আন্তর্জাতিক পদকে ভুষিত সাদাতকে নড়াইল প্রেসকাবের সংবর্ধনা

0

নড়াইল অফিস ॥ কিশোর-কিশোরীরা যাতে সাইবার বুলিংয়ের শিকার না হয় সে লক্ষ্য নিয়ে কাজ করে যাবার প্রত্যয় ব্যক্ত করেছেন আন্তর্জাতিক শিশু শান্তি পুরস্কারে ভূষিত কিশোর সাদাত রহমান। শনিবার বেলা সাড়ে ১১টায় নড়াইল প্রেস কাবের পক্ষ থেকে দেয়া সংবর্ধনায় তিনি এ প্রত্যয় ব্যক্ত করেন।
সাইবার বুলিং নিয়ে কাজ করা কিশোর সাদাত রহমান গত ১৩ নভেম্বর নেদারল্যান্ডসের হেগে আন্তর্জাতিক শিশু শান্তি পুরস্কারে ভূষিত হবার পর গত ১৬ নভেম্বর বাংলাদেশে ফিরে আসেন। শনিবার যশোর বিমান বন্দর থেকে সরাসরি নড়াইলে এসে প্রেস কাবের দেয়া সংবর্ধনায় যোগ দেন। এ সময় সাদাত রহমানের বাবা কুষ্টিয়া প্রধান ডাকঘরের ডেপুটি পোস্টমাস্টার সাখাওয়াত হোসেন, মা মনিলা খাতুন, নড়াইল আব্দুল হাই সিটি কলেজের অধ্যক্ষ মনিরুজ্জামান মল্লিক, সহকারী অধ্যাপক ইয়াকুব হোসেন উপস্থিত ছিলেন। আন্তর্জাতিক অঙ্গনে বাংলাদেশকে তুলে ধরায় সাদাত রহমানকে প্রেস কাবের পক্ষ থেকে ফুলেল শুভেচ্ছা জানানো হয়।
কিশোর সাদাত সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে বলেন, তাচ্ছিল্যের শিকার হয়ে ১৫বছর বয়সী এক স্কুলছাত্রীর আত্মহত্যার পথ বেছে নেয়ার কথা শুনে অ্যাপ তৈরির অভিনব এই উদ্যোগ নেন তিনি। ২০১৯ সালের ৯ অক্টোবর ‘সাইবার টিনস’ গঠন করেন। সাইবার বুলিংয়ের আইডিয়া নড়াইল থেকে সারা বিশ্বে শেয়ার করবেন বলে জানান। সাইবার বুলিংয়ের শিকার হয়ে অনেক সময় কিশোর-কিশোরীর জীবননাশ হয়। অনেকে পড়ালেখা থেকে সরে যায়, অনেকে আবার মাদকাসক্ত হয়ে পড়ে। তিনি আরও জানান, সাইবার বুলিংয়ের শিকার হয়ে কোনো কিশোর-কিশোরী, তরুণ-তরুণী আর যাতে বিপথগামী কিংবা ক্ষতির সম্মুখীন না হয় সে লক্ষ্য নিয়ে কাজ করার জন্যই সাইবার টিনস গঠন করেছি। সাইবার টিনসে তরুণরা কাজ করে নড়াইল তথা বাংলাদেশে সাইবার বুলিংয়ের বিরুদ্ধে বড় একটা পরিবর্তন আনতে পারবে বলে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন। তিনি ভবিষ্যতে এ আইডিয়া দেশের ৬৪ জেলাসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে ছড়িয়ে দিতে চান। তিনি জানান, ইউরোপীয় ইউনিয়নের পুলিশ বিভাগ ইউরোপোলের কর্মকর্তারা সাইবার বুলিংয়ের আইডিয়া নিতে তার সঙ্গে বৈঠক করেছেন। এছাড়া বিশ্বের বিভিন্ন দেশের বিভিন্ন সংস্থা তার সঙ্গে যোগাযোগ করছে বলে জানান। কিশোর সাদাতের বাবা সাখাওয়াত হোসেন এক প্রতিক্রিয়ার বলেন,তার ছেলে আন্তর্জাতিক শিশু শান্তি পুরস্কারে ভূষিত হওয়ায় মুজিববর্ষে বাংলাদেশ বড় একটা সাফল্য পেলো। সাদাত তার সাইবার বুলিংয়ের মাধ্যমে বাংলাদেশকে বিশ্বের বুকে তুলে ধরতে সক্ষম হয়েছে। সাইবার বুলিং থেকে শিশুদের রক্ষায় একটি অ্যাপ তৈরি করে কাজ করায় ১৭ বছরের কিশোর নড়াইল সিটি কলেজের দ্বাদশ শ্রেণির ছাত্র সাদাত রহমান শিশুদের নোবেল খ্যাত এই পুরস্কার লাভ করে। এই অ্যাপ শিশু, কিশোর-কিশোরীদের নিরাপদ ইন্টারনেটের ধারণা দেয়ার পাশাপশি গোপনীয়তার সঙ্গে সাইবার বুলিংয়ের বিরুদ্ধে অভিযোগ জানানোর সুযোগ করে দেয়। এই অ্যাপের মাধ্যমে কিশোর-কিশোরীরা জানতে পারে কিভাবে ইন্টারনেট দুনিয়ায় তারা সুরক্ষিত থাকতে পারে। শিশুদের অধিকার প্রতিষ্ঠা এবং নাজুক অবস্থায় থাকা শিশুদের সুরক্ষায় কাজের জন্য প্রতি বছর এই পুরস্কার দেয় কিডস রাইটস নামের একটি সংগঠন। ২০০৫ সালে রোমে অনুষ্ঠিত নোবেল বিজয়ী শান্তি পুরস্কার বিজয়ীদের এক শীর্ষ সম্মেলন থেকে ১২ থেকে ১৮ বছর বয়সীদের জন্য এই পুরস্কার চালু করা হয়। কিশোর সাদাত ২০০৩ সালে মাগুরা জেলার সদর উপজেলার আলোকদিয়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। বাবার চাকরির সুবাদে শিশু বয়সে তার নড়াইলে আসা। ২০১৯ সালে তিনি নড়াইল সরকারি বালক উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এসএসসি পাশ করেন।