ভোট ডাকাতি থেকে জনদৃষ্টি ভিন্ন দিকে সরাতেই বাসে আগুন : প্রিন্স

0

লোকসমাজ ডেস্ক॥ রাজধানীতে নয়টি বাসে অগ্নিসংযোগের ঘটনায় ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ বিএনপিকে দায়ী করে যে বক্তব্য দিয়েছে তা উদ্দেশ্যমূলক বলে দাবি করেছেন দলটির দফতরের দায়িত্বপ্রাপ্ত সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স। তিনি বলেছেন, ঢাকা-১৮ ও সিরাজগঞ্জ-১ আসনে ভোট ডাকাতির পর নির্বাচন থেকে জনদৃষ্টি ভিন্নখাতে প্রবাহিত করতেই গণপরিবহনে আগুন দেয়া হয়েছে। রোববার (১৫ নভেম্বর) বিকেলে রাজধানীর নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এ অভিযোগ করেন তিনি। দুই আসনের উপনির্বাচনের দিন (১২ নভেম্বর) আকস্মিকভাবে রাজধানীর পৃথক স্থানে নয়টি বাসে আগুন দেয় দুর্বৃত্তরা।
সেই প্রসঙ্গ টেনে প্রিন্স বলেন, আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরসহ অন্যান্য নেতারা গণপরিবহনে অগ্নিসংযোগের দায়-দায়িত্ব উদ্দেশ্যমূলকভাবে বিএনপির ওপর চাপিয়ে দেয়ার ষড়যন্ত্র করছেন। বিএনপি সন্ত্রাসের রাজনীতিতে বিশ্বাস করে না। তিনি অভিযোগ করে বলেন, সরকারদলীয় প্রার্থীদের বিজয়ী করতে আজ্ঞাবাহী নির্বাচন কমিশনের সহায়তায় আওয়ামী সন্ত্রাসীদের নজীরবিহীন ভোট ডাকাতি, জালিয়াতি ও সন্ত্রাসের মাধ্যমে প্রহসনের নির্বাচন সম্পন্ন হওয়ার পর নির্বাচন থেকে জনদৃষ্টি ভিন্নখাতে প্রবাহিত করতেই ঢাকায় কয়েকটি গণপরিবহনে আগুন দেয়া হয়েছে। এরপর বিএনপি এবং এর অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের পাঁচ শতাধিক নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে বানোয়াট ও হীন রাজনৈতিক উদ্দেশ্য হাসিলের জন্য মিথ্যা মামলা দায়ের করা হয়েছে।
মামলার এজাহারে বাদী হিসেবে যার নাম রয়েছে তিনি মামলা দায়ের করেননি বলে পত্রিকার সংবাদের বরাত দিয়ে প্রিন্স বলেন, এসব মিথ্যা মামলায় করোনাসহ বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতাল বা বাসায় কোয়ারেন্টাইন বা চিকিৎসাধীন থাকা নেতাকর্মী, পঙ্গুত্ব বরণকারী নেতাকর্মী, রাজনৈতিক-সাংগঠনিক বা ব্যবসায়িক কাজে ঢাকার বাইরে অবস্থান করা নেতাকর্মী, স্থায়ীভাবে ঢাকার বাইরের অঞ্চলে বসবাসরত নেতাকর্মীদেরও জড়ানো হয়েছে। তাতে প্রমাণিত হয়েছে, সরকার অতীতের মতো এখনো প্রতিহিংসা ও উদ্দেশ্যমূলকভাবে বিএনপি নেতাকর্মীদেরকে হয়রানি করতে বদ্ধপরিকর। ছাত্রদল নেতা মোস্তাফিজুর রহমান এবং মিজানুর রহমান মিজানকে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর পরিচয়ে তুলে নেয়ার অভিযোগ করে প্রিন্স বলেন, বর্তমান সরকার বিএনপিকে রাজনৈতিকভাবে মোকাবিলায় ব্যর্থ হয়ে গুমের মতো নিষ্ঠুর অপকর্ম করে এ দলকে নিষ্ক্রিয় করে দিতে চাইছে। আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরাই মোস্তাফিজুর রহমান এবং মিজানুর রহমান মিজানকে উঠিয়ে নিয়ে গেছে। তিনি এ দুই ছাত্রদল নেতাকে শিগগির জনসম্মুখে নিয়ে আসার আহ্বান জানিয়ে বলেন, নচেৎ তাদের অনাকাঙ্ক্ষিত কিছু ঘটলে এর দায়-দায়িত্ব সরকারকেই বহন করতে হবে।
দেশ এক মৃত্যু উপত্যকা ও গুমের রাজ্যে পরিণত হয়েছে দাবি করে প্রিন্স বলেন, নিজেদের একচ্ছত্র আধিপত্য ও এক ব্যক্তির শাসন কায়েম করতে বিরোধী নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে মিথ্যা, বানোয়াট ও রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত মামলা দায়ের করে তাদের কারান্তরীণ করার পাশাপাশি গুম-খুনের নেশায় বেপরোয়া হয়ে উঠেছে বর্তমান জোর-জবরদস্তির অনৈতিক সরকার। তিনি অভিযোগ করেন, বিগত ১২ বছরে সরকার তাদের বিভিন্ন অনুগত বাহিনী বা এজেন্সি দিয়ে বিএনপির পাঁচ শতাধিক নেতাকর্মী ছাড়াও ভিন্নমতাবলম্বী সাংবাদিক, লেখক, পরিবেশবাদী কর্মীদের গুম করেছে। সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের কয়েকজন সিনেটর সেদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর কাছে লেখা চিঠিতে বাংলাদেশে আওয়ামী সরকারের নির্দেশে র্যাব কর্তৃক চার শতাধিক মানুষকে বিনা বিচারে হত্যা, গুমসহ মানবাধিকার লঙ্ঘনের বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করে তাদের ওপর যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞা আরোপের আহ্বান জানিয়েছেন। এর মাধ্যমে দেশের মান-মর্যাদা ধুলিস্যাৎ হয়েছে এবং মানবাধিকার লঙ্ঘনের ভয়াবহ চিত্র ফুটে উঠেছে। তারপরও সরকার গুমসহ মানবাধিকার লঙ্ঘন করার সংস্কৃতি থেকে বিরত থাকছে না। প্রিন্স বলেন, বর্তমান ফ্যাসিবাদী সরকার রাষ্ট্রক্ষমতাকে চিরকাল কুক্ষিগত রাখতে দেশব্যাপী বিএনপি এবং এর অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনসহ বিরোধী দলীয় নেতাকর্মীদের হত্যা, বিচার বহির্ভূতভাবে হত্যা ও গুম করার মাধ্যমে এক ভীতিকর পরিস্থিতির সৃষ্টি করেছে।