স্কুলে ভর্তি নিয়ে উদ্বেগ অভিভাবকদের

0

লোকসমাজ ডেস্ক॥ করোনার প্রভাবে বন্ধ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি কার্যক্রম নিয়ে তোড়জোড় শুরু হয়েছে। কিন্তু সামনে আসছে বিভিন্ন স্কুলের ভর্তি কার্যক্রম। অভিভাবকরা ইতিমধ্যে সুনির্দিষ্ট কোনো ঘোষণা না আসায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। এ ছাড়াও নির্দেশনা আসার আগেই বেশকিছু শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ভর্তির বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করেছে। অভিভাবকদের উদ্বেগ দূর করতে আজ বুধবার ভর্তির বিষয়ে সিদ্ধান্ত জানানোর কথা রয়েছে। সিদ্ধান্ত জানাতে সংবাদ সম্মেলন ডেকেছেন শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি। করোনার আগের বর্ষগুলোতে প্রথম শ্রেণির ভর্তি কার্যক্রম লটারির মাধ্যমে করা হতো। আর লিখিত পরীক্ষা নেয়া হতো দ্বিতীয়, তৃতীয়, চতুর্থ, পঞ্চম, সপ্তম ও অষ্টম শ্রেণিতে। ষষ্ঠ ও নবম শ্রেণির ভর্তি পিইসি ও জেএসসি’র ফলের ভিত্তিতে নেয়া হতো।
সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষার বিষয়ে গত ১৪ই অক্টোবর বৈঠকে বসে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা (মাউশি) অধিদপ্তর। সেখানে ভর্তি পরীক্ষার বিষয়ে চারটি সম্ভাব্য উপায় নিয়ে আলোচনা হয়। এগুলো হচ্ছে- করোনা পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে স্বশরীরে পরীক্ষা নেয়া হবে। এটি সম্ভব না হলে অনলাইনে পরীক্ষা নেয়া হবে। এ সবের পাশাপাশি দু’টি বিকল্প উপায়ের কথা বলা হয়। এগুলো হলে শিক্ষার্থীদের সর্বশেষ মূল্যায়নের ভিত্তিতে ভর্তি ও লটারির মাধ্যমে ভর্তি। এরপর আরেকটি বৈঠক শেষে দু’টি পরিকল্পনার কথা বলা হয়। এগুলো হলো- ভর্তি পরীক্ষার পরিবর্তে প্রতিটি শ্রেণিতেই শূন্য আসনের বিপরীতে লটারির মাধ্যমে পরীক্ষা নেয়া ও স্বাস্থ্যবিধি মেনে পরীক্ষা নেয়া। সেক্ষেত্রে বাড়ানো হবে পরীক্ষার ভেন্যু। এ দু’টি প্রস্তাব শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। তাদের অনুমোদনের ভিত্তিতেই নির্ধারিত হবে ভর্তি প্রক্রিয়া। এছাড়াও মাউশি থেকে জানানো যায়, সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সঙ্গে মিল রেখেই বেসরকারি বিদ্যালয়ের ভর্তি নীতিমালা করা হবে। এখনো ভর্তি কার্যক্রমের বিষয়ে সিদ্ধান্ত না জানানো হলেও বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করেছে অনেক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। ২৭শে অক্টোবর ভর্তি বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করেছে ঢাকা রেসিডেনসিয়াল মডেল কলেজ। তারা তৃতীয়, ষষ্ঠ ও নবম শ্রেণিতে ৩রা নভেম্বর থেকে ১০ই ডিসেম্বর পর্যন্ত অনলাইনে আবেদনের সুযোগ দিয়েছে। আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজ, মতিঝিলে আবেদন শুরু হয় ৯ই নভেম্বর থেকে। যা চলে ১৮ই নভেম্বর পর্যন্ত। তাদের প্রথম শ্রেণির লটারি শুরু হবে ৬ ও ৭ই ডিসেম্বর। আর ভর্তি পরীক্ষার সম্ভাব্য তারিখ বলা হয়েছে ১০, ১১ ও ১২ই ডিসেম্বর। হলিক্রস স্কুল অ্যান্ড কলেজে ফরম দেয়া হয় ৭ থেকে ১৪ই নভেম্বর পর্যন্ত। আর ফরম জমা দেয়ার সময় দেয়া হয় ২১ থেকে ২৫শে নভেম্বর পর্যন্ত।
