ছেলের ছবি নিয়ে কেঁদেই চলেছেন মা

0

স্টাফ রিপোর্টার॥ এখনো কেঁদে চলেছেন মা রেহেনা বেগম। কোনো কিছুতেই থামানো যাচ্ছে না তাকে। ছেলের সার্টিফিকেট, চাকরির কাগজপত্র, বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনের দেয়া রেফারি সনদ ও ছবি বুকে জড়িয়ে থেমে থেমে চিৎকার দিয়ে কেঁদে উঠছেন। কোনো সান্তনা স্বপ্নভাঙা মায়ের আহাজারি থামাতে পারছে না। তার চিৎকার আর বুকফাঁটা আর্তনাদে আকাশ-বাতাস ভারি হয়ে উঠছে। সান্তনা দেয়া মানুষগুলোও নীরবে অশ্রু ফেলচ্ছে। ফুটবল ফেডারেশনের প্রতিভাবান রেফারি মবিনুর রহমান নয়ন। সম্প্রতি যশোরের ঝিকরগাছা-বাঁকড়া আবুল ইসলাম সড়কের বল্লা এলাকায় মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় নিহত হয় নয়ন। ছেলের এভাবে চলে যাওয়া কোনোভাবেই মেনে নিতে পারছেন না মা রেহেনা বেগম।
ক’দিন বাদেই যার সেনা সদস্য হিসেবে যোগদান করার কথা সেই নয়ন চিরদিনের জন্য বিদায় নিয়েছেন। যাকে নিয়ে অন্যের বাড়িতে কাজ করা মায়ের স্বপ্ন ছিল অনেক। উপজেলার বারাকপুর মাদরাসা মাঠে ফুটবল টুর্নামেন্টের ফাইনাল খেলা দেখার জন্য মায়ের কাছ থেকে বিদায় নিয়ে এসেছিল। সেই খেলা দেখা আর হয়নি। বাড়িতে ফিরে আসে লাশ হয়ে। নিহত মবিনুর রহমান নয়ন বাঁকড়া গ্রামের সামছুর রহমানের ছেলে। তিনি বাঁকড়া বাজারে মায়ের সাথে একটি ভাড়া বাড়িতে বসবাস করতেন।
মবিনুর রহমান নয়নের মা রেহেনা বেগম জানান, নয়নের বয়স যখন দুই বছর তখন তার বাবা সামছুর রহমান তাকে তালাক দিয়ে বাড়ি থেকে বের করে দেয়। তারপরে বালিয়াডাঙ্গা গ্রামে বাবার বাড়ি ও পরে বাঁকড়া বাজারের বিভিন্ন জায়গায় ভাড়া থেকেছেন। শিশু সন্তান নয়নকে নিয়ে লোকের বাড়িতে আশ্রয়ী থেকেছেন। অন্যের বাড়িতে ঝিয়ের কাজ, মাঠের কাজ, বিচালী কাটাসহ বিভিন্ন কাজ করেছেন। ছেলের জন্য লোকের কাছে থেকে ভাত চেয়ে খাওয়াছেন। ছেলেকে লেখাপড়া শেখাচ্ছিলেন। বাঁকড়া ডিগ্রি কলেজে একাদশ শ্রেণির ২য় বর্ষে পড়ছিল সে। রেফারি কোর্স করেছে। সেনাবাহিনীতে চাকরি পেয়েছে। ১৫ দিন পরে চাকরিতে যোগদান করবে। বড় লক্ষী ছেলে ছিল নয়ন। যে কাজে গিয়েছে, সব জায়গায় সফলতা পেয়েছে। কথাগুলো বলার সময় নয়নের মা রেহেনা বেগমের কান্নার বাঁধ থামছিল না। কাঁদতে কাঁদতে নিজের কষ্ট আর ছেলে বড় করার কথা শোনাচ্ছিলেন। এদিকে মবিনুর রহমান নয়নের অকাল মৃত্যুতে ক্রীড়াঙ্গনসহ এলাকাজুড়ে শোকের ছায়া নেমে এসেছে।