যে কারণে হারলেন ট্রাম্প

0

লোকসমাজ ডেস্ক॥ মার্কিন নির্বাচনে হেরে গেছেন প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্প। কিন্তু কেন! এ প্রশ্ন মার্কিন মুলুক ছাপিয়ে ছড়িয়ে পড়েছে গোটা বিশ্বে। সঙ্গে সঙ্গে চলছে বিশ্লেষণও। কেউ বলছেন, ট্রাম্প হেরে গেছেন তার নিজের কারণেই। তার মধ্যে রয়েছে, শেষের দিকে তিনি নিজেকে একনায়কের মতো উপস্থাপন করেছেন। নির্বাচনের আগে তিনি ফল মেনে নিতে অস্বীকৃতি জানান। এ বৈশিষ্ট্য থাকে শুধুমাত্র একজন একনায়কের মধ্যে। ক্ষমতার চার বছরে তিনি বহুবার টুইটে ব্যবহার করেছেন বর্ণবাদী ভাষা।
এ ছাড়াও, শেতাঙ্গ আধিপত্যবাদের বিরুদ্ধে জোরালো কোনো নিন্দা জানাননি। তার বিরুদ্ধে আরো অভিযোগ রয়েছে যে, যুক্তরাষ্ট্রের প্রচলিত যেসব মিত্র আছে, তিনি তাদেরকে দূরে ঠেলে দিয়েছেন। যারা যুক্তরাষ্ট্রের শত্রু বলে পরিচিত তাদের সঙ্গে সম্পর্ক বাড়িয়েছেন। তিনি একতরফাভাবে জেরুজালেমকে ইসরাইলের রাজধানী বলে স্বীকৃতি দিয়েছেন। তার আচরণকে অনেকেই আগ্রাসী আচরণের সঙ্গে তুলনা করেছেন। অনেক রিপাবলিকান মনে করেছেন তার কথাবার্তা অনেকটা অপ্রেসিডেন্টসুলভ। ২০১৬ সালের নির্বাচনে ডেমোক্রেট প্রার্থী হিলারি ক্লিনটন যেসব রাজ্যে জিতেছিলেন, তিনি সেগুলো থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছেন। বাতিল করেছেন প্যারিস জলবায়ু চুক্তি। এ ছাড়া বহুবিধ কারণে তিনি ২০২০ সালের নির্বাচনে হেরেছেন। নিউ ইয়র্ক থেকে বিবিসির সাংবাদিক নিক ব্রায়ান্ট একটি বিশ্লেষণ তুলে ধরেছেন। এতে বলা হয়, যুক্তরাষ্ট্রে এ যাবৎকাল ক্ষমতাসীন চারজন প্রেসিডেন্ট দ্বিতীয় মেয়াদে নির্বাচিত হতে পারেননি। তার মধ্যে ট্রাম্প অন্যতম।
চার বছর আগে তাকে যারা সমর্থন করেছিলেন তার আগ্রাসী আচরণের কারণে সেসব মানুষের অনেকেই মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে। গতবার তাকে যেসব রিপাবলিকান সমর্থন দিয়েছিলেন এবং ভোট দিয়েছিলেন এবার তারা মনে করেছেন, ডনাল্ড ট্রাম্পের প্রেসিডেন্সি একদমই প্রেসিডেন্টসুলভ নয়। তারা জানতেন, ট্রাম্প প্রচলিত রীতি অনুযায়ী চলবেন না। একইসঙ্গে তারা দেখতে পেয়েছেন, তিনি এমন সব আচরণ করেছেন যা আপত্তিকর তবে তার পক্ষেই তিনি সবসময় অবস্থান নিয়েছেন। তিনি বর্ণবাদী উত্তেজনায়ও উস্কানি দিয়েছেন। নানা বর্ণের মানুষদের অবমাননা করতে ব্যবহার করেছেন বর্ণবাদী টুইটও। শেতাঙ্গ আধিপত্যবাদের নিন্দা জানাতে ব্যর্থ হয়েছেন তিনি। ট্রাম্প যুক্তরাষ্ট্রের প্রচলিত মিত্রদের সঙ্গে বাড়িয়েছেন দূরত্ব। কিন্তু বন্ধুত্ব বাড়িয়েছেন রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের মতো শক্তিধর একনায়কদের সঙ্গে। তিনি এমন সব শব্দ ব্যবহার করেছেন যাতে তাকে মাঝেমধ্যে মনে হয়েছে ‘ক্রিমিনাল বস’। এ কথা বলেই নিক ব্রায়ান আরো বলেছেন, এ ক্ষেত্রে উদাহরণ হিসেবে সাবেক আইনজীবী মাইকেল কোহেনের কথা উল্লেখ করা যায়। তাকে তিনি ‘র‌্যাট’ হিসেবে আখ্যায়িত করেন। এরপরে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের আগেই তিনি ফল মেনে নিতে অস্বীকৃতি জানান। এমনকি নির্বাচনে পরাজয় মেনে নিতেও অস্বীকৃতি জানান ট্রাম্প। পরিষ্কার জানিয়ে দেন, হেরে গেলে শান্তিপূর্ণভাবে ক্ষমতা হস্তান্তর করবেন না। এক্ষেত্রে ২০১৬ সালে ট্রাম্পকে সমর্থন করেছিলেন চাক হোয়েনেস্টেইন। এবার তিনি ভোট দিয়েছেন জো বাইডেনকে। তিনি বলেন, জনগণ ক্লান্ত। তারা যুক্তরাষ্ট্রে স্বাভাবিক অবস্থা ফিরুক সেটা চায়। তারা এই ঘৃণার অবসান চায়। জনগণ এখন যুক্তরাষ্ট্রের ঐক্যের পক্ষে। এ কারণেই, মানুষ জো বাইডেনকে প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত করেছে। ট্রাম্পের আরো একটি রাজনৈতিক সমস্যা রয়েছে। সেটি হচ্ছে, তিনি তার সমর্থনের মূল ভিত্তির বাইরে ভোটারদের কাছে নিজের গ্রহণযোগ্যতা বাড়াতে ব্যর্থ হয়েছে। এ গ্রহণযোগ্যতা বাড়ানোর জন্য তিনি ন্যূনতম চেষ্টাও করেননি। ২০১৬ সালে তিনি ৩০টি রাজ্যে বিজয়ী হয়েছিলেন এবং এমনভাবে শাসন করেছেন যেন তিনি তার আদর্শ অনুযায়ী একটি রক্ষণশীল যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট। গত ১০০ বছরের মধ্যে তিনিই সবথেকে বিভক্তি সৃষ্টিকারী প্রেসিডেন্ট। গত নির্বাচনে যে ২০টি রাজ্য তার প্রতিদ্বন্দ্বী হিলারি ক্লিনটনকে ভোট দিয়েছিল সেখানে এবার নিজের পক্ষে সমর্থন আনতে কোনো চেষ্টা করেননি ট্রাম্প। চারটি বছর শেষ হওয়ার পরে অনেক ভোটার তার আচরণকে নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করেছে। তারা চেয়েছিলেন, হোয়াইট হাউসে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের আচরণ হবে অধিক প্রচলিত রীতিতে। তার কুৎসিত ভাষা এবং হার না মানা গোয়ার্তুমির কারণে তারা ক্লান্ত হয়ে পড়েছিলেন। তাই তারা যুক্তরাষ্ট্রের স্বাভাবিকতা ফিরুক এটাই চেয়েছেন।