বছরের প্রথম ৮ মাসে প্রায় ১১৩ কোটি কল ড্রপ

    0

    লোকসমাজ ডেস্ক॥চলতি বছরের প্রথম আট মাসে দেশের ১৬ কোটিরও বেশি মুঠোফোন গ্রাহকের জন্য ভোগান্তির কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে ঘন ঘন কল ড্রপ।বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশনের (বিটিআরসি) তথ্য অনুযায়ী, জানুয়ারি থেকে আগস্ট পর্যন্ত ১১২ কোটি ৯৫ লাখ বার কল ড্রপ হয়েছে। অর্থাৎ দৈনিক কল ড্রপের সংখ্যা ছিল গড়ে ৪৭ লাখ।
    কল ড্রপ ছাড়াও দুর্বল নেটওয়ার্কের কারণে মুঠোফোনে কথোপকথনের মাঝে বাধা সৃষ্টি হওয়ার কারণে অনেক ব্যবহারকারীকেই কল কেটে পুনরায় কল দিতে হয়েছে।
    করোনা মহামারির কারণে যখন অনেকেই বাসা থেকেই অফিসের কাজ করেছেন, তখন মোবাইল অপারেটরের নিরবচ্ছিন্ন নেটওয়ার্ক অপরিহার্য থাকলেও সেসময় কল ড্রপ ভোগান্তির কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছিল।
    অতিরিক্ত কল ড্রপের শিকার হয়েছেন এয়ারটেলের গ্রাহক রাজধানীর বাসিন্দা আদনান ফয়সাল। মঙ্গলবার তিনি দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, ‘আজ আমি আগারগাওঁয়ে আমার অফিসে থাকাকালীন দুই বার কল ড্রপ হয়েছে। কল ড্রপের ভোগান্তি অসহনীয় হয়ে উঠেছে।’
    আদনান আরও জানান, তিনি তার মোহাম্মদপুরের বাসায় থেকে মুঠোফোন ব্যবহারকালে প্রতি ১০টি কলের মধ্যে দুই বারই কল ড্রপ হয়ে থাকে। ‘কখনো কখনো যখন আমি আমার অফিসের বসের সঙ্গে কথা বলি, তখনো এরকম ভোগান্তির শিকার হতে হয়। যা খুবই বিব্রতকর।’
    বিটিআরসির তথ্য অনুযায়ী, রবি আজিয়াটার আওতাধীন রবি ও এয়ারটেলের পাঁচ কোটিরও বেশি গ্রাহক জানুয়ারি থেকে আগস্টে সবচেয়ে বেশি কল ড্রপ ভোগান্তির শিকার হয়েছে। এই দুই অপারেটরে ওই আট মাসে ৪৮ কোটিরও বেশি বার কল ড্রপ হয়েছে।
    তবে, রবির গ্রাহক রাজধানীর লালমাটিয়ার বাসিন্দা কামরুজ্জামান রিপন জানিয়েছেন, তিনি গত বছরের তুলনায় এ বছর কম কল ড্রপের শিকার হয়েছেন।
    গতকাল এক ইমেলের জবাবে রবি জানিয়েছে, ‘জানুয়ারি থেকে আগস্টের মধ্যে রবিতে এক শতাংশেরও কম বার কল ড্রপের ঘটনা ঘটেছে। যা বিটিআরসির দেওয়া মান দুই শতাংশের চেয়ে অনেক কম।’
    তারা জানায়, দামের কারণে বাংলাদেশে মোবাইল অপারেটরদেরকে নীতিগতভাবে সীমিত স্পেকট্রামের (মোবাইল ইন্ডাস্ট্রি ও বেতার তরঙ্গের মাধ্যমে যোগাযোগের অন্যান্য সেক্টরের জন্য বরাদ্দকৃত রেডিও ফ্রিকোয়েন্সি) মধ্যে কাজ করতে বাধ্য করা হয়। কিন্তু, মানসম্পন্ন সেবা নিশ্চিত করতে গেলে একটি অপারেটরের ব্যবহারকারীর ওপর নির্ভর করে পর্যাপ্ত পরিমাণ স্পেকট্রাম বরাদ্দের কোনো বিকল্প নেই।
    শহরের চেয়ে গ্রামাঞ্চলে বসবাসকারী মোবাইল গ্রাহকরা বেশি কল ড্রপ ও দুর্বল নেটওয়ার্কের ভোগান্তির শিকার।
    গোপালগঞ্জের মুকসুদপুরের বাসিন্দা জায়েদ রহমান একাধারে গ্রামীণফোন (জিপি), বাংলালিংক ও রবির গ্রাহক। তিনি বলেন, ‘বাড়িতে থাকাকালীন আমি এই তিন অপারেটরেই নেটওয়ার্ক সমস্যায় পড়ি। তবে, সবচেয়ে বাজে অভিজ্ঞতা হয়েছে জিপির অপারেটর ব্যবহার করে।’
    তবে, রাজধানীতে বসবাসরত একসঙ্গে দুই অপারেটর ব্যবহারকারীরা জানান, কম কল ড্রপ ও দুর্বল নেটওয়ার্কের কম দৃষ্টান্ত থাকায় অন্য অপারেটর থেকে জিপি তুলনামূলক ভালো।
