‘ছোট আগুন’ বলে এখনও শুরু হয়নি তদন্ত!

0

লোকসমাজ ডেস্ক॥ রাজধানীতে সোমবার (২৩ নভেম্বর) রাত থেকে মঙ্গলবার (২৪ নভেম্বর) মধ্যরাত পর্যন্ত তিন স্থানে বস্তিতে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে। ৩০০টির মতো ঘর ও ৫০টির বেশি দোকান পুড়েছে। ভুক্তভোগীদের মতে, ক্ষতির পরিমাণ দেড়-দুই কোটি টাকারও বেশি। কিন্তু আগুনের সূত্রপাত ও ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ নিয়ে আগ্রহ নেই ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স অধিদফতরের। তিন-চারদিন পার হলেও হয়নি তদন্ত কমিটি। কর্তৃপক্ষের মতে, আগুনের ঘটনা ‘ছোট’ বলেই তদন্তে এমন ধীরগতি!
ফায়ার সার্ভিস সদর দফতরের কন্ট্রোল রুমের ডিউটি অফিসার লিমা খানম বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, চলতি সপ্তাহের তিন আগুনের ঘটনার সূত্রপাত ও ক্ষয়ক্ষতি তদন্তসাপেক্ষে বলা যাবে। তদন্ত কবে নাগাদ হবে জানতে চাইলে তিনি বলেন, এখন পর্যন্ত একটিও তদন্ত কমিটি হয়নি। কমিটি হলে পরের ১৫ কার্যদিবসের মধ্যে প্রতিবেদন জমা পড়বে। অনেক ক্ষেত্রে তারও আগে জমা হয়। তখন জানানো যাবে।
ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স অধিদফতরের সিনিয়র স্টাফ অফিসার শাহজাহান শিকদার বলেন, সাততলা বস্তির আগুনে তদন্ত কমিটির কথা মৌখিকভাবে শুনেছি। এখনও লিখিত কোনও চিঠি তৈরি হয়নি। বিষয়টি ওয়্যারহাউজ ও ফায়ার প্রিভেনশন বিভাগ দেখে। ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স অধিদফতরের সহকারী পরিচালক (ওয়্যারহাউজ ও ফায়ার প্রিভেনশন) দিনমনি শর্মা বলেন, ‘এই বস্তির আগুনের সূত্রপাত সম্পর্কে জানা যায়নি। এখনও তদন্ত কমিটি হয়নি। আসলে সব আগুনের তদন্ত কমিটি হয় না। ছোট আগুন হলে আমরা সচরাচর তদন্ত কমিটি করি না। এটা ক্ষয়ক্ষতির ওপর নির্ভর করে।’ বস্তির এই ‘ছোট আগুন’-এর সূত্রপাত্র বা তদন্ত সম্পর্কে ফায়ার সার্ভিসের অনাগ্রহ থাকলেও এই আগুনকে অস্বাভাবিক মনে করছেন নগর বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক নজরুল ইসলাম। অধ্যাপক নজরুল ইসলাম বলেন, ‘দুদিনে তিন বস্তিতে আগুন লেগে যাওয়া মোটেও স্বাভাবিক বা ছোট ঘটনা নয়। অনেক সময় বস্তি উচ্ছেদ করার জন্য এমন আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়। সেক্ষেত্রে আগুনের সূত্রপাত বের করাটা জরুরি।’ এই নগর বিশেষজ্ঞ আরও বলেন, সিটি করপোরেশনে বস্তি উন্নয়ন নামে একটি বিভাগ আছে। তারা বস্তি নিয়ে কাজ করেন। তারা এ বিষয়ে খোঁজ-খবর নিয়েছেন কিনা জানি না। তাদের উচিত এই বস্তির নিম্নবিত্ত মানুষের দায়িত্ব নেওয়া। আমাদের মনে রাখতে হবে, পুনর্বাসন ছাড়া বস্তি উচ্ছেদ করা যাবে না।’
২৩ নভেম্বর রাতে রাজধানীর মহাখালীর সাততলা বস্তির আগুনে পুড়ে যায় প্রায় ১০০-১৫০টি ঘর। অধিকাংশই ছিল দোকানপাট। স্থানীয়রা বলছে, দোকান থেকে লাগা আগুন পরে বস্তিতে ছড়িয়ে পড়ে। আগুন নিয়ন্ত্রণে আসার পর ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স অধিদফতরের পরিচালক (অপারেশন) লেফটেন্যান্ট কর্নেল জিল্লুর রহমান বলেন, হতাহতের কোনও খবর পাওয়া যায়নি। আগুনে ৫০ থেকে ৬০টির মতো ঘর পুড়ে গেছে। আগুন লাগার ঘটনায় একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হবে। পরদিন ২৪ নভেম্বর বিকেলে রাজধানীর মোহাম্মদপুর বাবর রোডের বিহারি পট্টিতে আগুন লাগে। তার পরের দিন শেষ রাতে মিরপুরের কালশী বাসস্ট্যান্ড সংলগ্ন বাউনিয়াবাদ বস্তিতেও আগুন লাগে। এসব আগুনে আহত হয়েছে দু’জন। ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে মালামাল ভরা দোকানগুলো। সাততলা বস্তিতে বাস করা পিরোজপুরের জাহাঙ্গীর আলমের হাঁড়ি-পাতিলের দোকান পুড়ে যায়। ১৫ বছর আগে বিয়ের পর অভাব অনটনের কারণে স্ত্রীকে নিয়ে জাহাঙ্গীর চলে আসেন ঢাকায়। ঢাকায় এসে প্রথম জায়গা মেলে মহাখালীর কড়াইল বস্তিতে। একমাস পর সাততলা এই বস্তিতে একটি দোকান দেন। ১০০০ টাকার পুঁজিতে গড়ে তোলা সেই দোকান গত ১২ বছরে প্রায় ১৫ লাখ টাকায় দাঁড়ায়। এক যুগে তিলে তিলে গড়া সেই দোকান একঘণ্টায় ছাই হয়ে যায়। জাহাঙ্গীরের মতো এমন আরও অনেকেরই জীবনভর গড়ে তোলা সঞ্চয় রাতারাতি উবে যায় আগুনে।