তাজরীন অগ্নিকাণ্ডের ৮ বছর:দেড় বছরে কোনও সাক্ষী হাজির করতে পারেনি রাষ্ট্রপক্ষ

0

লোকসমাজ ডেস্ক॥ ২০১২ সালের ২৪ নভেম্বর তাজরীন গার্মেন্টসে অগ্নিকাণ্ডে ১১১ জন শ্রমিক নিহত হন। দীর্ঘ আট বছরেও মামলাটি নিষ্পত্তি না হওয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন ভুক্তভোগী শ্রমিকরা। এ মামলার বিচার শুরু হওয়ার পর পাঁচ বছরে ১০৪ জন সাক্ষীর মধ্যে মাত্র ৮ জন সাক্ষীকে আদালতে হাজির করেছেন রাষ্ট্রপক্ষ। আর গত দেড় বছরেরও বেশি সময় ধরে আদালতে কোনও সাক্ষীকেই হাজির করতে পারেনি রাষ্ট্রপক্ষ। কবে নাগাদ মামলাটির বিচার প্রক্রিয়া শেষ হবে তাও সঠিক করে বলতে পারছেন না কেউ। তবে তাজরীনের ঘটনায় আহত শ্রমিকদের দাবি— খুব দ্রুত যেন মামলাটি নিষ্পত্তি হয় এবং আসামিদেরও যেন দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি হয়।
আশুলিয়ার তাজরীন গার্মেন্টসের আহত শ্রমিকরা সেই দুঃসহ ঘটনার কথা মনে পড়লে আজও আঁতকে ওঠেন। আহত শতাধিক শ্রমিক আজও বয়ে বেড়াচ্ছেন ভয়াবহ সেই স্মৃতি। অনেকেই আর ফিরতে পারেননি স্বাভাবিক জীবনে। কাজও জোটেনি কারও কারও। দুর্ঘটনা থেকে বেঁচে যাওয়া দুই শ্রমিক জরিনা ও রেহেনার সঙ্গে কথা হয় এই প্রতিবেদকের। তারা বলেন, ‘ওই দিন আগুন থেকে নিজেকে বাঁচাতে চার তলা থেকে লাফ দেওয়ায় হাত-পা ও মেরুদণ্ডের হাড় ভেঙে গিয়ে পঙ্গু হয়ে যাই। এখনও পর্যন্ত স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে পারিনি। কোনও ক্ষতিপূরণও পাইনি। আমরা চাই, আসামিদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি হোক।’ তাজরীন গার্মেন্টসে অগ্নিকাণ্ডের পর দিন পুলিশের উপ-পরিদর্শক খায়রুল ইসলাম আশুলিয়া থানায় মামলা দায়ের করেন। মামলা দায়েরের ১১ মাসের মাথায় ২০১৩ সালের ২২ ডিসেম্বর পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগের (সিআইডি) পরিদর্শক একেএম মহসিনুজ্জামান খান আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করেন। এরপর ২০১৫ সালের ৩ সেপ্টেম্বর আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরু করেন আদালত।
আদালত সূত্রে জানা যায়,মামলাটির বিচার শুরুর পাঁচ বছর ২ মাসে রাষ্ট্রপক্ষ ১০৪ জন সাক্ষীর মধ্যে মাত্র ৮ জন সাক্ষীর সাক্ষ্যগ্রহণ সম্পন্ন করতে পেরেছেন। এরপর গত ২০ মাসেরও (১ বছর ৮ মাস) বেশি সময়ে আদালতে কোনও সাক্ষী হাজির করতে পারেনি রাষ্ট্রপক্ষ। সর্বশেষ গত বছরের ৭ মার্চ আবির হোসেন নামে এক ব্যক্তির সাক্ষ্যগ্রহণ করেন আদালত। গত ১৫ অক্টোবর মামলাটির সাক্ষ্যগ্রহণের দিন ধার্য ছিল। কিন্তু ওইদিন সাক্ষ্যগ্রহণ না