খুলনার এইচএসটিটিআইর উপপরিচালকের বিরুদ্ধে দুর্নীতির নানা অভিযোগ

0

ফুলবাড়ীগেট(খুলনা) সংবাদদাতা ॥ খুলনার এইচএসটিটিআইর উপপরিচালক ও বিশেষ ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (মউশি) প্রফেসর ড. শেখ মোহতাশামুল হক মারুফের বিরুদ্ধে একের পর এক অনিয়ম-দুর্নীতি, অনৈতিক সুবিধা গ্রহণসহ নানা অভিযোগের খবর পাওয়ার ফলে তদন্ত কমিটি গঠিত হয়। এ সকল অভিযোগের সত্যতা পেয়েছে তিন সদস্যের অডিট কমিটি। তার বিরুদ্ধে ক্ষমতার অপব্যবহার,অসদাচরণ, হুমকি ও ভয়ভীতি প্রদশর্ন করায় আড়ংঘাটা থানায় পৃথক দুটি সাধারণ ডায়েরি করা আছে। তাছাড়া বিভিন্ন কারণে প্রতিষ্ঠান প্রধান কর্তৃক একাধিকবার কারণ দর্শানো নোটিমও করা হয়েছে বলে সূত্রে জানাগেছে ।
সূত্র মতে, তার বিরুদ্ধে খুলনা বিএল কলেজের ইসলামের ইতিহাস ও সংষ্কৃতি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপকের ভূয়া শিক্ষক পরিচয়ে বছরের পর বছর জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের পরীক্ষক এবং মৌখিক পরীক্ষা বোর্ডের পরীক্ষক ও পরীক্ষার প্রশ্ন প্রণেতার অবৈধ সুযোগ নেওয়ার অভিযোগের পর এবার প্রতিষ্ঠানের অর্থ আত্মসাৎ, আর্থিক অনিয়ম ও দুর্নীতিসহ নানা অভিযোগ উঠেছে। কমিটির প্রতিবেদনে প্রফেসর ড. মোহতাশামুল হক মারুফের রিরুদ্ধে রেস্ট হাউজের সুপারের দায়িত্ব থাকাকালীন অর্থ আত্মসাৎ, চরম আর্থিক অনিয়ম, তিন অর্থ বছরে কোন অর্থ সরকারি ফান্ডে জমা না দেয়া, প্রতিষ্ঠান প্রধানের অনুমতি ছাড়াই ইচ্ছামত খরচ করা, ভূয়া ও কাচা ভাউচারে বিল, বিধি লঙ্ঘন করে আয়ের তুলনায় ১০ গুণ বেশি খরচ দেখানো, রশিদ বা প্রমাণপত্র ছাড়াই অর্থ গ্রহণ, আয়-ব্যয়ের রেজিস্ট্রারে কাটাছেঁড়া-ওভাররাইটিং, স্টক রেজিস্ট্রারের মধ্যে ভাউচারের ক্রয়কৃত মালামালের গড়মিল ছাড়াও চাহিদাপত্রের সাথে ক্রয়কৃত মালামালের ব্যপক পার্থক্যসহ চরম অনিয়ম ও দুর্নীতি উঠে এসেছে। এছাড়া পরিচালকের অনুমতি ছাড়া অফিসের আলমিরা খুলে জরুরি গুরুত্বপূর্ণ কাগজপত্র, নথি ও ডকুমেন্টস সরানো এবং পাশ^বর্তী সরকারি টিচার্স ট্রেনিং কলেজের অধ্যক্ষের সাথে অসদাচরণ, হুমকি ও ভয়ভীতি প্রদশর্ন করায় আড়ংঘাটা থানায় পৃথক দুটি সাধারণ ডায়েরিসহ বিভিন্ন কারণে প্রতিষ্ঠান প্রধান কর্তৃক একাধিকবার কারণ দর্শানো ও শোকজ হয়েছে বলে সূত্রে জানাগেছে ।
সংশ্লিষ্ট সুত্রে জানাগেছে, প্রফেসর ড. মোহতাশামুল হক মারুফ প্রতিষ্ঠানের রেস্ট হাউজের(অতিথি ভবন) সুপারের দায়িত্ব গ্রহণের পর ২০১৭-১৮,২০১৮-১৯ ও ২০১৯-২০ তিন অর্থ বছরের আয়-ব্যয়ের চুড়ান্ত হিসেবে দাখিল না করে অজ্ঞাতকারণে পদ থেকে অব্যহতির আবেদন করেন। সে আয়-ব্যয়ের চুড়ান্ত প্রতিবেদন দাখিলের জন্য তাকে একাধিকবার বলা হয়। সর্বশেষ ১৩ জুলাই তারিখে আয়-ব্যয়ের রেজিস্ট্রার খাতা, রশিদ বহি, ব্যাংক স্টেটমেন্ট এবং চ’ুড়ান্ত প্রতিবেদন সাত কর্মদিবসের মধ্যে দাখিলের জন্য তাকে নোটিশ প্রদান করা হয়। নোটিশ প্রাপ্তি হয়ে তিনি চুড়ান্ত প্রতিবেদন ছাড়াই শুধুমাত্র একটি রেজিষ্ট্রার খাতা, আয়-ব্যয়ের একটি হিসাব খাতা এবং কাচা ভাউচার জমা দেন। বিষয়টি সরকারি বিধিমত না হওয়ায় এ ব্যাপারে প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে অতিরিক্ত পরিচালক মানজার আলমকে আহবায়ক, সহকারী পরিচালক শামীমা আখতার ও উপপরিচালক ড. প্রদীপ কুমার মন্ডলের সমন্বয়ে তিন সদস্যের একটি অডিট কমিটি গঠন করা হয়। কমিটি সকল বিষয়ে পর্যালচনা শেষে ২৫ অক্টোবর চ’ড়ান্ত প্রতিবেদন প্রতিষ্ঠানের পরিচালকের নিকট দাখিল করেন। যাচাই-বাছাই এবং পরীক্ষা নিরীক্ষা করে বিভিন্ন ধরণের চরম অনিময় ও দুর্নীতি খুঁজে পেয়েছে দলটি। ২০১৭-১৮ সালে দেড় বছর যাবৎ কয়েকজন শিক্ষক রেস্ট হাউজে ছিলেন যাদের টাকার কোন সঠিক হিসেব নেই। প্রাপ্ত টাকা আত্মসাৎ করা হয়েছে বলে অডিট কমিটি তাদের প্রতিবেদনে উল্লেখ করেন। প্রতিবেদনে সরকারি অর্থের অনিময়মসহ নানা দুর্নীতির সত্যতা পাওয়ায় অভিযুক্ত প্রফেসর ড. মোহতাশামুল হক মারুফের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য সুপারিশ করা হয়।
এ ব্যাপারে অভিযুক্ত প্রফেসরের মুঠোফোনে যোগাযোগ করলে তার বিরুদ্ধে উঠে আসা আর্র্থিক অনিয়মের অভিযোগের উত্তর না দিয়ে অফিস সহকারীর উপর দায় চাপান। এ ব্যাপারে প্রতিষ্ঠানটির পরিচালক ড. মো. আতিকুল ইসলাম পাঠানের কাছে মুঠোফোনে জানতে চাওয়া হলে তিনি বলেন, অডিট কমিটির একটি প্রতিবেদন পেয়েছি যাতে ১৩টি মন্তব্য করা হয়েছে এতে বেশ কিছু অনিয়ম উঠে এসেছে এর বেশি কিছু বলা যাবে না। প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণে যথাযথ কর্তপক্ষকে অবহিত করা হয়েছে।