যশোরের কারবালা কবরস্থানে ৪ জনকে দাফন: কুষ্টিয়ায় সড়ক দুর্ঘটনায় মা-বাবা ও ছোট ভাইকে হারিয়ে একা হয়ে গেলেন ইমন

0

স্টাফ রিপোর্টার ॥ প্রায় ৩ বছর আগে ছোট ভাই ইফাদ বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে পুড়ে যাওয়ায় তার দুটো পা কেটে ফেলতে হয়েছিলো। ছেলের এই মর্মান্তিক দুর্ঘটনার শোক সইতে না পেরে মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে ফেলেন আরবী বেগম। তাকে সুস্থ করতে পাবনার মানসিক হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছিলো। গত মঙ্গলবার সেখান থেকে তাকে নিয়ে আসার সময় মর্মান্তিক দুর্ঘটনায় তিনিসহ স্বামী, ছোট ছেলে, স্বামী ও ভাইসহ ৫ জন মারা যান। ফলে মা-বাবা ও ছোট ভাইকে হারিয়ে এখন একা হয়ে পড়েছেন হাফিজুর রহমান ইমন। তিনি ছাড়া এখন এই পরিবারের আর বেঁচে নেই।


এদিকে বুধবার সকালে জানাজা শেষে আরবী বেগম, তার স্বামী মফিজ উদ্দিন, ছেলে ইফাদ ও ভাই আলিম শেখেকে কারবালা কবরস্থানে দাফন করা হয়েছে।  ঢাকার একটি বেসরকারি ব্যাংকে কর্মরত হাফিজুর রহমান ইমন জানান, তার দাদা আব্দুস সাত্তার যশোরে পুলিশের চাকরি করতেন। বরিশালে তাদের আসল বাড়ি হলেও যশোরে চাকরি ও অবসর নেওয়ায় শহরের পুরাতন কসবা লিচুলতলায় জমি কিনে বসবাস শুরু করেন। শহরতলীর বিরামপুরে তার নানাবাড়ি। প্রায় ২০ বছর আগে তার বাবা মফিজ উদ্দিন নড়াইলের লোহাগড়ার মশাগুনি এলাকায় চলে যান। সেখানে তার গাড়ি রঙ করার একটি গ্যারেজ রয়েছে। ২০১৭ সালের এপ্রিলে তার ছোট ভাই ইফাদ বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হলে তার দুটি পা পুড়ে মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্ত হয়। মাথাও কিছুটা পুড়ে গিয়েছিলো। কিন্তু বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় দুটি পা বাধ্য হয়ে কেটে ফেলতে হয়েছে। কিন্তু ইফাদের এই মর্মান্তিক দুর্ঘটনার শোক সইতে না পেরে তার মা আরবী বেগম ভারসাম্য হারিয়ে ফেলেন। তাকে চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে। অবস্থা বেশি খারাপ হওয়ায় দুই মাস আগে তার মাকে পাবনার মানসিক হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য ভর্তি করা হয়।

গত মঙ্গলবার তার বাবা মফিজ উদ্দিন, ছোট ভাই ইফাদ, মামা আলিম শেখ ও ইনসান শেখ সেখান থেকে একটি অ্যাম্বুলেন্সে করে নিয়ে আসছিলেন। দুপুরে পথে কুষ্টিয়ায় দুর্ঘটনায় মা আরবী বেগম, বাবা মফিজ উদ্দিন, ছোট ভাই ইফাদ, মামা আলিম শেখ ও চালক টিপু সুলতান মারা যান। অপর মামা ইনসান শেষ প্রাণে বেঁচে গেলেও তার অবস্থা গুরুতর। তিনি বলেন, নিহত তার মামা আলিম শেষ বিসিএস পরীক্ষার্থী ছিলেন। আহত অপর মামা ইনসান শেখের যশোর শহরে চুয়াডাঙ্গা বাসস্ট্যান্ডে টেইলার্সের দোকান রয়েছে। স্বজনেরা জানান, আরবী বেগম ও মফিজ উদ্দিন দম্পতির মাত্র দুটি ছেলে। স্বামী-স্ত্রী ও ছোট ছেলে মারা যাওয়ায় বড় ছেলে হাফিজুর রহমান ইমন এখক একা হয়ে গেলেন। তারা আরও জানান, মফিজ উদ্দিনের দুই ভাই আনোয়ার হোসেন ও রফিকুল ইসলাম যশোরে থাকেন। আলিম শেখের বাড়িও যশোরে। এ কারণে অ্যাম্বুলেন্সচালক টিপু সুলতান বাদে ৪ জনের লাশ যশোরে নিয়ে আসা হয়। বুধবার বেলা ১১টায় পুরাতন কসবা ঢাকা রোডস্থ বায়তুস সালাম জামে মসজিদ প্রাঙ্গণে তাদের নামাজে জানাজা শেষে কারবালা কবরস্থানে ৪ জনকে দাফন করা হয়। জানাজায় এলাকাবাসী ও স্বজনেরা অংশ নেন। উল্লেখ্য, গত মঙ্গলবার দুপুরে কুষ্টিয়া-ঝিনাইদহ সড়কের এগারোমাইল লক্ষীপুর এলাকায় ট্রাকের সাথে অ্যাম্বুলেন্সের সংঘর্ষে ওই পাঁচজন নিহত হন। এর মধ্যে অ্যাম্বুলেন্সচালক টিপু সুলতানের লাশ তার নড়াইলের লোহাগড়ার বাড়িতে এবং অপর ৪ জনের লাশ যশোরে নিয়ে আসা হয়।