এছাড়াও এই তালিকায় রয়েছে উদয়ন স্কুল অ্যান্ড কলেজ, মণিপুর স্কুল অ্যান্ড কলেজ, মোহাম্মদপুর প্রি-পারেটরি স্কুল অ্যান্ড কলেজ, সিভিল এভিয়েশন স্কুল অ্যান্ড কলেজ তেজগাঁও, সামসুল হক খান স্কুল অ্যান্ড কলেজ ডেমরা, ইঞ্জিনিয়ারিং ইউনির্ভাসিটি স্কুল অ্যান্ড কলেজ ঢাকা, বীর শ্রেষ্ঠ মুন্সী আবদুর রউফ স্কুল অ্যান্ড কলেজ, আদমজী ক্যান্টনমেন্ট পাবলিক স্কুল, শেখ রাসেল ক্যান্টনমেন্ট পাবলিক স্কুল অ্যান্ড কলেজ, সিডিএ গার্লস স্কুল অ্যান্ড কলেজসহ অনেক প্রতিষ্ঠান। এ বিষয়ে জানতে চাইলে মাউশি মহাপরিচালক অধ্যাপক গোলাম ফারুক বলেন, বেসরকারি বিদ্যালয়ে ভর্তি নীতিমালা চূড়ান্ত করতে কাজ শুরু হয়েছে। দ্রুত সময়ের মধ্যে তা প্রকাশ করা হবে। বর্তমান পরিস্থিতিতে প্রথম থেকে অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত কোন পদ্ধতিতে ভর্তি নেয়া হবে, সে বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিয়ে এ নীতিমালা জারি করা হবে। তিনি বলেন, নীতিমালা জারির আগে কেউ ভর্তি বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করতে পারবে না। বিধি-বহির্ভূতভাবে কেউ এমনটি করলে তার বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেয়া হবে। শাস্তিস্বরূপ এমপিও বাতিল, পাঠদান অনুমোদন ও পাঠদান স্বীকৃতি বাতিলের মতো সিদ্ধান্ত নেয়া হতে পারে।
জানা যায়, ১লা ডিসেম্বর থেকে অনলাইনে ভর্তি নেয়ার আবেদন শুরু করার পরিকল্পনা রয়েছে অধিদপ্তরের। রাজধানীতে ৪২টি সরকারি স্কুল রয়েছে। ১৪টি বিদ্যালয়ে প্রথম শ্রেণিতে ভর্তি করানো হবে। রাজধানীর প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ক, খ ও গ এই গুচ্ছে ভাগ করা হবে। পূর্বে একটি গুচ্ছে পছন্দ দেয়ার সুযোগ পেলেও এবার ৫টি স্কুল পছন্দ দেবার সুযোগ পাবে ভর্তিচ্ছুরা। আর রাজধানীর বাইরে করোনার কারণে এক জায়গা থেকে অন্য স্থানে চলে যাওয়া প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের যেকোনো সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ভর্তি নিতে নির্দেশ দিয়েছে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর (ডিপিই)। গত ১৬ই নভেম্বর সোমবার এই নির্দেশনা দেশের সব জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা ও বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকদের কাছে পাঠানো হয়েছে। আর এদিকে প্রাথমিকের উর্ত্তীর্ণের প্রক্রিয়া জানিয়েছে কর্তৃপক্ষ। এতে বলা বলা হয়েছে, প্রাথমিকে থাকছে না অ্যাসাইনমেন্ট। একই রোল নিয়ে পরবর্তী ক্লাসে যাবে। আর যেসব প্রতিষ্ঠানে শিক্ষা কার্যক্রম চালানো হয়েছে, সেগুলোর ভিত্তিতে স্ব স্ব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষক কর্তৃক শিক্ষার্থীদের মূল্যায়ন করা হবে বলে একটি বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়।