চিকিৎসা না পেয়ে হাসপাতাল ছাড়ছেন রোগী, পলাতক দেখিয়ে দায়মুক্ত হচ্ছেন চিকিৎসক

0

স্টাফ রিপোর্টার ॥ সুস্থ হবার আগেই যশোর ২৫০ শয্যা হাসপাতালের অনেক রোগী বেসরকারি হাসপাতালে চলে যাচ্ছে। যথাযথ চিকিৎসা না পেয়ে তারা বাধ্য হয়ে এ পথ ধরছে। সংশ্লিষ্ট চিকিৎসকরা তাদের ব্যর্থতা ঢাকতে ওইসব রোগীদের পলাতক দেখিয়ে দায়মুক্ত হবার চেষ্টা করছেন্ দীর্ঘদিন ধরে চলে আসছে এ প্রবণতা। যশোর ২৫০ শয্যা হাসপাতালে চিকিৎসকের অভাব নেই। অথচ, রোগীরা ভালো চিকিৎসা পাচ্ছেন না। ফলে অনেক রোগী চিকিৎসা পাওয়ার জন্য ভর্তি হলেও হাসপাতালে থাকছেন না। তারা হাসপাতাল থেকে চলে যাচ্ছেন এবং বেসরকারি হাসপাতাল ও কিনিকে ভর্তি হচ্ছেন। সরকারি হাসপাতাল থেকে চলে যাওয়া ওই সব রোগীদের ছাড়পত্র খাতায় পলাতক রোগী হিসেবে দেখানো হচ্ছে।
সূত্র জানিয়েছেন, অর্থো-সার্জারি ওয়ার্ড থেকে ৪ জন রোগী চলে গেছেন চিকিৎসা না পেয়েছে। এরা হচ্ছেন- যশোরের বাঘারপাড়া উপজেলার ঘোষনগর গ্রামের সাজ্জাদ (৪০), চৌগাছা উপজেলার রঘুনাথপুরের নুর আলী (৪০), চৌগাছা গ্রামের নয়ন (২৮), শার্শা উপজেলার বাগআঁচড়া গ্রামের ইকবাল হোসেন (৪৪)। সড়ক দুর্ঘটনায় আহত হলে তাদের বুধবার হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছিল। ভর্তি হওয়ার পর ইন্টার্নি চিকিৎসক তাদের চিকিৎসা দেন। এরপর আর বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের সেবা পাননি তারা। ফলে, গুরুতর আহত ওইসব রোগী ছাড়পত্র না নিয়ে বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। এসব হাসপাতালে যশোর ২৫০ শয্যা হাসপাতালের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকগণই চিকিৎসা দিয়ে থাকেন। অথচ, সরকাকির হাসপাতালে তারা রোগীর যথাযথ চিকিৎসা দেন না। এর আগে ২ নভেম্বর একই ওয়ার্ড থেকে ১০ জন রোগী চলে গেছেন। হাসপাতালের ছাড়পত্র খাতায় তাদের পলাতক উল্লেখ করা হয়েছে। তারা মারামারি ও সড়ক দুর্ঘটনায় আহত হয়েছিলেন। ওই ওয়ার্ড ছাড়-াও মহিলা, সার্জারি, মহিলা মেডিসিন ও পুরুষ মেডিসিন ওয়ার্ড থেকে প্রতিনিয়ত রোগী চলে যাচ্ছে। এসব ওয়ার্ডের খাতায় তাদেরকে পলাতক উল্লেখ করা হচ্ছে। শুধু ওয়ার্ড নয়, বহির্বিভাগের প্যাথলজি, এক্স-রে, ইসিজি ও প্যাথলজি বিভাগে পরীক্ষা-নিরীক্ষাসহ অন্যান্য সেবা সংকুচিত করা হয়েছে। বর্তমানে ২৫/৩০টির ভেতর সীমাবদ্ধ রাখা হয়েছে ইসিজি, এক্স-রেসহ অন্যান্য সেবা। আগে এ সংখ্যা ছিল দ্বিগুণেরও বেশি। প্যাথলজি বিভাগে প্রতিদিন একশ’র বেশি পরীক্ষা হতো। বর্তমানে তা অর্ধেকে নামিয়ে আনা হয়েছে। কর্মকর্তা-কর্মচারীদের কাজ করার সক্ষমতা বিবেচনা করে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ এভাবে চিকিৎসাসেবা সংকুচিত করেছেন। চিকিৎসকগণ প্রাইভেট হাসপাতালে ৭০/৭৫ জনেরও বেশি রোগী ভালোভাবে দেখেন, অথচ সরকারি হাসপাতালে রোগীর ভালো চিকিৎসা দেন না। সেখানে চিকিৎসা নিতে গেলে কিছু শোনার আইেগ প্রেসক্রিপশন লেখা হয়ে যায়। এদিকে, প্রেসক্রিপশন নিয়ে বের হওয়ার সাথে সাথে তাদের পড়তে হয় বিভিন্ন ওষুধ কোম্পানির প্রতিনিধিদের খপ্পরে। তারা হাসপাতালের সিঁড়িতে দাঁড়িয়ে থাকেন। আর রোগী বের হলেই টিকিট নিয়ে ছবি তুলে নেন মোবাইল ফোনের ক্যামরোয়। পরে চিকিৎসকের কাছে গিয়ে তারা নিজেদের কোম্পানির ওষুধ প্রেসক্রিপশনে লেখার জন্য চিকিৎসকদের প্রতি চাপ সৃষ্টি করেন। এ দৃশ্য প্রতিদিনের। সপ্তাহে শনি ও মঙ্গলবার প্রতিনিধিদের হাসপাতালে প্রবেশের অনুমতি থাকলেও তারা তা মানছেন না। প্রতিদিন তারা যত্রতত্র রোগীদের সমস্যা করছেন। বিষয়টি নিয়ে হাসপাতালের তত্ত্ববাধায়ক ডা. দিলীপ কুমার রায়ের দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে তিনি একটি ওষুধ কোম্পানির দু’জন প্রতিনিধিকে পুলিশ দিয়ে আটক করান। পরে তাদের কাছ থেকে এ মুচলেকা নিয়ে ছেড়েছেন।