শীতেও বাড়তি থাকতে পারে পাম অয়েলের দাম

0

লোকসমাজ ডেস্ক॥ শীত মৌসুমে পাম অয়েল জমে যায়। এ কারণে প্রতি বছর শীতের সময় বিশ্বজুড়ে ভোজ্যতেলটির চাহিদা কমে আসে। কমতির দিকে থাকে দাম। তবে এবার পাম অয়েলের বাজারে ভিন্ন পরিস্থিতি দেখা যেতে পারে। ২০২০ সালের শেষ ভাগে শীত জাঁকিয়ে বসলেও পাম অয়েলের দাম বাড়তি থাকতে পারে বলে জানিয়েছে পাম অয়েল উৎপাদনকারী বিশ্বের সবচেয়ে বড় প্রতিষ্ঠান এফজিভি হোল্ডিংস বারহাদ। মালয়েশিয়াভিত্তিক প্রতিষ্ঠানটি বলছে, করোনা সংক্রমণের দ্বিতীয় ঢেউয়ের ধাক্কা ও আবহাওয়াগত অনিশ্চয়তায় চলতি বছরের চতুর্থ প্রান্তিকে (অক্টোবর-ডিসেম্বর) মালয়েশিয়ায় পাম অয়েলের উৎপাদন উল্লেখযোগ্য পরিমাণে কমে আসার সম্ভাবনা রয়েছে। ফলে চাহিদার তুলনায় পণ্যটির সরবরাহ থাকতে পারে সীমিত। মূলত এ পরিস্থিতি মালয়েশিয়ার বাজারে শীত মৌসুমেও পাম অয়েলের দাম বাড়তি রাখতে পারে।
করোনা মহামারী ছড়িয়ে পড়ায় চলতি বছরের শুরুর দিকে পাম অয়েলের দাম কমতির দিকে ছিল। তবে সময় যতই গড়িয়েছে মালয়েশিয়ার বাজারে পণ্যটির দাম ততই বেড়েছে। বছরের মাঝামাঝি থেকে পাম অয়েলের দাম লাফিয়ে বাড়তে শুরু করে। এ ধারাবাহিকতায় চলতি বছরের তৃতীয় প্রান্তিকে (জুলাই-সেপ্টেম্বর) সময়ে মালয়েশিয়ার বাজারে ভবিষ্যৎ সরবরাহ চুক্তিতে পাম অয়েলের দামে ১৮ শতাংশ প্রবৃদ্ধির দেখা মিলেছে।
খাতসংশ্লিষ্টদের ভাষ্য, করোনা মহামারীর কারণে লকডাউন ও শ্রমিক সংকটে পাম অয়েলের উৎপাদন ব্যাহত হয়েছে। তবে পণ্যটির চাহিদা ছিল তুলনামূলক বেশি। কেননা শীত আসার আগে ক্রেতারা বেশি করে পাম অয়েল কিনেছেন। চাহিদা ও উৎপাদনের ভারসাম্য না থাকায় মালয়েশিয়ার বাজারে পাম অয়েলের দাম ছিল চাঙ্গা। বর্তমানে মালয়েশিয়ার বাজারে ভবিষ্যৎ সরবরাহ চুক্তিতে প্রতি টন অপরিশোধিত পাম অয়েল ৩ হাজার ৩৩০ রিঙ্গিতের (স্থানীয় মুদ্রা) আশপাশে বা ৮১০ ডলারের ওপরে বিক্রি হচ্ছে।
তবে বছরের শেষ ভাগে এসে পাম অয়েলের দাম কমতে পারে বলে মনে করছিলেন বাজার বিশ্লেষকরা। ভবিষ্যৎ সরবরাহ চুক্তিতে প্রতি টন পাম অয়েলের দাম ৩ হাজার ডলারের নিচে নামতে পারে বলে মনে করেছিলেন অনেকেই। কেননা নভেম্বরের শেষ নাগাদ পুরোদমে শীত পড়লে পাম অয়েলের চাহিদা অনেকটাই কমতে শুরু করবে। জমে যাওয়ার কারণে ক্রেতারা পণ্যটি কিনতে চাইবেন না। চাহিদায় এ পতন দাম কমিয়ে আনবে পাম অয়েলের।
বিশ্লেষকদের এমন যুক্তি নাকচ করে দিয়েছে এফজিভি হোল্ডিংস। প্রতিষ্ঠানটি বলছে, এবার পরিস্থিতি পুরোপুরি আলাদা। শীত মৌসুমে চাহিদা কিছুটা কমে আসবে ঠিকই। তবে এ সময় পাম অয়েলের উৎপাদনেও বড় পতন দেখা দিতে পারে। এমনটা হলে চলতি বছরের শেষ প্রান্তিকেও বাড়তি থাকতে পারে পাম অয়েলের দাম। শীতের সময় পাম অয়েলের দাম টনপ্রতি ৩ হাজার ডলারের নিচে নেমে আসার সম্ভাবনা ক্ষীণ।
