যশোর ২৫০ শয্যা হাসপাতাল: স্টুয়ার্ড শাজাহানের দুর্নীতি প্রমাণিত হলেও ব্যবস্থা না নিয়ে সতর্ক করা হচ্ছে

0

স্টাফ রিপোর্টার ॥ যশোর ২৫০শয্যা হাসপাতালের রান্নাঘরের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মচারী স্টুয়ার্ড শাজাহান আলীর অনিয়ম ও দুর্নীতি প্রমাণিত হয়েছে। হাসপাতালের তদন্ত কমিটি তাকে অভিযুক্ত করে প্রতিবেদন জমা দিয়েছেন। এদিকে দুর্নীতি প্রমাণিত হলেও তার বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে না। সূত্র জানিয়েছেন, যশোর ২৫০ শয্যা হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রোগীদের প্রত্যেক দিন সরকারিভাবে ১শ ২৫ টাকা হারে খাবার দেয়া হয়। কিন্তু স্টুয়ার্ড শাজাহান আলী রোগীদের খাবার দেয়ার ক্ষেত্রে ব্যাপক অনিয়ম ও দুর্নীতির আশ্রয় নেন। রান্না করা মাংসের ভেতর থেকে বাছাই করা মাংসের পিচ সরিয়ে রেখে হোটেলে বিক্রি এবং মাঝে মধ্যে ৩০ কেজি করে চাল আত্মসাত করতেন। অসহায় রোগীদের বঞ্চিত করে এভাবে দীর্ঘদিন যাবত অনিয়ম ও দুর্নীতি করে আসছিলেন স্টুয়ার্ড শাজাহান আলী। এ অনিয়ম ও দুর্নীতি কাজে রয়েছে একটি বড় সিন্ডিকেড। যাদের মাধ্যমে দুর্নীতি করেও পার পেয়ে যাচ্ছিলেন তিনি। দুর্নীতি অনিয়মের আশ্রয় নিয়ে তিনি নামে বেনামে অনেক টাকার মালিক হয়েছেন। যা ধরা ছোঁয়ার বাইরে। হওয়ার পর তত্ত্বাবধায়ক ডাঃ দিলীপ কুমার রায় ৩ সদস্য বিশিষ্ট তদন্ত কমিটি গঠন করেন। চু বিভাগের সিনিয়র কনসালটেন্ট ডাঃ হিমাদ্রি শেখর ও আরএম ও ডাঃ মোঃ আরিফ আহমেদকে সদস্য সচিব করে এ কমিটি গঠন করা হয়।
সূত্র জানিয়েছেন, কমিটি সদস্যগণ কখনো নিয়ে আবার কখনো তাদের কর্মচারী দিয়ে গোপনে রান্নাঘরের কার্যক্রম ও রোগীর খাবার দেয়ার বিষয়টি ধারাবাহিকভাবে পর্যবেক্ষন করতে থাকেন। পর্যবেক্ষণের এক পর্যায়ে গত মাসের ২০ অক্টোবর রান্নাকরা ৯৫ পিচ মাংস কয়েক কেজি চাল চুরি করে নিয়ে যাওযার সময় ধরা পড়ে। রান্নাঘরের কর্মচারীদের মাধ্যমে এসব খাবার পাচার করা হচ্ছিল। ঘটনার পর দৈনিক লোকসমাজে সংবাদ প্রকাশিত হয়। সংবাদের প্রেক্ষিতে শুরু হয় শক্তিশালী তদন্ত। তদন্তের পর খাতাপত্র পর্যবেক্ষণ করে ধরা পড়ে দৈনিক ৩০ কেজি করে চালু চুরির ঘটনা। সাথে আরো মালামাল কম দেয়ার বিষয় উঠে আসে। দীর্ঘদিন ধরে একটি সিন্ডিকেটের মাধ্যমে এ ধরনের অনিয়ম ও দুর্নীতি চলে আসছে বলে দীর্ঘ তদন্তে উদঘাটন করেন কমিটির সদস্যরা। এক্ষেত্রে দৈনিক লোকসমাজে প্রকাশিত সংবাদ বড় ভূমিকা পালন করেছে বলে জানিয়েছেন হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। দেড় সপ্তাহ আগে ওই কমিটির পক্ষ থেকে হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডাঃ দিলীপ কুমার রায়ের কাছে প্রতিবেদন জমা দেয়া হয়েছে। তদন্তে স্টুয়ার্ড শাজাহান আলী ও তার সিন্ডিকেটের অব্যাহত অনিয়ম ও দুর্নীতি ধরা পড়েছে বলে ডাঃ মোঃ আরিফ আহমেদ জানিয়েছেন। ওই চিঠি প্রস্তুত করা হয়েছে। আজ শনিবার অথবা আগামীকাল রোববার তাকে (শাজাহান আলীকে) এ চিঠি দেয়া হবে। চিঠিতে বলা হয়েছে, পরোক্ষ ও প্রত্যক্ষভাবে তদন্তে আপনার বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণিত হয়েছে। তাই এ অনিয়ম ও দুর্নীতি থেকে বিরত থাকার জন্য আপনাকে সতর্ক করা হন।
এ ব্যাপারে তত্ত্বাবধায়ক ডাঃ দিলীপ কুমার রায়ের সাথে টেলিফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, স্টুয়ার্ড শাজাহান আলীর অনিয়ম ও দুর্নীতি প্রমাণিত হয়েছে বলে তদন্ত কমিটির প্রতিবেদন পাওয়া গেছে। এখন এ কাজ থেকে বিরত থাকার জন্য তাকে সতর্ক করে চিঠি দেয়া হবে। চিঠি তৈরি হয়ে গেছে। অপরাধের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা না নিয়ে সতর্ক করার কারণ সম্পর্কে ডাঃ দিলীপ কুমার রায় বলেন, স্টুয়ার্ড একটি সরকারি মঞ্জুরিকৃত পদ। ওই পদে কোন লোক নেই। তাছাড়া কিছু সমস্যা আছে। যে কারণে ব্যবস্থা না নিয়ে তাকে সতর্ক করা হচ্ছে। এ তদন্ত কাজে দৈনিক লোকসমাজের প্রকাশিত সংবাদ তাকে ইস্যু হিসেবে সাহায্য করেছে। সংবাদ প্রকাশিত না হলে তিনি এত বড় তদন্ত করতে পারতেন না।