আজ ঐতিহাসিক ৭ নভেম্বর জাতীয় বিপ্লব ও সংহতি দিবস

0

আকরামুজ্জামান ॥ আজ ঐতিহাসিক ৭ই নভেম্বর জাতীয় বিপ্লব ও সংহতি দিবস। ১৯৭৫ সালের এইদিনে বীর-জনতা কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে আমাদের দেশ-মাতৃকার স্বাধীনতা রা ও সংহত করেছিলেন। নস্যাৎ করেছিলেন দেশী-বিদেশী সকল চক্রান্ত ও ষড়যন্ত্রকে। জাতীয় দুর্যোগ, দুর্বিপাক ও দুঃসময়ের কান্ডারী স্বাধীনতার মহান ঘোষক মেজর জেনারেল জিয়াউর রহমানকে বন্দিদশা থেকে মুক্ত করে দেশপ্রেমিক সিপাহী-জনতা দেশ পরিচালনার দায়িত্ব দিয়েছিলেন। তাই পরাধীনতার জিঞ্জির পরানোর ষড়যন্ত্র নস্যাতের দিন হিসেবেই আজকের দিনটিকে দেশপ্রেমিক জাতীয়তাবাদী ও ইসলামী শক্তির আদর্শের মানুষেরা নানা কর্মসূচির মাধ্যমে গৌরব ও মর্যাদার সাথে পালন করছেন।
১৯৭৬ সাল থেকেই দিনটি জাতীয় বিপ্লব ও সংহতি দিবস হিসেবে পালিত হয়ে আসছে। এর মধ্যে বহুবার গৌরবান্বিত দিবসটিকে ইতিহাসের পাতা থেকে মুছে ফেলতে দেশী-বিদেশী চক্রান্ত হয়েছে, যা বর্তমানেও অব্যাহত আছে । ১৯৯৬ সালের ১২ জুনের নির্বাচনে শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগ সরকার মতায় আসার পর প্রথম এই দিবসের সরকারি ছুটি বাতিল করে দেওয়া হয়। ফ্যাসিবাদী আওয়ামী লীগ তাদের চিরাচরিত ইতিহাস বিকৃতির ধারাবাহিকতা বজায় রাখতে এ দিবসে বীর-জনতা ও সেনাবাহিনীর ভূমিকাকে বিতর্কের কালিমা দিয়ে ঢেকে ফেলার অপচেষ্টা চালায়। কিন্তু পাঁচ বছর পর ২০০১ সালের ১ অক্টোবরের নির্বাচনে নীরব ভোট বিপ্লবের মাধ্যমে জনগণ তাবেদার আওয়ামী লীগ সরকারকে পরাজিত করে জানান দেয় এদেশে ৭ নভেম্বরের চেতনা অবিনশ্বর, এর পরাজয় নেই। জনগণের রায়ে চারদলীয় জোট সরকার গঠনের পর ৭ নভেম্বরের ঐতিহাসিক এই দিনটি পুনরায় মর্যাদা ফিরে পায়। দিবসটি উপলে ঘোষনা করা হয় পুনরায় সরকারি ছুটি। এরই মাঝে দেশী-বিদেশী চক্রান্তে বাংলাদেশের মানচিত্র দখলের ষড়যন্ত্র হিসেবে বিগত ১/১১ পর মঈন-ফখরুদ্দিন সরকারের চক্রান্তে কারচুপি ও সমঝোতার মাধ্যমে শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন দিনবদলের মহাজোট সরকার মতায় আসে। মতায় এসে আওয়ামী লীগ আবারো ইতিহাসের পাতা থেকে ঐতিহাসিক ৭ নভেম্বরে বীর-জনতা ও সেনাবাহিনীর যৌথ সংগ্রামের মাধ্যমে দেশের স্বাধীনতা-স্বার্বভৌমত্ব রার অবদানকে গলাটিপে হত্যা করার অপচেষ্টা অব্যাহত রাখে। দিবসটির তাৎপর্য থেকে দেশের নতুন প্রজন্মকে বিভ্রান্ত করতে সরকার আজকের এই দিনে ‘মুক্তিযোদ্ধা ও সিপাহী হত্যা দিবস’ হিসেবে পালনের মাধ্যমে জঘন্য অধ্যায়ের সূচনা করতে যাচ্ছে শাসক দল। অপরদিকে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল ও তার সমমনা দলগুলো দিবসটির যথাযোগ্য মর্যাদা তুলে দেশব্যাপী নানা কর্মসূচি পালন করছে। দিবসটি উপলে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বিশেষ বাণী দিয়েছেন।
৭ নভেম্বর আমাদের জাতীয় চেতনার দিন। এদিন স্বতঃস্ফুর্ত জাগ্রত জনতা ঢাকার রাজপথে বেরিয়ে এসে সেদিন দেশপ্রেমিক বীর সৈনিকদের বীরোচিত কাজের প্রতি যথার্থ শ্রদ্ধা জানিয়েছিলেন। সেদিন পরাজিত হয়েছিল বিদেশী সেবাদাসদের যাবতীয় চক্রান্ত। নতুন এবং আগামী প্রজন্মের কাছে দিবসটির তাৎপর্য অপরিসীম। কেননা ৭ নভেম্বর তাবেদার ষড়যন্ত্রকারীদের চক্রান্ত বাস্তবায়িত হলে আমরা চিরদিনের জন্য বিদেশী প্রভূদের ক্রীড়ানকে পরিণত হয়ে যেতাম। পরাধীনতার জিঞ্জিরে আবদ্ধ হয়ে যেত গোটা জাতি। একথা ঠিক যে, ৭ নভেম্বরের পরাজিত শক্তি কখনও এদিনটির গুরুত্ব ও মর্যাদা অনুধাবন করেনি। বরং একে বিতর্কিত করার অপপ্রয়াস চালিয়েছে, যা এই সরকারের আমলে জঘন্যভাবে অব্যাহত আছে। কিন্তু দেশের মানুষ অতীতে তাদের প্রচারণাকে তেমন আমল দেয়নি, অগামীতেও দেবে না। স্বাধীনতা উত্তরকালে এদেশে জনগণের আখাঙ্খা ও স্বপ্নকে ধুলিস্যাৎ করে দেয়ার মানসিকতায় একদলীয় শাসন ব্যবস্থা কায়েম করা হয়েছিল। জনগনের কণ্ঠকে স্তব্দ করে দেয়া হয়েছিল। তৎকালীন শাসকদলের মন্ত্রী-এমপিদের কথা বলার অধিকার পর্যন্ত নস্যাৎ করা হয়েছিল। এরই প্রোপটে ১৯৭৫ সালে রক্তাক্ত পট-পরিবর্তন হয়। কিন্তু পরাজিত শক্তি পুনরায় মতায় ফিরে আসতে মরিয়া হয়ে ওঠে। সেনাবাহিনীর ুদ্র একটি অংশের সহায়তায় ৭৫-এর ৩ নভেম্বর রাতেই তারা মতা দখলের সকল আয়োজন সম্পন্ন করে। স্বাধীনতার ঘোষক তৎকালীন সেনাবাহিনী প্রধান মেজর জেনারেল জিয়াউর রহমানকে ক্যান্টনমেন্টে বন্দি করে রাখে চক্রান্তকারীরা। চারদিন পর এক দুঃস্বপ্ন উৎকন্ঠিত সময় অতিক্রম করে সিপাহী-জনতা রক্তপাতহীন এক বিপ্লবের মাধ্যমে জিয়াউর রহমানকে মুক্ত করে দেশ পরিচালনার দায়িত্ব দেন।