কালীগঞ্জ অগ্রণী ব্যাংকের টাকা আত্মসাত : বরখাস্ত ম্যানেজার ও ক্যাশ অফিসারসহ তিন ব্যক্তির দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা

0

আসিফ কাজল, ঝিনাইদহ ॥ ঝিনাইদহের কালীগঞ্জ অগ্রণী ব্যাংক শাখার সাময়িক বরখাস্তকৃত ম্যানেজার শৈলেন বিশ্বাস ও ক্যাশ অফিসার আব্দুস সালামসহ তিনজনের দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে। দেশের সব স্থল ও বিমানবন্দর ইমিগ্রেশন কর্তৃপ বরাবর এ সংক্রান্ত একটি চিঠি দেয়া হয়েছে। ব্যাংকটির সাবেক শাখা ব্যবস্থাপক শৈলেন কুমার বিশ্বাস, ক্যাশ অফিসার আবদুস সালাম ও অস্থায়ী মাঠ সহকারী আজির আলী জাল কাগজপত্র তৈরি করে মৃত ব্যক্তি, শ্রমিক, ব্যবসায়ী ও প্রবাসীসহ শ শ মানুষের নামে কৃষি ঋণ তুলে লাখ লাখ টাকা আত্মসাৎ করেছেন। ব্যাংকের টাকা আত্মসাতের ঘটনা তদন্তে প্রমাণিত হওয়ায় উল্লিখিত তিন কর্মকর্তাকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়। এ নিয়ে পত্রিকায় তথ্যভিত্তিক সংবাদ প্রকাশ হলে তারা ঝিনাইদহের সাংবাদিক আসিফ কাজল ও মো.সোহাগের নামে আদালতে মিথ্যা অভিযোগ দায়ের করেন।
তথ্য নিয়ে জানা গেছে, কৃষি ঋণের টাকা আত্মসাতের ঘটনায় ব্যাংকটির প্রধান কার্যালয় কঠোর অবস্থান নিয়েছে। বৃহস্পতিবার অগ্রণী ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) মোহাম্মদ শামস-উল ইসলাম বলেন, টাকা আত্মসাতের ঘটনায় হেড অফিস থেকে উলিখিত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে। একই সাথে সব স্থল ও বিমানবন্দর ইমিগ্রেশন কর্তৃপ বরাবর এ সংক্রান্ত চিঠি দেয়া হয়েছে। সূত্র জানায়, জাল কাগজ তৈরি করে মৃত ব্যক্তি, শ্রমিক, ব্যবসায়ী ও প্রবাসীসহ শ শ মানুষের নামে শৈলেন বিশ্বাস, আবদুস সালাম ও আজির আলী কৃষি ঋণের লাখ লাখ টাকা আত্মসাৎ করেছেন। প্রাথমিক তদন্তে অভিযোগের সত্যতা মিলেছে। কালীগঞ্জ উপজেলার নিশ্চিন্তপুর গ্রামের জগন্নাথ বিশ্বাসের ছেলে শৈলেন ২০১৭ সালের ১৭ জুলাই শাখা ম্যানেজার পদে যোগ দেন। তার বিরুদ্ধে আগেও নানা অনিয়ম-অভিযোগের তদন্ত হয়েছে। মুক্তিযোদ্ধা সন্তান কোটায় ২০১৭ সালের ৫ অক্টোবর কালীগঞ্জ শাখায় ক্যাশ অফিসার পদে যোগ দেন হরিণাকুণ্ডু উপজেলার ভেড়াখালী গ্রামের আবদুস সালাম। তিনি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সময় তার বিরুদ্ধে রাজশাহীতে খুন, চাঁদাবাজি, অপহরণ ও অস্ত্র আইনে একাধিক মামলা হয়। ফৌজদারী