এ বিষয়ে প্রতিষ্ঠানটির প্রধান নির্বাহী হারিস ফাদজিলাহ হাসান বলেন, একদিকে করোনা সংক্রমণ এড়াতে মালয়েশিয়ার সাবাহ প্রদেশে নতুন করে আংশিক লকডাউন জারি করা হয়েছে। অন্যদিকে আবহাওয়া অনিশ্চিত আচরণ করছে। এসব কারণে চলতি বছরের চতুর্থ প্রান্তিকে মালয়েশিয়ায় পাম অয়েল উৎপাদন বাধাগ্রস্ত হতে পারে। এর প্রভাব পড়বে পণ্যটির বাজার পরিস্থিতিতে। করোনা মহামারী ও নিশ্চিত আবহাওয়া দীর্ঘমেয়াদে পাম অয়েলের বাড়তি দাম ধরে রাখতে পারে।
চলতি বছর ইন্দোনেশিয়া ও মালয়েশিয়াসহ প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের দেশগুলোয় লা নিনার প্রভাবে প্রচুর বৃষ্টি হচ্ছে। বন্যার আশঙ্কা করছেন মালয়েশীয় আবহাওয়াবিদরা। ফলে এবার মালয়েশিয়ায় পাম অয়েল উৎপাদন কমে আসার জোরালো সম্ভাবনা রয়েছে। মালয়েশিয়ার সাবাহ প্রদেশে সবচেয়ে বেশি পাম অয়েল উৎপাদন হয়। দেশটির বড় বড় পাম বাগানগুলো এখানে অবস্থিত। গত মাসে প্রদেশটিতে করোনার বিস্তার ঠেকাতে আংশিক লকডাউন করা হয়েছে। এর জের ধরে নতুন করে শ্রমিক সংকটের আশঙ্কা করছে এফজিভি হোল্ডিংস বারহাদ।
প্রতিষ্ঠানটির পক্ষ থেকে এক নোটে বলা হয়েছে, এরই মধ্যে পাম বাগানগুলোয় প্রয়োজনের তুলনায় কমসংখ্যক শ্রমিক কাজ করছেন। করোনা সংক্রমণ ঠেকাতে অন্তত ২ হাজার ৭০০ শ্রমিক ছুটিতে পাঠানো হয়েছে। প্রভাব পড়ছে পাম উৎপাদন ও সংগ্রহ কার্যক্রমে। এটাও বছরের শেষ প্রান্তিকে পাম অয়েলের দাম বাড়তি থাকার অন্যতম একটি কারণ। সীমান্তে চলাচল সীমিত করে আনা, পরিযায়ী শ্রমিকদের কাজের সুযোগ কমে আসা—বিদ্যমান সংকট আরো বাড়িয়ে তুলতে পারে। ফলে পাম অয়েলের উৎপাদনে বড় ধরনের ধাক্কা লাগার জোরালো সম্ভাবনা দেখছে এফজিভি হোল্ডিংস বারহাদ। তাই শীত শুরু হয়ে গেলেও সহসাই কমবে না পাম অয়েলের দাম।
এদিকে আগামী বছরের প্রথম প্রান্তিকে মালয়েশিয়ার বাজারে পাম অয়েলের দামে কিছুটা স্বস্তি নামতে পারে। প্রতিষ্ঠানটি বলছে, ২০২১ সালের জানুয়ারি-মার্চ প্রান্তিকে মালয়েশিয়ায় ভবিষ্যৎ সরবরাহ চুক্তিতে প্রতি টন পাম অয়েল ২ হাজার ৫০০ থেকে ২ হাজার ৬০০ রিঙ্গিতের মধ্যে বেচাকেনা হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। ফলে এবার শীত মৌসুমের প্রায় পুরোটাজুড়ে ক্রেতাদের বাড়তি দামে পাম অয়েল কিনতে হতে পারে। এর পেছনে প্রধানতম কারণ করোনা সংক্রমণ ও প্রকৃতিতে লা নিনার প্রভাব।
রয়টার্স, স্টার অনলাইন ও এফএমটি অবলম্বনে