করোনাভীতি কাটিয়ে ঢাকায় ফুটবল উৎসবে নেপালের বিরুদ্ধে বাংলাদেশের প্রতিশোধ

0

লোকসমাজ ডেস্ক॥ করোনা লকডাউনের কারণে অনাকাঙ্ক্ষিত বিরতির পর দেশের ক্রীড়াঙ্গনে মাঠের খেলা ফিরেছে আরও আগে। বিসিবি প্রেসিডেন্টস কাপ ক্রিকেটের মধ্য দিয়ে সরব হয়েছে দেশের ক্রীড়াঙ্গন। এছাড়া অনলাইন প্ল্যাটফর্মেও হয়েছে আরও কিছু খেলা; কিন্তু কোনোটিতেই ছিল না দর্শক সমাগমের অনুমতি। অবশেষে দর্শকরা পেয়েছেন সুখবর। প্রায় দশ মাস পর আন্তর্জাতিক ফুটবলে ফিরেছে বাংলাদেশ জাতীয় দল। আর এ ম্যাচ উপলক্ষ্যে দেয়া হয়েছে মাঠে দর্শক প্রবেশের অনুমতি। বাংলাদেশ ও নেপালের মধ্যকার মুজিববর্ষ ফিফা আন্তর্জাতিক ফুটবল সিরিজে মোট ধারণক্ষমতার এক-তৃতীয়াংশ পরিমাণ দর্শক মাঠে প্রবেশের সুযোগ দিয়েছে বাফুফে। এ সুযোগটা যেন দুই হাতে লুফে নিয়েছেন দেশের ফুটবলপ্রেমীরা। ম্যাচ শুরু বিকেল ৫টায়, অথচ দুপুর ৩টার আগে থেকে বঙ্গবন্ধু স্টেডিয়ামের চত্বরে শুরু হয় দর্শকদের ভিড়, সবার উদ্দেশ্য একটাই- টিকিট সংগ্রহ করা এবং যত আগে পারা যায় মাঠে প্রবেশ করা। করোনাকালীন বিধিনিষেধের কারণে ২৪ হাজারের বদলে টিকিট ছাড়া হয়েছে ৮ হাজার, এ কারণেই মূলতঃ টিকিট নিয়ে একটা ভয় ছিলো দর্শকদের মনে।
গতকালও সারাদেশে করোনা আক্রান্তের সংখ্যা রেকর্ড করা হয়েছে ১৭৬৭ জন। মৃত্যু হয়েছে ১৯ জনের। অর্থাৎ করোনা পরিস্থিতি যে খুব একটা ভালো অবস্থায় আছে, তাও বলা যায় না। এর মধ্যেই সব ভয় উপেক্ষা করে বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়ামে বসেছে ফুটবল উৎসব। ম্যাচ শুরুর প্রায় ঘণ্টাখানেক আগে থেকে মাঠে প্রবেশ করতে শুরু করেন দর্শকরা। বাফুফের বেধে দেয়া নিয়মের কারণে সবার মুখেই ছিল মাস্ক, গেটে ঢোকার মুখেও মানতে হয়েছে শারীরিক দুরত্ব। দশ মাস আগে বঙ্গবন্ধু গোল্ডকাপের ম্যাচে এসব মানতে হয়নি দর্শকদের। করোনাকালীন নিউ নরমালের কারণে এসব নিয়ম মানতে হলেও কোনো বিরক্তির ছাপ ছিল না কারও মধ্যে, সবাইকেই দেখা গেছে বেশ উৎফুল্ল। মাঠের মধ্যে যখন দুই দলের খেলোয়াড়রা অনুশীলন করছিলেন, তখন থেকেই গ্যালারিতে দর্শকদের উপস্থিতি ছিল চোখে পড়ার মতো। ম্যাচ শুরু হতে হতে ৮ হাজার দর্শকদের প্রায় সবাই চলে আসেন মাঠে। বাফুফের পক্ষ থেকে সতর্কতাস্বরুপ গ্যালারিতে দাগ দিয়ে দেয়া হয়েছে সামাজিক দূরত্ব মানার জন্য। তবে দল বেধে আসা দর্শকদের অনেকেই সেটি মানতে পারেননি, সবাই খেলা দেখছেন পাশাপাশি বসেই। করোনাভাইরাসের ঝুঁকি এখনও বহাল থাকলেও প্রাণের খেলা মাঠে ফেরায় এ ভয়টা হয়তো একপাশেই রেখে দিয়েছেন দর্শকরা। দল বেঁধে মাঠে এসে প্রমাণ করেছেন দীর্ঘদিন তারা অপেক্ষায় ছিলেন প্রিয় দলের মাঠে ফেরার। শুরু হয় মাঠের খেলা। অতীত রেকর্ড অনুযায়ী নেপালের বিপক্ষে বাংলাদেশই ছিল ফেবারিট। জেমি ডে’র শিষ্যরা ফেবারিটদের মতো খেলেই মুজিববর্ষ ফিফা আন্তর্জাতিক সিরিজে ১-০ ব্যবধানে এগিয়ে গেছে। দ্বিতীয় ম্যাচ হবে ১৭ নভেম্বর। এই ম্যাচ দিয়ে দীর্ঘ প্রায় ১০ মাস পর আন্তর্জাতিক ফুটবলে ফিরেছে বাংলাদেশ। আর সে ফেরাটা জয়েই রাঙালেন জামাল, জীবন, সুফিলরা। শুরু থেকেই এগিয়ে যাওয়ার চেষ্টায় ছিল বাংলাদেশ। সে চেষ্টা ফল পায় দশম মিনিটেই। সাদউদ্দিনের ক্রসে চলন্ত বলে গোল করেন এ সময়ের দেশসেরা ফরোয়ার্ড নাবিব নেওয়াজ জীবন। ৭৯ মিনিটে ব্যবধান দ্বিগুণ করেন বদলি খেলোয়াড় মাহবুবুর রহমান সুফিল। রহমত মিয়ার বাড়ানো বল ধরে একক প্রচেষ্টায় বল নিয়ে নেপালের বক্সে ঢুকে পড়েন সুমন রেজার পরিবর্তে মাঠে নামা সুফিল। কোন ভুল করেননি তিনি, কোনাকুনি শটে বল পাঠিয়ে দেন জালে। নেপাল দল চেষ্টা করেছিল ম্যাচে ফিরতে। গোটাদুয়েক ভালো আক্রমণও ছিল তাদের। কিন্তু বাংলাদেশের রক্ষণ দেয়াল ভাঙতে পারেনি নাওয়াং শেরেস্তা-বিক্রম লামারা। দলটির কোচ বালগোপাল মহারজন বলেছিলেন, তারা আগের মতোই ঢাকায় ভালো পারফরম্যান্স করতে চান। কিন্তু মাঠে তাদের চেয়ে বাংলাদেশ ভালো ফুটবল উপহার দিয়েই জয় আদায় করে নিয়েছে। নেপালে বিপক্ষে ম্যাচে অভিষেক হয়েছে গোলরক্ষক আনিসুর রহমান জিকু ও স্ট্রাইকার সুমন রেজার। নেপালের বিপক্ষে সিরিজের প্রথম ম্যাচে অনেকটা তারুণ্য নির্ভর দলই নামিয়েছিলেন জেমি ডে। কোচের আস্থার মর্যাদা রেখে তাকে ২-০ গোলের দুর্দান্ত এক জয় উপহার দিয়েছেন জামাল ভূঁইয়ারা।
নেপালের বিপক্ষে জয় যেন ধীরে ধীরে অধরার দিকেই যাচ্ছিল। সর্বশেষ দুটি ম্যাচে হিমালয়ের দেশের কাছে হারতে হয়েছে লাল-সবুজ জার্সিধারীদের। তাই তো বৃহস্পতিবার ম্যাচপূর্ব সংবাদ সম্মেলনে বাংলাদেশ অধিনায়ক জামাল ভূঁইয়া বলেছিলেন-ম্যাচটি জিততে চাই, জিততে হবে। কথা রেখেছেন বাংলাদেশের ফুটবলাররা। শুক্রবার বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়ামে ফিফা ফ্রেন্ডলি ম্যাচে নেপালকে ২-০ গোলে হারিয়েছে বাংলাদেশ। এতে আন্তর্জাতিক ফুটবলে দীর্ঘ ৫ বছর পর নেপালের বিপক্ষে জয় পেল বাংলাদেশ। সর্বশেষ জয়টি ছিল ২০১৫ সালের ডিসেম্বরে ঢাকায়। সেটাও ছিল ফিফা ফ্রেন্ডলি ম্যাচ।২০১৮ সালে বঙ্গবন্ধু গোল্ডকাপে নেপালের বিপক্ষে হেরে বিদায় নিয়েছিল বাংলাদেশ। গত বছর এসএ গেমস ফুটবলেও নেপালের কাছে হেরেছিল লাল-সবুজ জার্সিধারীরা। বাংলাদেশের ফুটবলারদের মাথায় ছিল প্রতিশোধের নেশা। শুক্রবার তারা ২-০ গোলের সহজ জয়ে নিয়েছে আগের টানা দুই হারের প্রতিশোধ।
বাংলাদেশ একাদশ
আনিসুর রহমান জিকু, তপু বর্মণ, বিশ্বনাথ ঘোষ, রহমত মিয়া, রিয়াদুল হাসান, জামাল ভূইয়া (ফাহাদ), মোহাম্মদ ইব্রাহিম, সাদউদ্দিন, নাবীব নেওয়াজ জীবন, মানিক মোল্লা (সোহেল রানা) ও সুমন রেজা (সুফিল)।
নেপাল একাদশ
কিরন কুমার লিম্বু (অধিনায়ক), অজিত ভান্ডারি, অনন্ত তামাঙ, বিক্রম লামা (অনিক বিস্তা), তেজ তামাং, অঞ্জন বিশট, সুজল শ্রেষ্ঠ, সুমন আরিয়াল, নয়াযুগ শ্রেষ্ঠ, রবিশংকর পাসওয়ান ও বিকাশ খাওয়াস।
এখন জামাল ভুঁইয়া, তপু বর্মন, সাদ উদ্দিনরা জয় উপহার দিতে পারলেই প্রশান্তি হাসি নিয়ে বাড়ি ফিরতে পারবেন এ দর্শকরা।