যশোর জেলা বিএনপি আয়োজিত স্মরণসভায় বক্তারা : জননেতা তরিকুল ইসলাম কেবল ব্যক্তি নন, রাজনীতির বড় ইনস্টিটিউশন ছিলেন

0

স্টাফ রিপোর্টার ॥ বিএনপি জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য বরেণ্য রাজনীতিক মরহুম তরিকুল ইসলামের দ্বিতীয় মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে যশোর জেলা বিএনপি আয়োজিত স্মরণসভা ও দোয়া মাহফিলে বক্তারা বলেছেন, তরিকুল ইসলাম কেবল ব্যক্তি নন, তিনি সতিক্যার অর্থেই রাজনীতির বড় ইনস্টিটিউশন ছিলেন। ক্ষণজন্মা এই রাজনীতিক সারাজীবন দেশ ও মানুষের কল্যাণে কাজ করে গেছেন। আর এ কারণে তাকে জীবনে চরম মূল্য দিতে হয়েছে। বারবার মামলা-হামলার শিকার হতে হয়েছে। যেতে হয়েছে কারাগারে। তারপরও তিনি আদর্শের প্রশ্নে কারো কাছে মাথানত করেননি।
বুধবার বিকেলে যশোর জেলা পরিষদ মিলানায়তনে এ স্মরণসভা ও দোয়া মাহফিলের আয়োজন করা হয়। স্মরণসভায় সভাপতিত্ব করেন যশোর জেলা বিএনপির যুগ্ম আহবায়ক দেলোয়ার হোসেন খোকন। এসময় উপস্থিত ছিলেন তরিকুল ইসলামের সহধর্মিনী যশোর জেলা বিএনপির আহবায়ক অধ্যাপক নার্গিস বেগম ও তাঁর কনিষ্ঠপুত্র বিএনপির খুলনা বিভাগীয় সহসাংগঠনিক সম্পাদক অনিন্দ্য ইসলাম অমিত।
স্মরণসভায় বক্তারা বলেন, বিএনপির চরম ক্রান্তিকালে তরিকুল ইসলামের ভূমিকা ছিলো অনুসরনীয় অনুকরণীয়। দলের চরম দূর্দিনে তিনি নেতাকর্মীদের আন্দোলনের দিক নির্দেশনা দিয়েছেন। রাজনীতির সঙ্কটকালে সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে ভুল করতেন না এই রাজনীতির মহাপুরুষ। জাতীয়তাবাদী আদর্শের একজন সক্রিয় নেতা হয়েও তিনি বিরোধী রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীদের চিকিৎসায় তিনি সহায়তার হাত বাড়িয়ে দিতেন। দলের নেতাকর্মীদের সুখ-দুঃখেও তিনি সব সময় সচেতন ছিলেন।
পদ্মার এপারের জাতীয়তাবাদী শক্তির একমাত্র পুরোধা ছিলেন তরিকুল ইসলাম এমন উল্লেখ করে বক্তারা বলেন, তরিকুল ইসলাম ছাত্রজীবন থেকেই সংগ্রামী ছিলেন। স্বাধীনতা যুদ্ধ থেকে শুরু করে বাংলাদেশের প্রতিটি গণতান্ত্রিক আন্দোলনে তিনি সক্রিয় ভূমিকা রেখেছেন। তাঁর বলিষ্ঠ নেতৃত্বে এ অঞ্চলে বিএনপির সংগঠন একটি শক্তিশালী দূর্গে পরিণত হয়। দলের সাংগঠনিক শক্তি বৃদ্ধির পাশাপাশি উন্নয়নেও তাঁর অসামান্য অবদান রয়েছে। যেকারণে তাঁকে যশোর তথা দক্ষিণাঞ্চলের উন্নয়নের কারিগর বলা হয়। তাঁর চলে যাওয়ার মধ্যে দিয়ে জাতীয়তাবাদী শক্তির অপূরণীয় ক্ষতি হয়েছে।
নেতৃবৃন্দ বলেন, যাকে কেন্দ্র করে বাংলাদেশের মানুষ স্বাধীনতা সার্বভৌমত্বের স্বপ্ন দেখে, গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রের স্বপ্ন দেখে। সেই নেত্রী বেগম খালেদা জিয়া আজ কারাগার থেকে মুক্তি পেলেও এখনও গৃহবন্দি অবস্থায় আটক রয়েছেন। তরিকুল ইসলাম জীবদ্দশায় গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের আন্দোলনে সক্রিয় ছিলেন। আমরা মনে করেছিলাম তাঁর নেতৃত্বেই গণবিপ্লবে বিজয়ী হবো আমরা। কিন্তু তাঁর চলে যাওয়ার কারণে সেটি সম্ভব হয়নি। তাই তরিকুল ইসলামকে হৃদয়ে ধারণ করে আন্দোলনের মাধ্যমে বেগম খালেদা জিয়াকে মুক্ত করতে হবে।
