যশোরে আইনজীবীর সংবাদ সম্মেলন : পিবিআই পরিদর্শকের বিরুদ্ধে বোনের মৃত্যুরহস্য ভিন্নখাতে নেয়ার অভিযোগ

0

স্টাফ রিপোর্টার ॥ যশোরের একজন শিক্ষানবিশ আইনজীবী তার বোনের মৃত্যুরহস্য উন্মোচনে আদালতের আশ্রয় নিয়ে বিপাকে পড়েছেন। রহস্যজনক মৃত্যুর শিকার বোনের লাশের ময়নাতদন্তের জন্য আদালতের দ্বারস্থ হন তিনি। তার আবেদনের প্রেক্ষিতে আদালত কবর থেকে লাশ উত্তোলন করে ময়নাতদন্তের আদেশ দিলেও পিবিআই যশোরের পরিদর্শক আসামিদের পক্ষে প্রতিবেদন দিয়ে মামলাটি ভিন্নখাতে নেয়ার অপচেষ্টা চালাচ্ছেন বলে সংবাদ সম্মেলনে অভিযোগ করা হয়।
গতকাল শনিবার দুপুরে প্রেসকাব যশোরে সংবাদ সম্মেলনে যশোর সদর উপজেলার মৃত আবদুল মান্নান মুন্সীর ছেলে জুয়েল আক্তার (যশোর বারের শিক্ষানবিশ আইনজীবী) বলেন, ১৯৯৭ সালে তার বোন বিউটি খাতুন (৪৫) এর সাথে যশোরের শার্শা উপজেলার বাগআঁচড়া গ্রামের মৃত হাবিবুর রহমান সরদারের ছেলে ইসরাফিল সরদারের বিয়ে হয়। বিয়ের পর থেকেই তার দুলাভাই ইসরাফিল সরদার বোন বিউটি খাতুনের ওপর যৌতুকের দাবিতে নানা অত্যাচার করতে থাকেন। এক পর্যায়ে তার কাছে ৮ লাখ টাকা যৌতুক দাবি করেন। এ অবস্থায় বোনের সুখের কথা চিন্তা করে তাকে ৮ লাখ টাকা পরিশোধ করেন তিনি। কিন্তু এ টাকা পেয়েও ইসরাফিল সরদার ক্ষ্যান্ত হননি। তিনি আরও টাকার জন্য প্রতিনিয়ত তার বোনের ওপর অমানুষিক নির্যাতন চালাতে থাকেন। বাধ্য হয়ে তাকে বিভিন্ন সময়ে আরও ৫ লাখ টাকা দিতে বাধ্য হন তারা। সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, সাংসারিক এই অশান্তির মাঝে অর্থলোভী ইসরাফিল সরদার হামিদা নামের এক গৃহবধূর সাথে পরকীয়ায় জড়িয়ে পড়েন। বিষয়টি এলাকায় জানাজানি হয়ে গেলে গত ২০১৫ সালের ১৭ জুন ওই গৃহবধূকে বিয়ে করেন তিনি। এরপর থেকে গত কয়েক বছর ধরে তার বোনকে অবহেলা করতে থাকেন ইসরাফিল সরদার। এক পর্যায়ে চলতি বছরের গত ২৩ জুন রাতে ইসরাফিল সরদার ও তার পরিবারের সদস্যরা তাকে নির্যাতনের পর গলাটিপে হত্যা করে। হত্যার পর নাটক সাজিয়ে তাকে চিকিৎসার নামে যশোর জেনারেল হাসপাতালে এনে ময়নাতদন্ত না করেই দ্রুত বাড়িতে নিয়ে যাওয়া হয়। এসময় তার মুখে রক্ত ও শরীরে আঘাতের চিহ্ন থাকলেও ময়নাতদন্ত না করেই লাশ দাফন করা হয়।
সংবাদ সম্মেলনে শিক্ষানবিশ আইনজীবী জুয়েল আক্তার বলেন, এ পরিস্থিতিতে তারা বিষয়টি নিয়ে আদালতের দ্বারস্থ হন। চলতি বছরের ১৬ জুলাই যশোর নারী ও শিশু নির্যাতন দমন বিশেষ ট্রাইবুনাল-২ একটি মামলা দায়ের করেন তিনি। মামলার তদন্তভার পিবিআই যশোরের ওপর দেন আদালত। মামলাটি তদন্তভার পিবিআই যশোরের পরিদর্শক আব্দুল মান্নানের ওপর ন্যস্ত হয়। এরপর তিনি পিবিআই যশোর অফিসে ডেকে এনে মামলার সাক্ষীদের সাক্ষ্য নেন। এক পর্যায়ে আদালতে তার বোনের লাশের ময়নাতদন্তের জন্য আবেদন করলে আদালত কবর থেকে লাশ তোলার নির্দেশ দেন পিবিআইকে। কিন্তু পিবিআই পরিদর্শক আব্দুল মান্নান লাশ উত্তোলন না করে মামলা তুলে নেওয়ার জন্য আসামি পক্ষের হয়ে তাদের ওপর চাপ প্রয়োগ করতে থাকেন। সংবাদ সম্মেলনে অভিযোগ করা হয়, পিবিআই পরিদর্শক আব্দুল মান্নান বাদী পক্ষের কোনো কথা না শুনেই মামলার সাক্ষীদের দেয়া প্রকৃত তথ্য নথিতে না তুলে আসামি পক্ষকে মামলা থেকে অব্যহতি দেওয়ার জন্য মনগড়া প্রতিবেদন আদালতে উপস্থাপন করেন। বিষয়টি নিয়ে পিবিআইয়ের পুলিশ সুপারের সাথে যোগাযোগ করলেও তিনি পাত্তা দিচ্ছেন। বরং উল্টো আব্দুল মান্নান তাকে ও তার স্ত্রীকে এ নিয়ে ঝামেলা না করার জন্য হুমকি দিয়ে আসছেন। এ অবস্থায় গোটা পরিবার চরম নিরাপত্তাহীনতায় আছেন বলে দাবি করেন জুয়েল আক্তার।