তৃতীয় লিঙ্গের প্রথম জনপ্রতিনিধি কোটচাঁদপুরের পিংকির বিরুদ্ধে হত্যা মামলা রেকর্ড

0

কোটচাঁদপুর (ঝিনাইদহ) সংবাদদাতা ॥ আদালতের নির্দেশে দেশের প্রথম তৃতীয় লিঙ্গের (হিজড়া) জনপ্রতিনিধি ঝিনাইদহের কোটচাঁদপুর উপজেলার আলোচিত মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান সাদিয়া আক্তার পিংকীকে প্রধান আসামি করে ৬ জনের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা রেকর্ড করেছে কোটচাঁদপুর থানা। মামলাটি দায়ের করেছেন আরেক তৃতীয় লিঙ্গ সম্প্র্রায়ের বর্ষা মীর। আসামিরা সবাই তৃতীয় লিঙ্গের। প্রায় ৫মাস আগে মারা যাওয়া লাবলী ওরফে আক্তারুল (৩৫) নামের আরেক তৃতীয় লিঙ্গের একজন মৃত্যুর ঘটনায় হত্যার অভিযোগ তোলেন জেলার সদর থানার চাকলা এলাকার বর্ষা মীর। গত ১১ নভেম্বর ঝিনাইদহের জুডিসিয়াল আমলী আদালতে লাবলী ওরফে আক্তারুলকে অপহরণের পর হত্যা করা হয়েছে এই মর্মে তিনি অভিযোগ করেন। আদালত অভিযোগটি আমলে নিয়ে কোটচাঁদপুর থানাকে মামলাটি নথিভুক্ত করার নির্দেশ দিলে থানা ১৭ নভেম্বর সন্ধ্যায় তা নথিভুক্ত করে। মামলা নম্বর- ৫, ধারা- ৩৬৪,৩০২,৩৪।
প্রসঙ্গত, উপজেলার মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান সাদিয়া আক্তার পিংকীই হচ্ছেন তৃতীয় লিঙ্গ সম্প্রদায়ের মধ্যে দেশের সর্ব প্রথম কোনো নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি।মামলার বাদি বর্ষা মীর অভিযোগপত্রে বলেন, এলাকা ভাগাভাগিকে কেন্দ্র করে গত ৭জুন ভাইস চেয়ারম্যান সাদিয়া আক্তার পিংকী ও তার ৫ সহোযাগী হিজড়া লাবলীকে উপজেলার পিছনে তার ভাড়া বাসা থেকে করোনা হয়েছে প্রচার করে মুখ বেঁধে অ্যাম্বুলেন্সে তুলে নিয়ে যায়। পরবর্তীতে তার দুই হাতের রগ কেটে গলায় ফাঁস দিয়ে হত্যার পর চুয়াডাঙ্গা হাসপাতালে ভর্তি করে। সেখানে ডাক্তার তাকে মৃত বলে ঘোষণা করলে মৃত লাবলী ওরফে আক্তারুলের গ্রামের বাড়ি চুয়াডাঙ্গা জেলার দর্শনা থানার নাস্তিপুর কবর স্থানে তাকে মাটি চাঁপা দেয়া হয়। মামলার বাদি আরো অভিযোগ করেন, মৃত লাবলী ওরফে আক্তারুল একজন পুরুষ ছিলেন। তার স্ত্রী ও দুটি সন্তান রয়েছে। ৬ বছর আগে সাদিয়া আক্তার পিংকী তাকে ফুসলিয়ে অপারেশনের মাধ্যমে হিজড়া বানান। সেই থেকে সে কোটচাঁদপুর বাসা ভাড়া নিয়ে হিজড়াদের সাথে চলাফেরা করে জীবন ধারণ করে আসছিলো। প্রায় ১ বছর ধরে এলাকা ভাগাভাগি নিয়ে পিংকীর সাথে লাবনীরমত বিরোধ দেখা দেয়। যে কারণে তাকে হত্যা করা হয়েছে।
এদিকে কোটচাঁদপুর উপজেলা মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান তৃতীয় লিঙ্গের (হিজরা) সাদিয়া আক্তার পিংকী এ প্রতিবেদককে বলেন-,এলাকার আধিপত্য বিস্তার নিয়ে ঝিনাইদহের সদর থানার চাকলা এলাকার বর্ষা হিজড়া বিভিন্ন হিজড়ার নামে মিথ্যা মামলা দিয়ে দাবিয়ে রাখতো। যেহেতু আমি একজন তৃতীয় লিঙ্গের মানুষ হলেও আমি একজন নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি। গত উপজেলা নির্বাচনের আগে আমি কথা দিয়ে ছিলাম সাধারণ মানুষের পাশাপাশি আমি তৃতীয় লিঙ্গ সম্প্রদায়দের জীবন যাত্রার মান উন্নয়নে কাজ করবো। সে লক্ষে হিজড়াদের মধ্যে এ আধিপত্যের দ্বন্দ্ব নিরসনে বেশ কয়েকবার উদ্যোগ নিয়েছি। বিষয়টি নিয়ে পুলিশ প্রশাসনের সাথেও আমি কথা বলেছি। কিন্তু বর্ষা কোন আলোচনায় বসতে চায়নি বা বসেনি। আমি সব সময় নির্যাতিতদের পাশে আছি। যে কারণে সে মেনে নিতে না পেরে আমাকে দূর্বল করতে মিথ্যা মামলা দায়ের করেছে। তিনি দাবি করেন হার্টের সমস্যা জনিত কারণে লাবনী ওরফে আক্তারুলের চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যু হয়েছে। যার সার্টিফিকেট সে সময় লাশের সাথে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ দিয়ে দেয়। তিনি এই মিথ্যা মামলার প্রতিবাদ জানিয়ে বলেন, প্রসাশনের উচিত হবে তদন্ত করে মামলা মিথ্যা প্রমাণিত হলে মামলার বাদির বিরুদ্ধে উপযুক্ত ব্যবস্থা নেয়া। দর্শনা পারকৃষ্ণপুর-মদনপুর ইউনিয়নের মেম্বর আশিক ইকবাল জানান, ওই সময় করোনার ভয়ে লাশবাহী অ্যাম্বুলেন্স গ্রামে ডুকতে দিতে বাঁধা প্রদান করে গ্রামবাসী। পরে ওই এলাকার পুলিশে সহযোগিতায় এবং লাশের সাথে আসা হাসপাতালের দেয়া সার্টিফিকেট দেখিয়ে লাশবাহী গাড়ি গ্রামে ঢোকে। পরে তার নিকটাত্মীয়রা আক্তারুলকে গোসল দেয় এবং তারাই তাকে দাফন করে। তাদের কাছ থেকেও হত্যার এমন কোন আলামতের কথা আমরা শুনিনি। বিষয়টি নিয়ে কোটচাঁদপুর থানার এ মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) ইমরান আলমের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন- সবেমাত্র মামলা রেকর্ড হয়েছে। দুই এক দিনের মধ্যে কবর থেকে লাশ তোলার জন্য আদালতে আবেদন করা হবে। তারপর প্রযোজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।