বিশ্বস্ত ধানবীজ উৎপাদনে সফল মণিরামপুরের এক দল কৃষক

0

আকরামুজ্জামান ॥ মানসম্মত ধানের বীজ উৎপাদন ও সংরক্ষণ করে সাড়া ফেলেছেন যশোরের মনিরাপুরের একদল কৃষক। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর থেকে সংগৃহিত ভিত্তি বীজ দিয়ে নিজের ক্ষেত থেকেই এখন তারা বিশ্বস্ত বীজ তৈরি ও প্যাকেটজাত করে বিক্রি করছেন। মনিরামপুরের কৃষকদের এ সফলতা দেখে জেলার অন্যান্য এলাকার কৃষকরাও এখন নিজেরাই ধানের বিশ্বস্ত বীজ উৎপাদনে আগ্রহী হচ্ছেন।
কৃষি বিভাগের তথ্যমতে ফসল উৎপাদনের যে কোনো প্রযুক্তি নির্ভর উন্নয়নের মূলভিত্তিই হলো মানসম্মত বীজ। কিন্তু প্রতিবছর ধান চাষের উপযুক্ত সময়ে মানসম্মত ধান বীজের অভাবে কৃষককে বেশ বেগ পেতে হয়। অনেক বীজ কোম্পানি স্থানীয়ভাবে কেনা পুরনো ও মেয়াদোত্তীর্ন মানহীন ধানের বীজ প্যাকেটজাত করে চড়াদামে বিক্রি করার অভিযোগ রয়েছে। এতে কৃষক একদিকে যেমন আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হন, তেমনি কাঙ্খিত ধান উৎপাদনে ব্যহত হয়। এ অবস্থায় বাংলাদেশ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উদ্যোগে আধুনিক প্রযুক্তির মাধ্যমে কৃষক পর্যায়ে উন্নত মানের ধান, গম ও পাট বীজ উৎপাদন, সংরক্ষণ ও বিতরণ প্রকল্পের মাধ্যমে কৃষক পর্যায়ে প্রশিক্ষণের মাধ্যমে বিশ্বস্ত বীজ উৎপাদনের উদ্যোগ গ্রহন করা হয়। এরই অংশ হিসেবে ২০১৯ সাল থেকে মনিরামপুওে ১৭ টি ইউনিয়নে কৃষকদল গঠণ করে মানসম্মত এ ধান বীজ উৎপাদন করছেন একদল কৃষক। মনিরামপুর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা হীরক কুমার সরকার বলেন, উপজেলার প্রতিটি ইউনিয়নেই কৃষক এখন নিজেরা দল গঠণ করে নিজেদের ক্ষেত থেকে বিশ্বস্ত ধান বীজ উৎপাদন করছেন। এক্ষেত্রে কৃষককে আমরা প্রশিক্ষণ দিয়ে দক্ষ করে তুলেছি। তিনি বলেন, প্রতিবছর ধান চাষের উপযুক্ত মৌসুমে কৃষকের মাঝে ধান বীজ নিয়ে এক ধরনের শঙ্কা থাকে। বিভিন্ন বীজ উৎপাদকদের কাছ থেকে চড়ামূল্যে ধান বীজ কিনলেও মান না থাকায় তারা ক্ষতিগ্রস্থ হয়। এজন্য কৃষি বিভাগের পক্ষ থেকে কৃষকদের মাঝে ভিত্তি বীজ সরবরাহ করে তাদের নিজস্ব ক্ষেত থেকে এ ধান বীজ উৎপাদন করে বিক্রি করছেন তারা। ২০১৯ সাল থেকে এ কার্যক্রম শুরু হওয়ার পর ভালো ফল পেয়ে এখন তা কৃষকের মাঝে ব্যাপক সাড়া ফেলেছে।
মান সম্মত ধান, গম, ও পাট বীজ উৎপাদন, সংরক্ষণ ও বিতরণ প্রকল্পের মনিটরিং অফিসার মোহাম্মাদ সামিউর রহমান বলেন, কৃষক পর্যায়ে বীজ উৎপাদন ও সংরক্ষণে শতভাগ মান বজায় রাখা হচ্ছে। বিএডিসিসহ উন্নত বীজ কোম্পানিগুলো বীজ বাছাইয়ে যেসব পদ্ধতি অনুসরণ করে থাকে ঠিক তেমন পদ্ধতি অনুসরণ করছেন এখানকার কৃষকরা। যে কারণে অল্প সময়ের মধ্যে এটি কৃষকদের কাছে জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। মনিরামপুর উপজেলার লাউড়ী গ্রামের কৃষক আবুল কালাম আজাদ জানান, মানসম্মত এ ধান বীজ উৎপাদন ও সংরক্ষণে তারা আধুনিক প্রযুক্তির অনুসরণ করছেন। যেকারণে অল্প সময়ের মধ্যে তাদের বীজ নিয়ে কৃষক পর্যায়ে সাড়া পড়েছে। এই গ্রামে তাদের ১৫ জনের একটি কৃষক দল রয়েছে। ২০১৯ সালে তারা প্রথম পরীক্ষামূলকভাবে বীজ উৎপাদন শুরু করেন। সে সময়ের উৎপাদিত ও সংরক্ষণ করা ধানের বীজ নিয়ে এবছর কৃষক ব্যাপক ফলন পেয়েছেন। এবছর তারা ২ টন ধান বীজ সংরক্ষণ করেছেন। এগুলো তারা মানসম্মতভাবে প্যাকেট করে তা কৃষকের মাঝে সরবরাহ করছেন। প্রতি দশ কেজির বস্তার ধান বীজ ৫শ টাকারও বেশি দরে বিক্রি হচ্ছে বলে তিনি জানান। জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক বাদল চন্দ্র বিশ্বাস বলেন, এক সময়ে ধান বীজের জন্য কৃষকের মাঝে হাহাকার শুরু হলেও এখন কৃষক নিজেরাই ধান বীজ তৈরি করছেন। এটি কৃষি বিভাগের জন্য একটি ইতিবাচক দিক। ধানের উৎপাদন বৃদ্ধির লক্ষ্যে কৃষক পর্যায়ে মানসম্মত এ ধানের বীজ উৎপাদন ও সংরক্ষণ প্রক্রিয়া আগামীতে অন্যান্য এলাকায় ছড়িয়ে দেওয়া হবে জানান এ কৃষি কর্মকর্তা। তিনি বলেন, কৃষক পর্যায়ে মানসম্মত ধান বীজ সংরক্ষণ ও উৎপাদনে আগামীতে এ অঞ্চলে ধানের উৎপাদন বৃদ্ধিতে বড় ধরনের সহায়ক হবে বলে।