মামলা থাকার পরও কীভাবে তিনি ব্যাংকের মতো স্পর্শকাতর জায়গায় চাকরি পেলেন তা নিয়ে নানা প্রশ্ন উঠেছে। রাজশাহীতে তিনি বাইট্টা সালাম নামে পরিচিত। চাকরি পাওয়ার পর তাকে ঋণ শাখার দায়িত্ব দেয়া হয়। শৈলেন ও সালামকে সাথে নিয়ে প্রতারক আজির আলী নতুন পরিকল্পনা নিয়ে মাঠে নামেন। স্থানীয় চক্রের সহযোগিতায় তারা জালিয়াত সিন্ডিকেট গড়ে তোলে। কৃষকসহ কাল্পনিক গ্রহীতাদের নামে কাগজপত্র তৈরি এবং ভুয়া স্বার করে তারা কৃষিঋণ নেন।
জানা গেছে, কৃষকদের ৪ শতাংশ থেকে সর্বোচ্চ ৯ শতাংশ সুদে এক লাখ টাকার নিচে সহজ শর্তে ঋণ দিয়ে আসছিল ব্যাংকটি। অনুমান এক হাজার ১শ জনের নামে পৌনে চার কোটি টাকা ঋণ বিতরণ করা হয়। ব্যাংকটির আঞ্চলিক অফিস থেকে প্রতি বছর তদারকি করা হয়েছে। একাধিক এজিএম ও ডিজিএমও শাখা পরিদর্শন করেছেন। কিন্তু কারও চোখে জালিয়াতির বিষয়টি এতদিন ধরা পড়েনি। শৈলেন বিশ্বাসকে চুয়াডাঙ্গায় বদলি করা হলে শাখায় নতুন ব্যবস্থাপক হিসেবে যোগ দেন এসপিও নাজমুস সাদাত। তিনি যোগদানের পর ধীরে ধীরে বেরিয়ে আসে টাকা আত্মসাতের মহাজালিয়াতির খবর।
২০২০ সালের ২২ জুন যোগ দিয়ে নাজমুস সাদাত খাতা-কলমে ঋণ বিতরণের সঙ্গে বাস্তবের কোনো মিল খুঁজে পাননি। একই বছর ৩০ সেপ্টেম্বর জোনাল অফিসের উপমহাব্যবস্থাপক শেখ দীন মহম্মদ শাখাটি পরিদর্শন করেন। কয়েকজন ঋণগ্রহীতার কাছে তিনি ফোন করলে অনিয়ম-দুর্নীতির প্রকৃত ঘটনা জানতে পারেন। একই দিন আঞ্চলিক কার্যালয়ের সিনিয়র প্রিন্সিপাল অফিসার আনোয়ার হোসেনকে প্রধান করে চার সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। তদন্তে লাখ লাখ টাকার হিসেবের গরমিল বেরিয়ে আসে। ঝিনাইদহ জোনাল অফিসের উপমহাব্যবস্থাপক শেখ দীন মহম্মদ বলেন, এলাকার ১১শ কৃষকের মাঝে পৌনে ৪ কোটি টাকা ঋণ বিতরণ করা হয়েছে। কত কোটি টাকা আত্মসাৎ করা হয়েছে তা অডিট শেষে জানা সম্ভব হবে। তিনি বলেন, জড়িতরা গোপনে ২৭ লাখ টাকা ব্যাংকে ফেরতও দিয়েছেন। এদিকে, গত বুধবার ঝিনাইদহের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মো. সেলিম রেজার সভাপতিত্বে এসএমই ঋণ বিতরণ মনিটরিং কমিটির সভায় বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করা হয়। সভায় শেখ দীন মহম্মদ ঘটনাটি জানান। একই সভায় বাংলাদেশ ব্যাংকের সহকারী পরিচালক পার্থ প্রতিম জানান, বাংলাদেশ ব্যাংকের প থেকে গুরুত্ব সহকারে ঘটনাটি তদন্ত করা হচ্ছে।