তীব্র বিতর্ক ও আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে সাকিব

0

লোকসমাজ ডেস্ক॥ বিতর্ক পিছু ছাড়ছেই না বাংলাদেশের ক্রিকেট সুপারস্টার সাকিব আল হাসানের। বেনাপোল সীমান্তে এক ভক্তের সেলফি তোলার চেষ্টা নিয়ে অনাকাক্সিত ঘটনার পর ভারতে পূজার অনুষ্ঠানে যোগ দেয়া এবং পরে তা নিয়ে হত্যার হুমকির পর মা চেয়ে পোস্ট দেয়া- এসব কিছুই নিয়ে এখন তীব্র বিতর্ক ও আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে তিনি। সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে মা চাওয়ার জন্য সাকিবকে সাধুবাদ জানাচ্ছেন অনেকে। কিন্তু মা চেয়ে সাকিব একটি ভুল করলো, এমনটি মনে করা মানুষের সংখ্যাও কিন্তু কম নয়। তাকে হত্যার হুমকি দিয়ে ভিডিও পোস্ট করা ব্যক্তি মহসিন তালুকদারকে গতকাল মঙ্গলবারই আটক করেছে র‌্যাব। তবে তার আগেই তুমুল সরগরম হয়েছে উঠেছ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম, তবে সাকিব আল হাসানকে নিয়ে এবার একটির পর একটি যে বিতর্ক হচ্ছে তার সূচনা হয়েছে মূলত তিনি যুক্তরাষ্ট্র থেকে ফিরে আসার পরই।
বিতর্কের শুরু যেভাবে
সবেমাত্রই ক্রিকেটে এক বছরের নিষেধাজ্ঞা শেষ হয়েছে সাকিব আল হাসানের। ৬ নভেম্বর ঢাকায় ফেরার পরদিনই ঢাকার একটি সুপারশপ উদ্বোধন করতে গিয়ে বিতর্কের জন্ম দেন এই অলরাউন্ডার। অভিযোগ, দেশে ফিরে কোয়ারেন্টিনে না থেকে বরং সুপারশপ উদ্বোধনের সময় ও স্বাস্থ্যবিধির বিষয়গুলো বিবেচনায় নেননি তিনি এবং ওই অনুষ্ঠানে ছিলো অনেক মানুষের ভিড়। এরপর বৃহস্পতিবার বেনাপোল সীমান্ত দিয়ে ভারতে যাওয়ার সময় নতুন করে আলোচনায় আসেন এক ভক্তের সেলফি তোলার চেষ্টার সময় অনাকাক্সিত আচরণের জন্য। তবে সাকিব বলেছেন যে, ওই ভক্ত তার অনুমতি ছাড়াই স্বাস্থ্যবিধি না মেনে প্রায় গায়ের ওপর ওঠে ছবি তোলার চেষ্টা করেছেন এবং এ সময় তাকে সরিয়ে দিতে গেলে ওই ব্যক্তির ফোন হাত থেকে পড়ে যায়। ওদিকে সাকিব ভারতে একটি পূজার অনুষ্ঠানে যোগ দিয়েছেন এমন খবর ও ছবি প্রকাশ করে কিছু গণমাধ্যম তা নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ােভ ও উষ্মা প্রকাশ করা শুরু হয় মূলত শনিবার থেকেই। এর মধ্যে সিলেটের মহসিন তালুকদার নামে এক ব্যক্তি রোববার রাতে তার ফেসবুক আইডি থেকে লাইভ ভিডিওতে সাকিবকে অশ্লীল গালিগালাজ ও হত্যার হুমকি দেন।
