বাইডেনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ব্লিংকেন : তার পরিচয় তাদের পররাষ্ট্রনীতি

0

লোকসমাজ ডেস্ক॥ যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত জো বাইডেন শপথ নেবেন আগামী বছরের ২০শে জানুয়ারি। বসে না থেকে দেশ পরিচালনায় নিজের পছন্দমতো প্রশাসন সাজাতে কাজ শুরু করে দিয়েছেন তিনি। পররাষ্ট্রমন্ত্রী পদটি এর মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বাইডেনের ঘনিষ্ঠ কারো বরাত দিয়ে রয়টার্স, ব্লুমবার্গ, নিউ ইয়র্ক টাইমস জানায়, এ পদ পেতে যাচ্ছেন ‘কূটনীতিকদের কূটনীতি’ বলে পরিচিত ৫৮ বছর বয়সী অ্যান্টনি জন ব্লিংকেন। ওয়াশিংটন পোস্ট বিষয়টি ইতিমধ্যে নিশ্চিত করেছে। আজ মঙ্গলবার এ ঘোষণা আসতে পারে। বাইডেনের ট্রানজিশন টিম এবং ব্লিংকেন অবশ্য এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি। ক্লিনটনের আমলে ‘স্পিচ রাইটার’ হিসেবে হোয়াইট হাউসে প্রথম পদচারণা ব্লিংকেনের। ছিলেন ক্লিনটনের বিশেষ সহকারী। ওবামার আমলে ডেপুটি সেক্রেটারি অব স্টেট তথা মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের দ্বিতীয় শীর্ষ কর্তাব্যক্তি হিসেবে (২০১৫-২০১৭) কাজ করেছেন ব্লিংকেন। এর ঠিক আগে তিনি উপ-জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা (২০১৩-২০১৫) ছিলেন।
বাইডেনের সঙ্গে ব্লিংকেনের সম্পর্কটা বেশ পুরনো, সময়ের পরীক্ষায় উত্তীর্ণ। তখনকার ভাইস প্রেসিডেন্ট বাইডেনের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা ছিলেন টানা চার বছর (২০০৯-২০১৩)। এবার বাইডেনের নির্বাচনী প্রচারণায় অন্যতম উপদেষ্টা হিসেবে কাজ করেছেন। এসবের অনেক আগে, ২০০২ সালে তিনি সিনেটে বাইডেনের প্রধান পররাষ্ট্র উপদেষ্টা হিসেবে যোগ দিয়েছিলেন। পররাষ্ট্রমন্ত্রী হলে বিভিন্ন দেশ বা অঞ্চলের প্রতি ব্লিংকেনের মনোভাব এবং নীতি কি হতে পারে- এ নিয়ে আগ্রহ সারা বিশ্বের। তাই বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন দেশ সম্পর্কে ব্লিংকেনের করা মন্তব্যগুলো ঘিরে সংবাদ মাধ্যমগুলোতে চলছে চুলচেরা বিশ্লেষণ। সিএনএন’র এক বিশ্লেষণে বলা হয়েছে, ব্লিংকেনকে বিশ্বজুড়ে যুক্তরাষ্ট্রের ঘনিষ্ঠ মিত্রদের সঙ্গে সম্পর্ক পুনরুদ্ধারের দায়িত্ব দেয়া হবে, যাদের অনেকের সঙ্গে প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্পের আমলে তিক্ততা হয়েছে। নিউ ইয়র্ক টাইমস ব্লিংকেনকে ‘বৈশ্বিক জোটের রক্ষাকারী’ বলে অভিহিত করে লিখেছে মনোনীত হলে তিনি চীনের সঙ্গে নতুন প্রতিযোগিতায় সন্দিহান আন্তর্জাতিক অংশীদারদের একত্রিত করার চেষ্টা করবেন।
প্রসঙ্গত, বিশ্বে যুক্তরাষ্ট্রের সক্রিয় নেতৃত্বের ভূমিকা নেয়ার পক্ষে ব্লিংকেন। তা না হলে চীনের মতো প্রতিপক্ষ দেশ সে ভূমিকা নিয়ে নেবে বলে অনেকবার মন্তব্য করেছেন ব্লিংকেন। অন্যদিকে ডনের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, গেল আগস্টে ওয়াশিংটনের হাডসন ইনস্টিটিউটে ‘যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রনীতি’ শীর্ষক এক সংলাপে ব্লিংকেন বলেন, প্রেসিডেন্ট হিসেবে বাইডেন ভারতের নিকট কাশ্মীর ইস্যু উত্থাপন করবেন। এক পর্যায়ে তিনি বলেন, ‘ভারত সরকার যে কয়েকটি পদক্ষেপ নিয়েছে তা নিয়ে আমাদের স্পষ্টতই এখন চ্যালেঞ্জ এবং প্রকৃতপক্ষে উদ্বেগ রয়েছে, বিশেষত কাশ্মীরে আন্দোলন ও বাকস্বাধীনতার বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ নেয়ার বিষয়ে এবং নাগরিকত্ব সম্পর্কিত কিছু আইন সম্পর্কে।’ হিন্দুস্তান টাইমস অবশ্য ব্লিংকেন যুক্তরাষ্ট্র-ভারত সম্পর্কের ক্ষেত্রে ইতিবাচক হবেন আশা রেখে সংবাদ শিরোনাম করেছে। এদিকে ইরানের সঙ্গে করা পরমাণু চুক্তিতে পুনরায় যোগ দেয়ার ইঙ্গিত দিয়ে ব্লিংকেন বলেছিলেন, বাইডেন প্রশাসন ইরানের উপর ট্রাম্প প্রশাসনের নীতি এড়িয়ে চলবে, যা বিশ্বকে যুদ্ধের দ্বারপ্রান্তে নিয়ে এসেছে। ইহুদী পিতা-মাতার ঘরে জন্মলাভ করা ব্লিংকেন অনেকের কাছে ‘টনি ব্লিংকেন’ নামেও পরিচিত। তার স্ত্রী ইভান রায়ান ওবামার আমলে টানা চার বছর (২০১৩-২০১৭) শিক্ষা ও সংস্কৃতি বিষয়ক প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেছেন। এর আগে জো বাইডেনের অধীনেও কাজ করার অভিজ্ঞতা রয়েছে রায়ানের। তাই বাইডেনের প্রশাসনে রায়ানও বড় দায়িত্ব পেতে পারেন বলে জোর গুঞ্জন রয়েছে।