অর্থনীতি সচল রাখতে ডিজিটাল মার্কেট প্লেস চালুর পরামর্শ

0

লোকসমাজ ডেস্ক॥ জলবায়ু পরিবর্তনজনিত কারণে নিয়মিত প্রাকৃতিক দুর্যোগের মোকাবেলা করতে হচ্ছে বাংলাদেশ ও জ্যামাইকার মতো উপকূলীয় দেশগুলোকে। তার ওপর কভিড-১৯-এর প্রাদুর্ভাব পরিস্থিতি আরো জটিল করে তুলেছে। বৈশ্বিক এ মহামারীর কারণে বিপাকে পড়েছে পর্যটননির্ভর প্রশান্ত মহাসাগরীয় দেশগুলোও। এজন্য কভিড-১৯ ও বৈশ্বিক উষ্ণায়নের মতো প্রতিকূলতা মোকাবেলা করে অর্থনীতি সচল রাখতে কমনওয়েলথভুক্ত দেশগুলো ডিজিটাল গ্রিন টেকনোলজি ইনফরমেশন হাব ও ডিজিটাল মার্কেট প্লেস চালুর মতো উদ্যোগ নিতে পারে বলে মনে করছেন খাতসংশ্লিষ্টরা।
গত সোমবার রাতে ভার্চুয়াল প্লাটফর্মে আয়োজিত ‘টুওয়ার্ডস আ গ্রিন অ্যান্ড রিজিলিয়েন্ট বিজনেস রিকভারি’ শীর্ষক সেশনের আলোচনায় অংশ নিয়ে বক্তারা এমন অভিমত ব্যক্ত করেন। কমনওয়েলথের বিটুবি কানেক্টিভিটি ক্লাস্টারের অংশ হিসেবে ‘কানেক্টিং দ্য কমনওয়েলথ প্রাইভেট সেক্টর ফর আ ডিজিটাল অ্যান্ড গ্রিন রিকভারি’ শীর্ষক ওয়েবিনারের অংশ হিসেবে এ সেশনের আয়োজন করা হয়। বাংলাদেশ সরকারের সহযোগিতায় ওয়েবিনারটি আয়োজন করে কমনওয়েলথ সেক্রেটারিয়েট। কমনওয়েলথভুক্ত দেশগুলোর মধ্যে বাণিজ্য ও বিনিয়োগ বাড়ানোর লক্ষ্যে সেরকারি খাতগুলোর মধ্যে সরাসরি আলোচনার সুযোগ সৃষ্টি এবং অগ্রাধিকার খাতগুলো চিহ্নিতকরণের জন্য প্রয়োজনীয় কার্যক্রম গ্রহণের লক্ষ্যে এ আয়োজন করা হয়।
‘টুওয়ার্ডস আ গ্রিন অ্যান্ড রিজিলিয়েন্ট বিজনেস রিকভারি’ বিষয়ক সেশনটি সঞ্চালনা করেন ফেডারেশন অব বাংলাদেশ চেম্বারস অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজের (এফবিসিসিআই) সভাপতি শেখ ফজলে ফাহিম। সেশনে পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম, প্যাসিফিক আইল্যান্ড প্রাইভেট সেক্টর অ্যাসোসিয়েশনের চেয়ারম্যান স্টিফেন লিয়ন, জ্যামাইকার ইকোনমিক গ্রোথ অ্যান্ড জব ক্রিয়েশন মিনিস্টার আওবিন হিল এবং কমনওয়েলথ এন্টারপ্রাইজ ও বিনিয়োগ কাউন্সিলের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা সামান্থা কোহেন সিভিও এ সেশন আলোচনায় অংশ নেন।
মূল ওয়েবিনারটি সঞ্চালনা করেন যুক্তরাজ্যে নিযুক্ত বাংলাদেশের হাইকমিশনার সাইদা মুনা তাসনীম। অনুষ্ঠানে বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি, প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান, যুক্তরাজ্যের রফতানিবিষয়ক মন্ত্রী গ্রাহাম স্টুয়ার্ট, মালয়েশিয়ার যোগাযোগ ও মাল্টিমিডিয়াবিষয়ক মন্ত্রী দাতো সাইফুদ্দিন আবদুল্লাহ, ফেডারেশন অব ইন্ডিয়ান চেম্বারস অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির প্রেসিডেন্ট সঙ্গীতা রেড্ডিসহ বিভিন্ন দেশের মন্ত্রী, ব্যবসায়ী ও গণ্যমান্যরা অংশ নেন।
সেশনটির আলোচনায় ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের প্রাণবন্ত এবং টেকসই মডেল রুপান্তর এবং এই প্রক্রিয়ায় সরকারের সহায়তার বিষয়টি উঠে আসে। এছাড়া বেসরকারি খাতের পরিবেশবান্ধব পুনরুদ্ধার প্রক্রিয়ায় কমনওয়েলথের ভূমিকা নিয়েও আলোচনা হয়।
সেশনের শুরুতে এফবিসিসিআই সভাপতি শেখ ফজলে ফাহিম চলতি বছর আমাদের জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবাষির্কী উদযাপনের প্রসঙ্গ টেনে বলেন, পারস্পরিক সহযোগিতাই ছিল তার নেতৃত্বের ভিত্তি, যা কমনওয়েলথও অনুসরণ করে।