পাশাপাশি তিনি সাকিবকে পাকিস্তানী ক্রিকেটারদের অনুসরণেরও পরামর্শ দেন ওই ভিডিওতে। পরদিন সকালে আবার লাইভে এসে তিনি সাকিবকে ভারতে কালী পূজা উদ্বোধন করতে ভারতে যাওয়ার কারণে মা চাইতে বলেন। এসব নিয়ে সরগরম হয়ে ওঠে ফেসবুকসহ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম। এমন পটভূমিতে নিজের ইউটিউব চ্যানেলে ভিডিওি বার্তায় সাকিব আল হাসান বলেন, তিনি পূজার উদ্বোধন করেননি বা উদ্বোধন করতে যাননি।এই বার্তায় তিনি নিজেকে গর্বিত মুসলমান উল্লেখ করে বলেন, ‘ভুলত্রুটি হবেই, ভুলত্রুটি নিয়েই আমরা জীবনে চলাচল করি। আমার কোনো ভুল হয়ে থাকলে অবশ্যই আমি আপনাদের কাছে মা প্রার্থনা করছি।’ যদিও তিনি স্পষ্ট করেই বলেন যে তিনি পূজা উদ্বোধন করতে যাননি।
নেটিজেনদের দুই মত
তার এ মা প্রার্থনা নিয়েও শুরু হয়েছে তীব্র বিতর্ক। কারণ একপ মনে করে এভাবে মা না চেয়ে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির কথা বলা উচিত ছিলো তার। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেই আবার কেউ কেউ বলছেন, ‘হত্যার হুমকির পর এ ছাড়া আর কী বা করার ছিলো সাকিবের? জীবনের ঝুঁকি কেই বা নিতে চায়?’গণমাধ্যম ব্যক্তিত্ব আব্দুন নুর তুষার তার ভেরিফায়েড ফেসবুক পাতায় লিখেছেন, ‘একদল বিশিষ্ট ফেসবুকজীবী খুবই ব্যস্ত হয়েছেন সাকিবের সমালোচনায়? সাকিব কেন মা চাইল? সে যদি মনে করে সে মা চাইবে, আপনি তাকে না বলার কে?’ ‘বরং নিজেদের প্রশ্ন করেন আপনারা কেমন সমাজ গড়েছেন যেখানে প্রকাশ্যে ফেসবুকে লাইভ ভিডিওতে রামদা উঁচিয়ে পৃথিবীর সেরা একজন খেলোয়াড়কে জীবনের হুমকি দেয়া যায়? এখন দেশের ভাবমূর্তি কোথায় গেলো?….।’ এই পোস্টেই আনন্দ জামান নামে একজন লিখেছেন, ‘প্রশ্ন একটাই, এই মা প্রার্থনার মধ্যে সাকিব দেশের ধর্মান্ধদের আরো একধাপ এগিয়ে দিল কি না!’ বিবিসি বাংলার ফেসবুক পাতায় মো.শামীম লিখেছেন, ‘অতিরিক্ত কোনো কিছুই ভাল না, সাকিবকে হত্যার হুমকি দেয়াটা অনেক বাড়াবাড়ি হয়ে গেলো, আবার সাকিব ও মুসলিম পরিবারে জন্ম নিয়ে হজ্ব করে হিন্দুদের মন্দিরে গিয়ে কোটি মুসলিমের মনে আঘাত দেয়্টাাও বাড়াবাড়ি। আনসার আলী খান জয় লিখেছেন, ‘হত্যা বা ধর্ষণের আসামিকেই এতো দ্রুত ধরা হয় না। যত দ্রুত এনাকে ধরা হয়েছে। সাকিব বলেই আইন আলাদা। অথচ সে দেশের আইন অমান্য করে কোয়ারেন্টিনে না থেকে অপরাধ করেনি? আইন শুধু অসহায়, দুর্বল প্রবাসীদের জন্য।’ নুরুল আবছার লিখেছেন, ‘সাকিব ভুল স্বীকার করাতে দেশের মানুষ মা করে দিয়েছে, সাকিবের ও উচিৎ হত্যার হুমকি দাতাকে মা করে বড় মনের পরিচয় দেয়া।’ অনলাইন অ্যাক্টিভিস্ট আরিফ জেবতিক অবশ্য সাকিব আল হাসানকে রামদা দেখিয়ে হুমকি দেয়ায় অভিযুক্ত মহসিন তালুকদারের ছবিসহ পোস্ট দিয়ে লিখেছেন, ‘ইনিই বাংলাদেশ, বাকি সব বোগাস।’ তবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক জোবাইদা নাসরীন বলছেন, সাকিব আল হাসান এমন কিছু করেননি যেটা নিয়ে ধর্মীয় বিতর্ক হতে পারে। তারপরেও তাকে মা চাওয়ার কথা বলতে হয়েছে বাংলাদেশের এখনকার বাস্তবতার কারণেই।
সূত্র : বিবিসি