করোনা সংকটে শিক্ষার্থী, অভিভাবক ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সহাবস্থান জরুরি

0

করোনা মহামারীর মধ্যে বছরের প্রায় পুরোটা জুড়ে শিাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকলেও শিার্থী ও অভিভাবকরা একের পর এক সংকটে পড়ছেন। সম্প্রতি মাধ্যমিক ও উচ্চশিা অধিদপ্তর-মাউশি স্কুল-কলেজে টিউশন ফি’র বাইরে অন্যান্য সব ধরনের ফি বা ভাতা নেওয়া নিষিদ্ধ করায় অনেক অভিভাবকই হয়তো খানিকটা স্বস্তির নিঃশ^াস ফেলেছেন। এদিকে, গত ১৮ মার্চ থেকে শুরু হওয়া শিাপ্রতিষ্ঠানের ছুটি আগামী ১৯ ডিসেম্বর পর্যন্ত বাড়ানো হয়েছে। আর এই ছুটির মধ্যেই চলছে আগামী শিাবর্ষে স্কুলগুলোতে ভর্তি প্রক্রিয়া চূড়ান্ত করার কাজ। তবে, দেশে করোনাভাইরাসের সংক্রমণের হার বাড়তে থাকা এবং শীতকালে করোনার দ্বিতীয় ঢেউয়ের কারণে সরাসরি ভর্তি পরীা না নিয়ে প্রাথমিক ও মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সব শ্রেণিতেই লটারির মাধ্যমে ভর্তি নেওয়া হবে বলে শিা মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে। এই লটারিও হবে অনলাইনে।
একটি জাতীয় দৈনিকে শনিবার ‘স্কুলে ভর্তি লটারিতে!’ শিরোনামের প্রতিবেদনে আগামী শিাবর্ষে স্কুলগুলোর ভর্তি প্রক্রিয়া নিয়ে শিা মন্ত্রণালয়ের প্রস্তুতির কথা তুলে ধরা হয়। প্রতিবেদনে বলা হয়, মন্ত্রণালয়ের সভায় শিাপ্রতিষ্ঠান প্রধানরা তিনটি পদ্ধতির বিষয়ে প্রস্তাব দিয়েছেন। প্রথমত, পরীার বিষয়গুলো ুদ্র ুদ্র অংশে ভাগ করে সীমিতভাবে স্বাস্থ্যবিধি মেনে আগের পদ্ধতিতেই পরীা নেওয়া। দ্বিতীয়ত, অনলাইনে পূর্ণাঙ্গ ভর্তি পরীা নেওয়া। তৃতীয়ত, লটারির মাধ্যমে ভর্তি। তবে, সশরীরে সরাসরি ভর্তি পরীার েেত্র শিার্থী ও অভিভাবকদের সংক্রমণের ঝুঁকির কথা বিবেচনা করে সেটি নাকচের পে মত দেন বেশিরভাগই। অন্যদিকে, সব শিাপ্রতিষ্ঠানের অনলাইনে পরীা নেওয়ার সমতা তৈরি না হওয়া আর অনলাইনে একজনের পরীা অন্যজন দিয়ে দেওয়ারও ঝুঁকি থাকা এবং সব শিার্থীর ইন্টারনেট এবং ডিভাইস না থাকার কথা বিবেচনা করে সেটিও বাদ দেওয়া হয়। তবে, লটারি পদ্ধতিতে পরীার সমস্যাগুলো কীভাবে কমিয়ে আনা যায় তা নিয়ে চিন্তাভাবনা করা হচ্ছে। এসব কারণে এখন পর্যন্ত লটারির মাধ্যমেই আগামী শিাবর্ষে স্কুলের সব শ্রেণিতে ভর্তির বিষয়টি মোটামুটি চূড়ান্ত হয়েছে বলে জানিয়েছেন শিা মন্ত্রণালয় সংশ্লিষ্টরা।
বিদ্যমান সরকারি নীতিমালা অনুযায়ী, সরকারি-বেসরকারি সব বিদ্যালয়েই প্রথম শ্রেণিতে ভর্তির জন্য আবশ্যিকভাবে লটারির মাধ্যমে শিার্থী নির্বাচন করতে হবে। দ্বিতীয় থেকে অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত লিখিত পরীার মাধ্যমে এবং নবম শ্রেণিতে ভর্তি করার কথা জুনিয়র স্কুল সার্টিফিকেট বা ‘জেএসসি’ ও জুনিয়র দাখিল সার্টিফিকেট বা ‘জেডিসি’ পরীার ফলের ভিত্তিতে। এখন শিা মন্ত্রণালয়ের সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত হলে এবং লটারির মাধ্যমেই ভর্তি করা হলে কোনো শ্রেণিতেই আর কোনো ভর্তি পরীা থাকবে না। কিন্তু এেেত্র দুটি বিষয়কে অবশ্যই বিশেষভাবে বিবেচনায় নেওয়া জরুরি প্রথমত, মেধাবীরা যাতে কোনোভাবেই ভালো শিাপ্রতিষ্ঠানে ভর্তির সুযোগ থেকে বঞ্চিত না হয়; দ্বিতীয়ত শিাপ্রতিষ্ঠানগুলো যেন স্থানীয় শিার্থীদের ভর্তির জন্য একটি নির্দিষ্ট কোটা সংরণ করে। এখানে উল্লেখ করা প্রয়োজন যে, শিা মন্ত্রণালয়ের বিদ্যমান বিধি অনুসারে, বিদ্যালয়গুলোর সব শ্রেণিতেই অন্তত ৪০ শতাংশ শিার্থীকে ‘ক্যাচমেন্ট এরিয়া’ বা স্কুলের সেবা এলাকা থেকে ভর্তির নিয়ম রয়েছে। শিা মন্ত্রণালয়ের পরিপত্রে প্রতিটি স্কুলের সেবা এলাকা নির্ধারণ করার বিধানও রয়েছে। কিন্তু রাজধানীসহ দেশের নামিদামি বিদ্যালয়গুলো আর বেশি খরচের বেসরকারি স্কুলগুলোও এই নীতি খুব একটা অনুসরণ করে না। প্রাসঙ্গিকভাবে উল্লেখ করা যায় ভারতে সংবিধান সংশোধন করে দামি প্রাইভেট স্কুলগুলোতেও নতুন ভর্তির েেত্র ২৫ শতাংশ কোটা স্কুলের সেবা এলাকার দরিদ্র শিশুদের জন্য সংরতি রাখার আইন করা হয়েছে। করোনাকালের এই সংকটে প্রাথমিক ও মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে স্কুলের সেবা এলাকার শিার্থীদের জন্য কোটা সংরণ এবং মেধাবীদের ভর্তির সুযোগ নিশ্চিত করা হলে দীর্ঘদিনের একটি সংকট নিরসন হতে পারে।