হওয়ায় পরবর্তী সাক্ষ্যগ্রহণের জন্য আগামী ১৩ জানুয়ারি দিন ধার্য করেন আদালত। মামলাটি বর্তমানে ঢাকার প্রথম অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ আদালতে বিচারাধীন রয়েছে। তাজরীন গার্মেন্টসের মালিক দেলোয়ার হোসেন ও চেয়ারম্যান মাহমুদা আক্তারের আইনজীবী এটিএম গোলাম গাউস বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘আসলে এ মামলার বিচার দ্রুত শেষ হোক তা আমরাও চাই। কেন যে শেষ হচ্ছে না, সেটা আমরাও জানি না। আমরা আসামিপক্ষও সাফারিং হচ্ছি। মামলাটা শেষ না হওয়ায় আমাদের (মালিকের) ব্যবসা-বাণিজ্যের ক্ষতি হচ্ছে। আমরা ব্যবসার পারপাসে বিদেশেও যেতে পারছি না। আমরাও চাই মামলাটি যেন দ্রুত নিষ্পত্তি হয়।’ অপরদিকে রাষ্ট্রপক্ষে ঢাকা জেলা ও দায়রা জজ আদালতের পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) আব্দুল মান্নান খান বলেন, ‘তাজরীন ফ্যাশনসে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় দায়ের করা মামলাটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। মামলার অভিযোগপত্রে অধিকাংশ সাক্ষীর বর্তমান ঠিকানা দেওয়া হয়েছে। কিন্তু বর্তমান ঠিকানায় গিয়ে অনেককেই খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। যেসব সাক্ষীর স্থায়ী ঠিকানা দেওয়া হয়েছে, তারা সঠিকভাবে আদালতের সমনও পাচ্ছেন না। আমরা আশা করছি, পরবর্তী তারিখ থেকে সর্ট ধার্য তারিখ নিয়ে গুরুত্বপূর্ণ সাক্ষীদের সাক্ষ্যগ্রহণের মাধ্যমে মামলাটি নিষ্পত্তি করতে।’ এ মামলার অভিযুক্ত আসামিরা হলেন— তাজরীন গার্মেন্টসের মালিক দেলোয়ার হোসেন, চেয়ারম্যান মাহমুদা আক্তার, লোডার শামীম, স্টোর ইনচার্জ (সুতা) আল আমিন, সিকিউরিটি ইনচার্জ আনিসুর রহমান, সিকিউরিটি সুপার ভাইজার আল আমিন, স্টোর ইনচার্জ হামিদুল ইসলাম লাভলু, অ্যাডমিন অফিসার দুলাল উদ্দিন, প্রকৌশলী এম মাহবুবুল মোর্শেদ, সিকিউরিটি গার্ড রানা ওরফে আনোয়ারুল, ফ্যাক্টরি ম্যানেজার আব্দুর রাজ্জাক, প্রোডাকশন ম্যানেজার মোবারক হোসেন মঞ্জু ও শহীদুজ্জামান দুলাল। অভিযুক্ত আসামিদের মধ্যে পলাতক রয়েছেন— আল আমিন,শামিম মিয়া, রানা, শহিদুজ্জামান দুলাল ও মোবারক হোসেন মঞ্জু। বাকিরা সবাই জামিন আছেন। মামলার অভিযোগপত্রে বলা হয়, ভবনটির নকশায় ত্রুটি ছিল। ভবনে জরুরি নির্গমনের পথ ছিল না। উপরন্তু, আগুন লাগার পর শ্রমিকরা বাইরে বের হতে চাইলে নিরাপত্তা কর্মীরা অগ্নিকাণ্ডকে অগ্নিনির্বাপন মহড়া বলে শ্রমিকদের কাজে ফেরত পাঠিয়ে কলাপসিবল গেট লাগিয়ে দেয়। ফলে আগুন ছড়িয়ে পড়ে এবং ভয়াবহ দুর্ঘটনার শিকার হন শ্রমিকরা।