সিসি ক্যামেরার আওতায় আসেনি বেনাপোল স্থলবন্দর, ক্ষতিগ্রস্ত আমদানিকারকরা

0

বিশেষ প্রতিনিধি॥ বাণিজ্যিক কার্যক্রম পর্যবেক্ষণের জন্য দীর্ঘ চার যুগেও সিসি ক্যামেরার আওতায় আসেনি দেশের সর্ববৃহৎ স্থলবন্দর বেনাপোল। কর্তৃপক্ষের উদাসীনতার কারণেই বসানো হচ্ছে না সিসি ক্যামেরা, অভিযোগ করেছেন এই বন্দর ব্যবহারকারী ব্যবসায়ীরা। এতে চুরিসহ অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড বাড়ছে এবং অব্যবস্থাপনা নিয়ন্ত্রণ করা যাচ্ছে না, ফলে ক্ষতির শিকার হচ্ছেন আমদানি-রফতানিকারকরা। বেনাপোলের আমদানিকারকরা জানান, ইতোপূর্বে বন্দরে রহস্যজনক অগ্নিকাণ্ডে তাদের আমদানি করা কোটি কোটি টাকার পণ্য পুড়ে যায়। সিসি ক্যামেরার ব্যবস্থা থাকলে এসব ঘটনার কারণ অনুসন্ধান করে ব্যবসায়ীদের ক্ষতি কমিয়ে আনা সম্ভব হতো। বিভিন্ন বৈঠকে ব্যবসায়ীরা সিসি ক্যামেরা স্থাপনের জোর দাবি জানালেও কোনও পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি। এ বিষয়ে বন্দর কর্তৃপক্ষ বলছে, বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের জানানো হয়েছে। বন্দর এলাকা ঘুরে দেখা যায়, আমদানি পণ্যে প্রবেশদ্বারসহ দুই কিলোমিটার বন্দর এলাকাজুড়ে কোথাও সিসি ক্যামেরা নেই। দরকার ছাড়া বন্দরের মধ্যে সাধারণের প্রবেশ নিষেধ থাকলেও অবাধে ঢুকছেন বহিরাগতরা। বন্দর অভ্যন্তরের সড়ক ও পণ্যাগারের (শেড) বেহাল দশা। ২০১৭ সালের ১৬ নভেম্বর দায়িত্ব পালনের সময় চোর সিন্ডিকেটের হামলায় ফিরোজ নামে একজন আনসার সদস্য খুন হন। আর চোরাই পণ্য কেনা-বেচার জন্য বন্দরের সামনেই নামে-বেনামে শতাধিক দোকান গড়ে উঠেছে। এমন অব্যবস্থাপনার কারণেই লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী রাজস্ব আদায় হচ্ছে না।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, ১৯৭২ সালে যশোরের বেনাপোল বন্দরের আনুষ্ঠানিক যাত্রা শুরু হয়। ১৯৭৮ সালে বাংলাদেশ ওয়্যার হাউজিং করপোরেশনের মাধ্যমে বেনাপোল বন্দরের কার্যক্রম চালু হয়। ভৌগোলিক কারণে দ্রুতই এটি দেশের বৃহত্তম স্থলবন্দরে পরিণত হয়। প্রথম অবস্থায় মোংলা সমুদ্রবন্দরের অধীনে স্থলবন্দরটির কার্যক্রম চলতো। ২০০২ সালের ফেব্রুয়ারি থেকে এটি বাংলাদেশ স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষের অধীনে পরিচালিত হচ্ছে। কার্যক্রম শুরু হওয়ার পর থেকেই এখানে চোরের দৌরাত্ম্য আছে। চোর চক্রের সদস্যরা প্রভাবশালী, ক্যাডার, সন্ত্রাসী ও লাঠিয়াল বাহিনীর সদস্য। বেনাপোল সিঅ্যান্ডএফ এজেন্টস অ্যাসিয়েশনের সভাপতি মফিজুর রহমান স্বজন বলেন, ‘প্রতিটি বৈঠকে উন্নয়নের ব্যাপারে বন্দর কর্তৃপক্ষকে জানানো হলেও এখানে কোনও নজরদারি নেই। অব্যবস্থাপনার মধ্য দিয়ে চলছে বাণিজ্যিক কার্যক্রম। বেনাপোল বন্দর সংশ্লিষ্ট সব ব্যবসায়ীর দীর্ঘদিনের দাবি সিসি ক্যামেরা স্থাপনের। ব্যবসায়ীদের সে দাবি মুখে পূরণ করার কথা বলা হলেও তা বাস্তবে রূপ নিচ্ছে না।’ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ এখানে সুনজর দিলে রাজস্ব আদায় অনেক বাড়তো বলেও জানান তিনি। প্রাপ্ত তথ্যমতে, বৃহত্তম স্থলবন্দরটিতে চুরি ঠেকাতে কয়েক বছর আগে শেডে বেশ কয়েকটি সিসি ক্যামেরা লাগানো হয়েছিল। কিছুদিন যেতে না যেতেই এসব ক্যামেরা নষ্ট করে ফেলা হয়। বন্দরের কিছু কর্মকর্তা-কর্মচারী পণ্য চুরির সঙ্গে জড়িত থাকার কারণেই সিসি ক্যামেরাগুলো নষ্ট করে ফেলা হয় বলে অভিযোগ ওঠে। এদিকে বেনাপোল বন্দর থেকে ভারতের পূর্বাঞ্চলের বৃহত্তম নগর কলকাতার দূরত্ব মাত্র ৮৪ কিলোমিটার। কলকাতা থেকে রওনা হয়ে চার ঘণ্টায় একটি ট্রাক আমদানি পণ্যের চালান কাগজপত্রের আনুষ্ঠানিকতা শেষ করে বেনাপোল বন্দরে পৌঁছতে পারে। যোগাযোগ ব্যবস্থা সহজ হওয়ায় ব্যবসায়ীরা এ পথে বাণিজ্যে বেশি আগ্রহ দেখান। ভারত-বাংলাদেশ ল্যান্ডপোর্ট ইমপোর্ট-এক্সপোর্ট কমিটির চেয়ারম্যান মতিয়ার রহমান বলেন, ‘নিরাপত্তার জন্য সিসি ক্যামেরা গুরুত্বপূর্ণ হলেও তা লাগাতে বন্দর কর্তৃপক্ষের গড়িমসি কেন বুঝি না। এটা সরকারকে দেখতে হবে।’ এ বিষয়ে জানতে চাইলে বেনাপোল স্থলবন্দরের উপপরিচালক মামুন কবীর তরফদার বলেন, ‘বন্দরে সিসি ক্যামেরা লাগানোর পরিকল্পনা রয়েছে। বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের একাধিকবার জানানো হয়েছে।’ উল্লেখ্য, গত এক যুগে বেনাপোল বন্দরে বড় ধরনের সাতটি অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে। এতে ব্যবসায়ীদের প্রায় দেড় হাজার কোটি টাকার পণ্য পুড়ে গেছে। এছাড়া সম্প্রতি বন্দর পণ্যগার থেকে ১০টি ককটেল উদ্ধার করা হয়েছে এবং বিস্ফোরণের ঘটনাও ঘটেছে। তবে বন্দরে সিসি ক্যামেরা না থাকায় অগ্নিকাণ্ডের কোনও রহস্য বা দুর্বৃত্তদের শনাক্ত করা যায়নি।