    জানুয়ারি থেকে আগস্টে জিপিতে ৪৬ কোটিরও বেশি বার কল ড্রপ হয়েছে। সেপ্টেম্বরের তথ্য অনুযায়ী, শীর্ষ এই অপারেটরের গ্রাহক সংখ্যা সাত কোটি ৭৫ লাখের মতো।
    বাংলাদেশে করোনার সংক্রমণ শুরুর পর থেকে বগুড়া শহরের কলোনি এলাকায় থাকছেন বাংলালিংকের গ্রাহক তানজিনা আক্তার মৌরি। ঘন ঘন কল ড্রপের কারণে গত মে থেকে তিনি বাংলালিংক ব্যবহার বন্ধ করে দিয়েছেন।
    মৌরি বলেন, ‘১০ মিনিটের একটি কলে তিন থেকে চার বার কল ড্রপ হয়েছে। আমি এতটাই বিরক্ত হয়েছিলাম যে অন্য অপারেটর ব্যবহার করা শুরু করেছি।’
    তবে, আবদুস সালাম নামে হবিগঞ্জে বসবাসকারী বাংলালিংকের এক গ্রাহক জানান, তিনি এক দশকেরও বেশি সময় ধরে বাংলালিংক ব্যবহার করছেন এবং এটির নেটওয়ার্ক ভালো।
    বর্তমানে বাংলালিংকের গ্রাহক সংখ্যা তিন কোটি ৪৭ লাখেরও বেশি। বাংলালিংকের এই গ্রাহকেরা চলতি বছরের প্রথম আট মাসে ১৪ কোটি ৬৫ লাখ বার কল ড্রপের ভোগান্তিতে পড়েছেন। কল ড্রপ পরিসংখ্যান বিবেচনায় শীর্ষ টেলিকম অপারেটর কোম্পানি জিপি ও রবির তুলনায় বাংলালিংকের অবস্থান ভালো।
    বাংলালিংকের চিফ করপোরেট অ্যান্ড রেগুলেটরি অ্যাফেয়ার্স অফিসার তাইমুর রহমান বলছিলেন, ‘আমাদের কল ড্রপ রেট বিটিআরসি কর্তৃক নির্ধারিত মানদণ্ডের তুলনায় অনেক কম। সেরা ডিজিটাল ও ভয়েস পরিষেবা নিশ্চিত করতে আমরা ২০১৮ সালে ১০ দশমিক ৬ মেগাহার্টজ স্পেকট্রাম কিনেছিলাম।’
    রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন অপারেটর টেলিটকের গ্রাহক রাজধানীতে বসবাসকারী জেহাদ আল মেহেদির বাবা-মা থাকেন বাগেরহাটে। তাদের সঙ্গে ফোনে কথা বলার সময় মেহেদি প্রায় কল ড্রপ ও দুর্বল নেটওয়ার্কের ভোগান্তিতে পড়েন।চলতি বছরের প্রথম আট মাসে টেলিটকে চার কোটি ১১ লাখেরও বেশি বার কল ড্রপ হয়েছে।
    ডাক ও টেলিযোগাযোগমন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার সম্প্রতি দ্য ডেইলি স্টারকে জানিয়েছেন, কল ড্রপ নিয়ে তিনি উদ্বিগ্ন। ‘আমাদের টেলিকম কোম্পানিগুলো অনেক এলাকায় ভালো করছে। তবে, কল ড্রপ নিরসনে তাদের আরও কিছু প্রযুক্তিগত উন্নয়নের প্রয়োজন আছে’, বলেন মোস্তাফা জব্বার। ভোক্তাদের অধিকার নিশ্চিতে আরও কঠোর নিয়ন্ত্রক ব্যবস্থার ওপর জোর দিয়েছেন ডাক ও টেলিযোগাযোগমন্ত্রী।
    তবে, মোবাইল ফোন অপারেটর সংস্থাগুলোর দাবি, তাদের অপারেটরগুলোর কল ড্রপের সংখ্যা নির্ধারিত মানদণ্ড দুই শতাংশের চেয়ে কম। বাংলাদেশ মোবাইল টেলিকম অপারেটরস অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক অবসরপ্রাপ্ত ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এসএম ফরহাদ বলেন, ‘যেকোনো নম্বরই বিচার্য হয় সংশ্লিষ্ট তথ্যের সঙ্গে তুলনা করলে। সুতরাং, গড়ে মাসে ১৪ কোটি বার কল ড্রপকে একই সময়ের মোট কলের সঙ্গে তুলনা করতে হবে। তাহলে প্রকৃত চিত্র দেখা যাবে। তারবিহীন সেবার ক্ষেত্রে কল ড্রপ নানা কারণেই স্বাভাবিক। যেমন: আবহাওয়া, নেটওয়ার্কের অবস্থা, নেটওয়ার্ক পকেটস, অবৈধ জ্যামারস, তারা কাটা গেলে ইত্যাদি।’
    ‘বাংলাদেশে কল ড্রপের সংখ্যা নিয়ন্ত্রক সংস্থা কর্তৃক নির্ধারিত মানদণ্ডের মধ্যেই রয়েছে’, বলেন তিনি।