বক্তারা বলেন, তরিকুল ইসলামের মৃত্যুর কারণে আমরা একজন যোগ্য নেতৃত্ব হারালেও তাঁরই যোগ্য উত্তররসুরিরা এ অঞ্চলের বিএনপির হাল ধরায় আমরা অনেকটা আশাবাদী। আমরা আশার আলো দেখছি। তার সহধর্মিনী অধ্যাপক নার্গিস বেগম অতীতে তরিকুল ইসলামের অনুপস্থিতে দলের কান্ডারি ছিলেন। তরিকুল ইসলাম যতবার কারাঅন্তরীণ ছিলেন ততবারই অধ্যাপক নার্গিস বেগম তরিকুল ইসলামের পতাকা নিয়ে দলকে সামনে এগিয়ে নিয়ে যান। তাঁর রেখে যাওয়া আরেক উত্তরসুরি অনিন্দ্য ইসলামও ধীর শক্তির একজন রাজনীতিক। প্রখর মেধাবী তরুণ এ রাজনীতিকের মধ্যে তরিকুল ইসলামের প্রতিচ্ছবি খুঁজে পাই আমরা। তাই আমরা দৃঢ়তার সাথে বলতে পারি তরিকুল ইসলাম আমাদের মাঝে বেঁচে না থাকলেও তাঁর যোগ্য উত্তরসুরিররা এ অঞ্চলের জাতীয়তাবাদী শক্তিকে আরও গতিশীল করতে সক্ষম হবেন।
স্মরণসভায় নেতৃবৃন্দের মধ্যে বক্তব্য রাখেন যশোর জেলা বিএনপির আহবায়ক কমিটির সদস্য প্রবীণ আইনজীবী অ্যাড. নজরুল ইসলাম, আহবায়ক কমিটির সদস্য অ্যাড. মোহাম্মাদ ইসহক, আব্দুস সালাম আজাদ, যশোর নগর বিএনপির সভাপতি মারুফুল ইসলাম, সদর উপজেলা বিএনপির সভাপতি মো.নুরুন্নবী, নগর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মুনীর আহম্মদ সিদ্দিকী বাচ্চু, সদর উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক কাজী আজম, কেশবপুর পৌরসভার সভাপতি আব্দুস সামাদ বিশ্বাস, অভয়নগর থানা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক গোলাম হায়দার ডাবলু, বাঘারপাড়া থানা বিএনপির যুগ্ম আহবায়ক শামসুর রহমান, ঝিকরগাছা থানা বিএনপির আহবায়ক মোর্ত্তজা এলাহী টিপু, জেলা শ্রমিক দলের সভাপতি মিজানুর রহমান, জেলা যুবদলের সভাপতি এম তমাল আহমেদ, সাধারণ সম্পাদক আনসারুল হক রানা, কৃষকদলের সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক মকবুল হোসেন, জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের যশোর শাখার সাধারণ সম্পাদক আমিনুর রহমান, জেলা মহিলাদলের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক জোসনা আলীম, জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের সাধারণ সম্পাদক মোস্তফা আমীর ফয়সাল, জেলা ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক কামরুজ্জামান বাপ্পী ও তাতীদলের জেলা শাখার যুগ্ম আহবায়ক মাসুদুর রহমান প্রমুখ।
এসময় মঞ্চে বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির সহ-ধর্ম বিষয়ক সম্পাদক অমলেন্দু দাস অপু, জেলা বিএনপির সদস্য সচিব এড. সাবেরুল হক সাবু, কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য ফারাজী মতিয়ার রহমান, জেলা বিএনপির আহবায়ক কমিটির সদস্য প্রফেসর গোলাম মোস্তফা, আব্দুস সবুর মন্ডল, মো. মুসাসহ যশোরের সকল থানা, পৌর বিএনপির সভাপতি, সাধারণ সম্পাদক, আহবায়ক ও যুগ্ম আহবায়কবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন। স্মরণসভা পরিচালনা করেন যশোর জেলা বিএনপির আহবায়ক কমিটির সদস্য আলহাজ মিজানুর রহমান খান ও আলহাজ আনিচুর রহমান মুকুল। স্মরণসভা শেষে বিএনপির প্রয়াত এ নেতার বিদেহী আত্মার মাগফিরাত কামনায় বিশেষ দোয়া করা হয়। এসময় দলের কয়েক হাজার নেতাকর্মী দুহাত তুলে প্রাণপ্রিয় নেতার আত্মার শান্তির জন্য দোয়া করেন।