এএসপি শিপন হত্যা : মানসিক হাসপাতালের রেজিস্ট্রার গ্রেফতার

0

লোকসমাজ ডেস্ক॥ রাজধানীর আদাবরে মাইন্ড এইড হাসপাতালে সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার আনিসুল করিম শিপন হত্যার ঘটনায় জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালের রেজিস্ট্রার ডা. আব্দুল্লাহ আল মামুনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। এএসপি শিপন হত্যা মামলায় আদালতে দেয়া আসামিদের স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে তার নাম উঠে আসার পর মঙ্গলবার তাকে গ্রেফতার করে তেজগাঁও বিভাগ পুলিশ। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন তেজগাঁও বিভাগের উপকমিশনার (ডিসি) হারুন অর রশিদ। তিনি বলেন, সিনিয়র এএসপি শিপন হত্যাকাণ্ডে দায়ের করা মামলার এফআইআরভুক্ত ১৫ জনের মধ্যে আমরা ১২ জনকে গ্রেফতার করেছি। গ্রেফতার ১২ জনের মধ্যে চারজন ইতোমধ্যে আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছে।
এসপি শিপন হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে কারা জড়িত, কারা ইন্ধন দিয়েছে এবং কাজের যোগসাজশে শিপন হত্যাকাণ্ড সংঘটিত হয়েছে, কারা সরকারি মানসিক হাসপাতাল থেকে মাইন্ড হাসপাতালে এএসপি শিপনকে নিয়ে গেছে সবকিছু উঠে এসেছে ওই চারজনের স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে। তাদের স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে এই পুরো প্রক্রিয়ার মধ্যে উঠে আসে জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালের রেজিস্ট্রার্ড চিকিৎসক আব্দুল্লাহ আল মামুনের নাম। আজ সকালে বাসা থেকে বের হওয়ার পথে তাকে গ্রেফতার করে আদাবর থানা পুলিশ। ডিসি হারুন অর রশিদ বলেন, গ্রেফতার আব্দুল্লাহ আল মামুন জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালের রেজিস্ট্রার। এই ডাক্তার মামুনই প্রথম ব্যক্তি যার অধীনে সিনিয়র এএসপি শিপন চিকিৎসার জন্য মানসিক হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন। কিন্তু তিনি সিনিয়র এএসপি শিপনকে বেডে শিফ্ট করা, চিকিৎসার ব্যবস্থাসহ কোনো উদ্যোগ না নিয়ে বসিয়ে রাখেন। পরে একটা বেডে তাকে শুইয়ে দিয়ে ইনজেকশন পুশ করেন। এএসপি শিপন ঘুমিয়ে যাওয়ার পর তিনি ফোন করেন মাইন্ড এইড হাসপাতালে। তার এখানে চিকিৎসা হবে না মর্মে ওই মাইন্ড হাসপাতালে প্রেরণের কথা বলেন।
১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দেয়া আসামি মাইন্ড হাসপাতালের ম্যানেজার আদালতে উল্লেখ করেছেন, সরকারি মানসিক হাসপাতালের চিকিৎসক আব্দুল্লাহ আল মামুনই তাকে প্রথমে ফোন করেন বলেন, আমি একটা রোগী পাঠাচ্ছি। আর এসপি শিপন ওই হাসপাতালে যাওয়ার পর আর দশজনের মারধরে হত্যার শিকার হন। গ্রেফতারের পর পুলিশের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে ডা. আব্দুল্লাহ আল মামুন জানান, ২৪ ঘণ্টা জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালে তার থাকার কথা থাকলেও তিনি মূলত বেসরকারি তিনটি হাসপাতালে পার্টটাইম জব করেন, রোগী দেখেন। তা হলো টাঙ্গাইলের ঢাকা ক্লিনিক, এইড ওয়েল ও আদাবরের মাইন্ড এইড হাসপাতাল। ডিসি হারুন বলেন, আদাবরের ওই হাসপাতালে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতর কিংবা স্বাস্থ্য অধিদফতরের কোনো অনুমোদন নেই। এমন একটি হাসপাতালে তিনি কীভাবে চিকিৎসা করান তা জানতে চাইলে তিনি পুলিশকে জানান অন্যরা যেভাবে করেন তিনিও সেভাবে করেন। সরকারি হাসপাতালের রেজিস্ট্রার ও চিকিৎসক হওয়া সত্ত্বেও কেন তিনি সরকারি হাসপাতালে চিকিৎসা না দিয়ে বেসরকারি হাসপাতালে রোগী স্থানান্তর করলেন- এমন প্রশ্নের কোনো জবাব তিনি পুলিশকে দিতে পারেননি। ডিসি হারুন আরও বলেন, মারা যাওয়ার সংবাদ পাওয়ার পর ডা. মামুন ছুটে যান ওই হাসপাতালে। নিজের দায় এড়ানোর জন্য মৃত্যুর সংবাদ জেনেও এএসপি শিপনকে অ্যাম্বুলেন্সযোগে হৃদরোগ ইনস্টিটিউটে পাঠান। আমরা জেনেছি, মাইন্ড এইড হাসপাতালে দালাল রোগী পাঠালে কমিশন পান ১০ শতাংশ। তবে তিনি পান ৩০ শতাংশ। ডা. মামুনের এ ধরনের অপতৎপরতা শুধু চিকিৎসার নামে প্রতারণা নয়, শিপন হত্যাকাণ্ডে তার দায় কোনোভাবে তিনি এড়াতে পারেন না। এ জন্য তাকে গ্রেফতার করা হয়েছে।