বেনাপোলে চারটি পণ্য চালান আটক : দুই সিঅ্যান্ডএফ এজেন্টের লাইসেন্স বাতিল

0

সুন্দর সাহা॥ বেনাপোল স্থলবন্দরে দুটি ঘোষণা বহির্ভূত পণ্য চালানসহ একটি ভারতীয় ও একটি বাংলাদেশি ট্রাক আটক করেছে কাস্টমস কর্তৃপক্ষ। এর মধ্যে একটি চালানে ব্লিচিং পাউডার ঘোষণা দিয়ে কফিসহ বিভিন্ন প্রকার অজানা রাসায়নিক পণ্য এবং অন্যটিতে অ্যালুমিনিয়ামের ঘোষণা দিয়ে আনা হয়েছে বিপুল পরিমাণ ভারতীয় শাড়ি-থ্রিপিস। এ ঘটনায় দুটি সিঅ্যান্ডএফ এজেন্টের লাইসেন্স সাময়িক বাতিল করা হয়েছে। জব্দকৃত পণ্যগুলো বাজেয়াপ্ত করে নিলাম করা হবে। এ দুটি পণ্য চালানে কয়েক লাখ টাকা রাজস্ব ফাঁকি দেয়া হচ্ছিল বলে সংশ্লিস্ট সূত্রে জানা গেছে। এছাড়া, বিজিবির অভিযানে আরও একটি পণ্য চালান আটক হয়েছে। গোপন সংবাদের প্রেক্ষিতে সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট মুক্তি এন্টারপ্রাইজের ছাড় করা এই পণ্য চালানটি শুল্ক ফাঁকি দিয়ে নিয়ে যাওয়া হচ্ছিল বলে অভিযোগ রয়েছে। মুক্তি এন্টারপ্রাইজের মালিকের নাম জসিম উদ্দীন সোহেল। এদিকে, বেনােপাল কাস্টমসের ডিপুটি কমিশনার অনুপম চাকমা আরও একটি পণ্য চালান আটক করেছেন। এই পণ্যচালানটি সম্পর্কে বিস্তারিত কিছু য়ায়নি। তবে এই পণ্য চালানটিতেও ঘোষনা বহিভূত ও অতিরিক্ত পণ্য রয়েছে বলে জানা গেছে। পণ্য চালানটি ছাড় করাতে এশিয়া এন্টারপ্রাইজ কাগজপত্র জমা দিয়েছে। এই সিএন্ডএফ এজেন্টের মালিক হচ্ছেন সেলিম উদ্দিন চৌধরীর মালিকানাধীণ এশিয়া এন্টারপ্রাইজ।
কাস্টমস সূত্রে জানা গেছে, যশোরের বেনাপোলের আমদানিকারক মেসার্স রিড এন্টারপ্রাইজ গত ১১ নভেম্বর ৪ হাজার ৬৭৫ কেজি ব্লিচিং পাউডার ঘোষণা দিয়ে পণ্য আমদানি করে। যার মেনিফেস্ট নম্বর হলো ২৭৫৭৮/১। বিল অব এন্টি নং- সি-৫৪৫২৫। ১৪ নভেম্বর প্রতিষ্ঠানটির সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট বেনাপোলের রিয়াংকা ইন্টারন্যাশনাল পণ্যটি ছাড় করানোর জন্য কাস্টমসে কাগজপত্র দাখিল করে। ১৫ নভেম্বর সন্ধ্যায় বেনাপোল স্থলবন্দরের ৩২ নং শেডের সামনে থেকে ভারতীয় একটি ট্রাক (ডব্লিউবি-২৫ বি-৭১৩৩) থেকে পণ্যগুলো বাংলাদেশি ট্রাকে ওঠানোর সময় কাস্টমসের লোকজন পণ্য চালানটি যাচাই-বাছাই করে তাতে ঘোষণার অতিরিক্ত ৩৬০ কেজি কফি ও এক হাজার ৯২৭ কেজি রাসায়নিক পণ্য পায়। এই ঘটনায় সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট রিয়াংকা ইন্টারন্যাশনালের লাইসেন্স সাময়িক বাতিল করা হয়েছে। এই সিঅ্যান্ডএফ এজেন্টের মূল মালিক হচ্ছেন রতন কৃষ্ণ হালদার। আমদানিকারক এমএস রিড এন্টারপ্রাইজের মালিক পারভেজ পোলক লাল্টু ওই সিঅ্যান্ডএফ এজেন্টেরও পার্টনার। এ বিষয়ে মেসার্স রিয়াংকা ইন্টারন্যাশনালের পার্টনার পলক পারভেজ লাল্টুর সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি ফোন রিসিভ করেননি।
