সনদে দেশ চলবে। প্রধানমন্ত্রীকে ধন্যবাদ। মদিনার সনদে যদি দেশ চলে, ইসলামবিরোধী কোনো কাজ হতে পারবে না। ইনশাল্লাহ প্রধানমন্ত্রী (ভাস্কর্য বসাতে) দেবে না, দেবে না। “মদিনার সনদে যদি দেশ চলে, কোনো ভাস্কর্য থাকতে পারে না। মদিনায় কি কোনো ভাস্কর্য আছে?” বাবুনগরী বলেন, “ভাস্কর্য- এটা শরিয়তসম্মত নয়। কোনো পার্টি বা নেতার নাম বলছি না, যার ভাস্কর্য হোক না কেন। “আল্লাহর কসম, কেউ যদি আমার আব্বার ভাস্কর্য বসায়, আমি সর্বপ্রথম সেই ভাস্কর্য টেনে হিঁচড়ে ফেলে দেব। যে কোনো দল ভাস্কর্য বসাবে, আমার আব্বার ভাস্কর্যও যদি স্থাপন করা হয়, সেটা শরিয়ত সম্মত হবে না। টেনে হিঁচড়ে ফেলে দেব।” প্রধানমন্ত্রীকে উদ্দেশ করে বাবুনগরী বলেন, “বঙ্গবন্ধুকে অন্তর থেকে ভালোবাসি। আপনার আব্বা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব, আমরা উনাকে শ্রদ্ধা করি। এই বঙ্গবন্ধুকে কারা মেরেছে? কোনো মাদ্রাসার ছাত্র? কোনো আলেম ওলামা? না, না। এই বঙ্গবন্ধুকে মেরে ফেলেছে বঙ্গবন্ধুর মানুষরা। “আপনাকে সতর্ক করছি। আপনার ঘাড়ে যেসব নাস্তিকরা বসে আছে, তারাই আপনার তি করবে, তারাই আপনাকে মেরে ফেলবে। আমরা আপনার দুশমন নই। আমরা দেশের শান্তি শৃঙ্খলা চাই।” হাটহাজারীর মাহফিল থেকে সরকারের কাছে চার দফা দাবি তুলে ধরেন হেফাজত আমির জুনাইদ বাবুনগরী।
বাংলাদেশে ইসকনের কার্যক্রম বন্ধ করা, কাদিয়ানীরা সরকারিভাবে ‘অমুসলিম’ ঘোষণা করা, দূতাবাস বন্ধ করে ফ্রান্সের দূতকে বহিষ্কার করা এবং ফ্রান্সের বিরুদ্ধে সংসদে নিন্দা প্রস্তাব পাস করার দাবি রয়েছে সেখানে। বাবুনগরী বলেন, “দেশ চলবে মদিনার সনদে। এই কথায় আমরা মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর সাথে একমত। নব্বই ভাগ মুসলমানের দেশ মদিনার সনদে চলবে। রাশিয়া, আমেরিকা, ভারত, চীনের সনদে চলতে পারবে না। “আওয়ামী লীগ বিএনপির লড়াই নাই। ঈদের নামাজের কাতারে তারা পাশাপাশি দাঁড়ায়। আওয়ামী লীগ বিএনপির মাঝখানে আত্মীয়তার সম্পর্ক আছে। বর্তমান বাংলাদেশ আর সারা বিশ্বে কঠিন লড়াই আস্তিক আর নাস্তিকের।”