বাংলাদেশ গৃহস্থালী পর্যায়ে সৌর বিদ্যুৎ ব্যবহারে নেতৃত্ব স্থানীয় অবস্থানে আছে উল্লেখ করে তিনি আরো বলেন, সামপ্রতিক সময়ে আমরা কভিড-১৯ ছাড়াও বন্যা ও ঘূর্ণিঝড়ের ক্ষতি বেশ ভালভাবেই মোকাবেলা করেছি। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে ১ হাজার ২১০ কোটি ডলারের প্রণোদনা প্যাকেজের সহায়তায় আমাদের অর্থনীতি ৫ দশমিক ২৪ জিডিপি প্রবৃদ্ধিসহ কভিড-১৯ এর ধাক্কা সামলে উঠেছে। ২০২১ ও ২০২২ সালে আমরা কভিড-পূর্ব উন্নয়নের ধারায় ফিরে আসার পরিকল্পনা করছি।
এফবিসিসিআই সভাপতি বলেন, কভিড-১৯ দ্বারা মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্ত খাতের মধ্যে প্রথম দিকেই রয়েছে পর্যটন ও বিমান খাত। এ ক্ষতি মোকাবেলায় বাংলাদেশ অর্থ সরবরাহ স্বাভাবিক রাখাসহ নানা পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে।
মূল ওয়েবিনারের আলোচনায় বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে ডিজিটালাইজেশনে বাংলাদেশ দ্রুত এগিয়ে যাচ্ছে। বাংলাদেশের অর্থনীতিতে ডিজিটাল সুবিধা গুনরুত্বপূর্ণ অবদান রাখছে। একারণে বাংলাদেশের অর্থনীতে ৯৮ ভাগ মোবাইল ব্যাংকিং সুবিধা অবদান রাখছে। ইন্টারনেট সুবিধার আওয়া বাংলাদেশের ৬৫ ভাগ মানুষ কাজ করছে, ডিজিটাল কমার্সের আওতায় এখন এক বিলিয়ন মার্কিন ডলারের বেশি বাণিজ্য হচ্ছে। ই-কমার্সের মধ্যে অর্ধেক কাজ করছে বাংলাদেশের মহিলারা। কভিড-১৯ এর কঠিন অবস্থাতেও বাংলাদেশের ইকোনমিক গ্রোথ ৫ দশমিক ২৪ ভাগ। এটা এশিয়ার মধ্যে সবচেয়ে বেশি।
এ সময় বাণিজ্যমন্ত্রী কমনওয়েলথ বিটুবি ডিজিটাল কানেকটিভিটি হাব গ্রহণ, কমনওয়েলথ বিটুবি ডিজিটাল মার্কেট প্লেস সৃষ্টি, ভার্চুয়াল ট্রেইনিং অ্যান্ড কেপাসিটি বিল্ডিং প্রোগ্রাম গ্রহণ, কমনওয়েলথ ট্রেড অ্যান্ড ক্লাইমেট চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় ক্ষয়-ক্ষতি কাটিয়ে উঠার পদক্ষেপ গ্রহণ করার প্রস্তাব পেশ করেন এবং বলেন এজন্য কমনওয়েলথকে দীর্ঘমেয়াদি কাজ করতে ওয়ার্কিং গ্রুপ গঠন করতে হবে।
সেশনটিতে অংশ নিয়ে পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম বলেন, ডিজিটাল প্রযুক্তি ব্যবহারের সুবাদে আমরা অনেক কিছু অর্জন করেছি। তিনি কমনওয়েলথের অধীন ডিজিটাল গ্রিন টেকনোলজি ইনফরমেশন হাব চালুর সুপারিশ করেন। প্রতিমন্ত্রী বলেন, কভিড পরবর্তী নিউ নরমালে স্থিতিশীল, নিরাপদ ও সমৃদ্ধ ভবিষ্যত নিশ্চিতে আমাদের আগের চেয়ে আরো বেশি ডিজিটালাইজ করা, ঐক্যবদ্ধ হওয়া ও পারস্পরিক সহযোগিতার প্রয়োজন আছে।
প্রতিমন্ত্রী বলেন, আমরা পশ্চিমা দেশগুলোয় কভিডের দ্বিতীয় ঢেউ নিয়ে উদ্বিগ্ন। আমাদের দেশে কভিড সংক্রমণ ও মৃত্যুহার কম হলেও আমরা যেসব দেশে পণ্য বিক্রি করি, সেসব দেশের পরিস্থিতি নিয়ে চিন্তিত।
আওবিন হিল বলেন, জলবায়ু পরিবর্তনজনিত ক্ষতি ও কভিড-১৯ মিলে মারাত্মক পরিস্থিতি তৈরি করেছে। এসময়ে ই-কমাসের্র চাহিদা উল্লেখযোগ্যভাবে বেড়েছে। জ্যামাইকানরা অনলাইননির্ভর ব্যবসায় বেশি গুরুত্ব দিচ্ছে।স্টিফেন লিয়ন বলেন, প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের অনেক দেশের জন্য পর্যটন বৈদেশিক মুদ্রা আয়ের প্রধান খাত। কভিড-১৯ এর কারণে পর্যটন ভেস্তে গেছে। এতে আমরা রাজস্ব বঞ্চিত হচ্ছি।
সামান্থা কোহেন সিভিও বলেন, যুক্তরাজ্যে কিছু একটা ঘটলে, তার প্রভাব বাংলাদেশেও পড়ে। আমি মনে করি ডিজিটাল মার্কেট প্লেস তৈরি সবার জন্য উপকারী হবে। কারণ এটা টেকসই ব্যবসায়িক পরিবেশ তৈরি করে।