মাধ্যমিকে অংক বিজ্ঞানসহ মৌলিক বিষয় : কিন্তু শিক্ষকরা কতটা যোগ্য

0

লোকসমাজ ডেস্ক॥ বাংলাদেশের স্কুল পর্যায়ে শিক্ষা কার্যক্রম ও পরীা পদ্ধতি কেমন হওয়া উচিত তা নিয়ে বিতর্ক চলছে দীর্ঘকাল ধরে। শিক্ষার্থীদের উপর অপ্রয়োজনীয় অতিরিক্ত পরীক্ষার চাপ আর সঠিক সময়ে সঠিক পাঠ কার্যক্রম না থাকার অভিযোগ অনেক দিনের। আর এর উদাহরণ হিসেবে অনেকে নবম শ্রেণিতে উঠে বিজ্ঞান, ব্যবসা শিা কিংবা মানবিক বিভাগ বেছে নেয়ার কথা বলে থাকেন।
এ থেকে উত্তরণের জন্য জন্য ২০১৬ সালে শিাবিদদের নিয়ে একটি কমিটিও করা হয়েছিলো। তাদের সুপারিশের ধারাবাহিকতায় উঠে এসেছিলো এসব বিভাগ উঠিয়ে দেয়ার প্রস্তাব। অবশেষে শিক্ষামন্ত্রী দিপু মনি জাতীয় সংসদে জানিয়েছেন, পুরো কারিকুলামই পর্যালোচনা হচ্ছে যা শিগগিরই চূড়ান্ত আকারে সরকার প্রকাশ করবে। তিনি বলেন, “আমাদের কারিকুলামের পুরো পর্যালোচনা হচ্ছে। খুব শিগগিরিই চূড়ান্ত রূপটি প্রকাশ করবো। সেখানে কিন্তু আমাদের সব ধরনের শিক্ষাতে বিজ্ঞান, মানবিক, ব্যবসা – এই বিভাগগুলো নবম-দশম শ্রেণিতে আর রাখছি না। সব শিার্থী সব ধরনের শিা নিয়ে স্কুলের ১০টি বছর শেষ করবে”। শিক্ষা বিশেষজ্ঞ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষা ও গবেষণা ইন্সটিটিউটের সাবেক অধ্যাপক ছিদ্দিকুর রহমান বলছেন, এখন দশম শ্রেণি পর্যন্ত মৌলিক বিষয়গুলো সবাইকে পড়ানোর সিদ্ধান্তটি ভালো তবে বাস্তবায়নের েেত্র বড় চ্যালেঞ্জ হবে যোগ্য শিক্ষকের অভাব। “কিছু শিক্ষক আছে যাদের প্রশিক্ষণ দিয়ে যোগ্য করে তোলা যাবে। কিন্তু অনেকেই আছেন যারা প্রশিক্ষণ যোগ্য না এবং এদের সংখ্যাই বেশি। প্রশিক্ষণ গ্রহণ করার যোগ্যতাই তাদের নেই”। বাংলাদেশে স্কুল পর্যায়ে বিশেষ করে বেসরকারি স্কুলগুলোতে শিক্ষক নিয়োগ নিয়ে নানা ধরণের অনিয়ম ও দুর্নীতির খবর প্রায়ই গণমাধ্যমে উঠে আসে। দেশটিতে মাধ্যমিক পর্যায়ে প্রায় ছয় লাখ শিক্ষক আছেন যাদের অনেকের যোগ্যতা ও দতা নিয়ে প্রশ্ন আছে। অধ্যাপক ছিদ্দিকুর রহমান বলছেন ভালো অবকাঠামো না থাকলেও চলে কিন্তু ভালো শিক্ষকের বিকল্প নেই।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন নবম শ্রেণির বিজ্ঞান, ব্যবসায় শিক্ষা ও মানবিক বিভাগ উঠিয়ে দেয়ার পর ২০২২ বা ২০২৩ সাল থেকেই নতুন কারিকুলাম ও বই দেয়ার জন্য প্রস্তুতি চলছে গত বছর থেকেই। শিক্ষা বিষয়ক বেসরকারি গবেষণা সংস্থা গণস্বারতা অভিযানের নির্বাহী পরিচালক রাশেদা কে. চৌধুরী বলছেন, শিক্ষা কমিশন রিপোর্টের আলোকেই সরকার কিছু পরিবর্তন আনতে যাচ্ছে যাকে ইতিবাচক বলেই মনে করেন তিনি। এর আগে আলোচিত কুদরত-ই খুদা কমিশনেও একই সুপারিশ করা হয়েছিলো। বরং এটি আগে বাস্তবায়ন না করে শিক্ষা েেত্র বৈষম্যও তৈরি করা হয়েছে বলে মনে করেন তিনি। তিনি বলেন ইংরেজি মাধ্যমের শিক্ষার্থীরা তো ও-লেভেল পর্যন্ত মৌলিক সব বিষয়েই পড়াশোনা করে। তাহলে স্কুলগুলোতে এতকাল ধরে শিক্ষার্থীরা তা থেকে বঞ্চিত হলো কেন? তবে শিকরা বলছেন, দশম শ্রেণি পর্যন্ত বিভাগ বিভাজন না থাকাই ভালো কারণ নবম শ্রেণিতে উঠা শিক্ষার্থীরা নিজের ইচ্ছার চেয়ে অভিভাবক কিংবা শিক্ষকদের ইচ্ছেকেই বিভাগ পছন্দের েেত্র বেশি গুরুত্ব দেয়ায় তাদের আগ্রহ-কেন্দ্রিক শিা গ্রহণ কঠিন হয়ে পড়ে। ঢাকার একজন শিক নাজমুন নাহার বিবিসি বাংলাকে বলেন, “আমরা তো স্কুলে দেখি যে অভিভাবকরা চাপিয়ে দেয়। যার বিজ্ঞান পড়ার আগ্রহ নেই গার্জিয়ান তা চাপিয়ে দিচ্ছে। এখন একই সাথে পড়লে বাচ্চারাও সব বিষয়ে ধারণা পাবে আবার তাদের আগ্রহ কোন দিকে বা মেধা কেমন তা বোঝা যাবে”। তবে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এর সুফল পেতে হলে পাঠ্যপুস্তক সঠিক ভাবে তৈরি করা এবং মাধ্যমিক পর্যায়ে প্রায় দেড় কোটি শিার্থীর বিপরীতে প্রায় ছয় লাখ শিককে যোগ্য বা প্রশিতি করে তোলাটাই হবে বড় চ্যালেঞ্জ।