ফের সেশনজটে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়, শিক্ষার্থীরা চান অটোপাস

0

লোকসমাজ ডেস্ক বছরের পর বছর অনেক চেষ্টায় সেশনজট কাটিয়ে ওঠার পর করোনার কারণে আবারও সেশনজটে ফিরেছে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়। এই পরিস্থিতি থেকে পরিত্রাণ পেতে সব বর্ষের অনার্সের শিক্ষার্থীরা অটোপাস চাচ্ছেন। তবে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ শিক্ষার্থীদের দাবি মানতে নারাজ। ফলে প্রায় এক বছরের সেশনজটে পড়ছেন শিক্ষার্থীরা। করোনা মহামারি শুরুর আগে অনার্স চতুর্থ বর্ষের ফাইনালের পাঁচটি বিষয়ে পরীক্ষার নেওয়ার পর পুরো শিক্ষা কার্যক্রম বন্ধ করে দেওয়া হয়। অপরদিকে প্রথম বর্ষ, দ্বিতীয় বর্ষ ও তৃতীয় বর্ষের পরীক্ষাও বন্ধ রয়েছে। করোনা পরিস্থিতি অনুকূলে না এলে পরীক্ষা নেওয়া সম্ভব হবে না বলে জানিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের জনসংযোগ দফতর জানায়, বেশ কয়েক বছর থেকে সেশনজটমুক্তভাবে শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে। কিন্তু করোনার কারণে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় পরীক্ষা ও ক্লাস সবটাই এখন বন্ধ। করোনা পরিস্থিতি শীতে বাড়তে পারে, সে কারণে অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে শিগগিরই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলা নিয়ে। এ অবস্থায় শিক্ষার্থীরা অটোপাস চাচ্ছেন। তবে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ এ বিষয়ে কোনও সিদ্ধান্ত নেয়নি। পরীক্ষা নেওয়ার বিষয়ে আগে যে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল তা-ই রয়েছে।
এদিকে শিক্ষার্থীরা গত দুই মাস ধরে সেশনজট থেকে বাঁচতে অটোপাস চাইছেন বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কাছে। কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. হারুন-অর-রশিদ সাফ জানিয়ে দিয়েছেন যে পরীক্ষা সম্পন্ন না করে অনার্স চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থীদের মূল্যায়নের ভিত্তিতে সনদ দেওয়া হবে না। আর প্রথম বর্ষ থেকে তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থীদের ব্যাপারে কর্তৃপক্ষ এখনও কোনও সিদ্ধান্ত নেয়নি। উপাচার্য অধ্যাপক ড. হারুন-অর-রশিদ শিক্ষার্থীদের দাবির বিষয়ে বলেন, ‘অনার্স চতুর্থ বর্ষের বিজ্ঞানের শিক্ষার্থীদের ৫টি পরীক্ষা হয়েছে। চারটি বিষয়ের পরীক্ষা বাকি আছে। মানবিক, সামাজিক বিজ্ঞান, ব্যবসায় শিক্ষার তিনটি বিষয়ের পরীক্ষা বাকি রয়েছে। এছাড়া বিজ্ঞানের শিক্ষার্থীদের প্র্যাকটিক্যাল পরীক্ষাও বাকি। ওইসব শিক্ষার্থীদের পক্ষ থেকে দাবি উঠেছে—যেসব পরীক্ষা হয়েছে তার ওপর ভিত্তি ফলাফল দিতে হবে। এখানে বিশ্ববিদ্যালয়ের অবস্থান হচ্ছে—অর্ধেক রাস্তায় এসে যদি বলেন পরীক্ষার ফল ঘোষণা করা হোক, তাহলে অসম্পূর্ণ ফল নিয়ে না পারবেন বিদেশের কোনও বিশ্ববিদ্যালয়ে আবেদন করতে। আর চাকরির জন্য আবেদন করলে চাকরিদাতারা জানবেন আপনারা সব বিষয়ে পরীক্ষা দিয়ে উত্তীর্ণ হয়ে আসেননি। তাহলে শিক্ষার্থীদের জন্য এটা হিতে বিপরীত হবে। শিক্ষার্থীদের জন্য পার্মানেন্ট সমস্যা হয়ে দাঁড়াবে। যে কারণে তাদের উদ্দেশ্যে বলেছি—ধৈর্য ধরতে। আমরা অল্প সময়ের মধ্যে বাকি পরীক্ষাগুলো নিয়ে ফলাফল ন্যূনতম সময়ের মধ্যে দেবো।’ কিন্তু শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ছুটি বেড়ে যাওয়া এবং শীতে করোনার প্রকোপ বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কায় শিক্ষার্থীরা উপাচার্যের এই কথায় আস্থা রাখতে পারছেন না। তারা সেশনজটমুক্ত থাকতে চাইছেন অটোপাস। শিক্ষার্থীরা জানান, অনার্স প্রথম বর্ষের ফাইনাল পরীক্ষা হওয়ার কথা ছিল গত আগস্ট-সেপ্টেম্বরে, অনার্স দ্বিতীয় বর্ষের অক্টোবর-নভেম্বরে এবং অনার্স তৃতীয় বর্ষের পরীক্ষা হওয়ার কথা ছিল গত জানুয়ারি-ফেব্রুয়ারিতে। কিন্তু কোভিড-১৯ মহামারির কারণে যথাসময়ে পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়নি। আর করোনার আগে অনার্স ফাইনাল পরীক্ষার পাঁচ বিষয়ে পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়েছে। করোনার শুরুর পর অন্য পরীক্ষা হয়নি।
হবিগঞ্জের বৃন্দাবন সরকারি কলেজের বিবিএ দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী রাজু আহমেদ বলেন, ‘অক্টোবর-নভেম্বরে আমাদের পরীক্ষা হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলছে না। ক্লাসও হচ্ছে না। এ অবস্থায় সেশনজটে যাতে না পড়ি, সে কারণে অটোপাস চাচ্ছি। দ্বিতীয় বর্ষে উত্তীর্ণ হয়ে অনলাইনে ক্লাস শুরু করা হলে আমরা সেশনজটে পড়বো না। এটা না করা হলে এক বছরের সেশনজটে পড়ে যাবো।’ একই কথা বলেন কলেজটির বিবিএ দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী সৈয়েব রানা। জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থী সোহান বলেন, ‘গত আগস্ট-সেপ্টেম্বরে আমাদের পরীক্ষা হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু ক্লাস হয়নি করোনার ছুটির পর থেকেই। কবে ছুটি শেষ হবে তার কোনও ঠিক নেই। এমতাবস্থায় আমরা প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থীরা অটোপাস চাই। কারণ, দুই তিন মাসের মধ্যে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুললেও কয়েক মাস নতুন করে ক্লাস না করালে, বা প্রস্তুতি নেওয়ার সময় না পেলে, পরীক্ষায় ভালো ফল করা কারও পক্ষেই সম্ভব নয়। অথচ আমরা সেশনজটে পড়ে যাচ্ছি। তাই আমাদের বিকল্প ব্যবস্থায় পরবর্তী বর্ষে উত্তীর্ণ করা হোক।