অন্যদিকে এলটেক অ্যালুমিনিয়াম ইন্ডাস্ট্রি গত ৯ নভেম্বর ভারত থেকে ১২ হাজার ৯০৮ কেজি অ্যালুমিনিয়াম ইনগট আমদানির ঘোষণা দেয়। যার বিল অব এন্ট্রি নং-সি-৫৩০৭৮। সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট মের্সাস ট্রিম ট্রেড। পরে পণ্য চালানটি বেনাপোল শুল্ক গোয়েন্দা ও তদন্ত সার্কেলের কর্মকর্তারা পরীক্ষা করে ভারতীয় ১৮৬ পিস থ্রিপিস, শাড়ি ২৫৪ পিস, লেহেঙ্গা ৩৭ পিস, পাঞ্জাবি ৩৭ পিস, থান কাপড় ২৩ দশমিক ৬ মিটার, ফলস কাপড় ৪ পিস, খালি ব্লাড ব্যাগ ৬০ পিসসহ অন্যান্য পণ্য দেখতে পান। এ সময় বাংলাদেশি একটি ট্রাক (ঢাকা মেট্রো-ট-১৬-৮১৬৩) জব্দ করা হয়। এ ঘটনায় সংশ্লিষ্ট সিঅ্যান্ডএফ এজেন্টের লাইসেন্স সাময়কি বাতিল করা হয়েছে। বিষয়টি নিশ্চিত করে বেনাপোল কাস্টমসের সহকারী কমিশনার কল্যাণ মিত্র চাকমা জানান, মালামাল পরীক্ষণ শেষে অ্যাসেসমেন্টের পর বলা যাবে কত টাকার শুল্ক ফাঁকি দেয়া হচ্ছিল। এই আমদানিকারক ও সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট এর আগে কতটি পণ্য চালান আমদানি করেছে তাও খতিয়ে দেখা হচ্ছে। মের্সাস ট্রিম ট্রেডের স্বত্বাধিকারী জিয়াউর রহমান জিয়া জানান, এ ঘটনার সঙ্গে আমার প্রতিষ্ঠান জড়িত নয়, গাড়িচালক অন্যদের পণ্য আমাদের চালানের সঙ্গে এনেছে। আমরা চালককে পুলিশে সোপর্দ করব।
এদিকে বন্দরে মিথ্যা ঘোষণায় পণ্য আমদানি বেড়েই চলছে। কখনও কাস্টমস-বন্দরকে ম্যানেজ করে আবার কখনও বিভিন্ন পরিচয়ে হুমকি-ধমকি দিয়ে চলছে সরকারের রাজস্ব ফাঁকির উৎসব। মাঝে মধ্যে দু-একটি চালান আটক হলেও অধিকাংশই থাকছে ধরাছোঁয়ার বাইরে। বেনাপোল সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মফিজুর রহমান সজন জানান, শুল্ক ফাঁকির ঘটনা দুঃখজনক। এসব ঘটনায় প্রকৃত ব্যবসায়ীদের সুনাম ক্ষুণ্ন হচ্ছে। সাধারণ ব্যবসায়ীদের হয়রানি বেড়ে যাচ্ছে। এ ব্যাপারে বেনাপোল কাস্টমসের কমিশনার মো. আজিজুর রহমান বলেন, আমরা শুল্ক ফাঁকি প্রতিরোধে অবিরাম চেষ্টা করে যাচ্ছি। ইতোমধ্যে শুল্ক ফাঁকির অভিযোগে আমরা অনেক প্রতিষ্ঠানের সিঅ্যান্ডএফ লাইসেন্স বাতিল করেছি। ব্লিচিং পাউডারের সঙ্গে কফি ও অ্যালুমিনিয়ামের সঙ্গে কাপড় আনার ঘটনায় আমরা সিঅ্যান্ডএফ এজেন্টের লাইসেন্স সাময়িক বাতিল ও পণ্যগুলো বাজেয়াপ্ত করেছি। এগুলো নিলাম করা হবে। সংশ্লিষ্ট সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট যদি সঠিক ব্যাখা দিতে না পারে তাহলে তাদের লাইসেন্স স্থায়ীভাবে বাতিল হয়ে যাবে। অন্য পণ্য চালান দুটিতেও শুল্ক ফাঁকির অভিযোগে গটনা প্রমানিত হলে এই লাইসেন্স দুটিও বাতিল করা হবে।