আজ দীপাবলি

0

সুন্দর সাহা॥ আজ দেশব্যাপী সনাতন হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের দীপাবলি ও শ্যামাপূজা অনুষ্ঠিত হবে। সনাতন হিন্দু সম্প্রদায় সন্ধ্যায় প্রতিটি বাড়িতে প্রদীপ প্রজ্বালনের মধ্য দিয়ে দেশ মাতৃকার মঙ্গল কামনা ও মহামারি করোনার থেকে রক্ষা পাওয়ার পাশাপাশি প্রয়াত স্বর্গীয় পিতা-মাতা, আত্মীয়স্বজনের আত্মার শান্তি কামনা করবেন। স্বামী-সন্তান ও স্বজনরা যাতে সুষ্ঠু ও সুন্দর থাকতে পারে এবং দেশ ও জাতির কল্যাণ কামনায় দীপাবলি তথা শ্রীশ্রীশ্যামা মায়ের কাছে প্রার্থনা করবেন তারা। শ্রীশ্রীশ্যামা পূজা উপলে এবার সনাতন হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানগুলো তেমন কোনো কর্মসূচি গ্রহণ করেনি। আজ দীপাবলির পাশাপাশি অধিকাংশ হিন্দু বাড়িতে শ্রীশ্রী লক্ষ্মী পূজার আয়োজন করা হবে। অবশ্য শ্রীশ্রী লক্ষ্মী পূজার আয়োজন চলবে কালও। অলক্ষ্মীকে তাড়িয়ে মা লক্ষ্মীর আগমনের জন্য সনাতন হিন্দুরা আজ ও কাল উপাসনা করবেন ঘরে ঘরে। এ বছর করোনাভাইরাসের কারণে কালী পূজায় কোনো উৎসব হবে না। অনাড়ম্বর ভাবে ভক্তরা দেবীর আরাধনা করবেন।
সনাতন হিন্দুরা বিশ্বাস করেন ব্রহ্ম বা ঈশ্বরই হচ্ছেন সর্বশক্তির মূলধারা। তারা শক্তিতে সকলে শক্তিমান। কালীর অন্য নাম শ্যামা বা আদ্যাশক্তি। শাক্ত ধর্মাবলম্বীদের তন্ত্রশাস্ত্র মতে, তিনি দশমহাবিদ্যা। তন্ত্রমতে পূজিত প্রধান দশজন দেবীর মধ্যে প্রথম। শাক্তরা কালীকে বিশ্বব্রহ্মা-সৃষ্টির আদিকারণ মনে করে। সনাতন হিন্দু সমাজে কালীর মাতৃরূপের পূজা বিশেষ জনপ্রিয়। কালী সংহারমূর্তি। কিন্তু এই সংহার নিষ্ঠুর ধ্বংস নয়। এই সংহার সংহরণ অর্থাৎ আপনার মধ্যে আকর্ষণ। ঢেউ যেমন সমুদ্রে সৃষ্টি হয়ে আবার সমুদ্রে মিলিয়ে যায়- সংহার তেমনই একটি ব্যাপার। আবার আদ্যাশক্তি হলো বিশ্বপ্রসবকারিণী মায়ের উদর থেকেই জগতের সৃষ্টি। তখন তিনি সৃজনী শক্তি। তাঁর ভিন্ন ভিন্ন ধরনের মূর্তি চোখে পড়ে। সাধারণভাবে তাকে চারটি হাতে খড়্গ অসুরের ছিন্নমুন্ডু, বর ও অভয়মুদ্রা গলায় মানুষের মুন্ডের মালা, বিরাট জিভ, কালো রং, এলোকেশী এবং স্বামী শিবের বুকের ওপর দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা যায়। কালীর বিভিন্ন রূপভেদ আছে। যেমন; দণিাকালী, শ্মশানকালী, ভদ্রকালী, রাকালী, গুহ্যকালী, মহাকালী, চামুন্ডা ইত্যাদি। আবার বিভিন্ন মন্দিরে ব্রহ্মময়ী, ভবতারিণী, আনন্দময়ী, করুণাময়ী ইত্যাদি নামে কালী প্রতিমা প্রতিষ্ঠিত ও পূজিত হয়। সাধারণত দুর্গাপূজার বিজয়া পরবর্তী অমাবস্যার রাতেই দীপাবলীর আয়োজন করা হয়। দীপাবলীর রাতে অনুষ্ঠিত হয় কালীপূজা। দীপাবলী ভারতে ‘দিওয়ালী’ নামেও পরিচিত। জীবন ও জগতের সমস্ত অন্ধকার দূর করতে এই রাতে প্রদীপ জ্বালানো হয়। যাতে পৃথিবী প্রতিনিয়ত অশুভ শক্তির হাত থেকে রা পায়। কালীপূজাতে গৃহে বা মণ্ডপে মৃন্ময়ী প্রতিমা নির্মাণ করে পূজা করা হয়। মধ্যরাতে তান্ত্রিক পদ্ধতিতে মন্ত্রোচ্চারণের মাধ্যমে পূজা অনুষ্ঠিত হয়। দেবীকে ছিন্নমাথাসহ বলির পশুর রক্ত, মিষ্টান্ন, অন্ন বা লুচি, মাছ ও মাংস উৎসর্গ করা হয়। গৃহস্থবাড়িতে সাধারণত অতান্ত্রিক ব্রাহ্মণ্যমতে আদ্যাশক্তিরূপে কালীর পূজা হয়। দেবীর পূজায় ছাগল, মেষ বা মহিষ বলির প্রথা রয়েছে। আর্য ঋষিরা এই সর্বশক্তিমান ঈশ্বরের আরাধনা করেছেন মাতৃরূপে। দেবী শ্যামা বা কালী সেই মাতৃরুপিনী ঈশ্বর। যিনি ঋষিদের দৃষ্টিতে প্রকৃতি রূপিনী, শক্তি। মাতৃসাধকের কাছে মা ছাড়া বিশ্বজগতের কোন অস্তিত্ত্ব নেই। শ্রীশ্রী শ্যামা বা কালী মহাকালের শক্তিমূর্তি। সেই শক্তির আরাধনায় আজ প্রতিমা স্থাপন, পূজা আরম্ভ ও অঞ্জলী প্রদান করা হবে। পরদিন রাতে প্রতিমা বিসর্জন করা হবে। ইতোমধ্যে পূজার প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে। সারা দেশের মত যশোরেও অনাড়ম্বর আয়োজন করা হয়েছে মায়ের আরাধনায়।