এবার অনশোরে ৭ মিলিয়ন টন ধারণ ক্ষমতার এলএনজি টার্মিনাল নির্মাণ করছে পেট্রোবাংলা

0

লোকসমাজ ডেস্ক॥ প্রাকৃতিক গ্যাসের বিকল্প হিসেবে এলএনজির ওপর নির্ভরতা বাড়ছে। এলএনজি আমদানির জন্য অপশোরে একাধিক টার্মিনাল নির্মিত হলেও এবার অনশোরে টার্মিনাল নির্মাণ করতে যাচ্ছে পোট্রোবাংলা। এই টার্মিনালের ধারণ ক্ষমতা ৭ মিলিয়ন টন। সংশ্লিষ্ট সূত্রমতে, দেশে মোট বিদ্যুৎ উৎপাদনের প্রায় সিংহভাগ প্রাকৃতিক গ্যাস নির্ভর। ২০১৮-১৯ অর্থবছরের হিসাব অনুযায়ী আমদানিসহ দেশে নিট বিদ্যুৎ উৎপাদনের পরিমাণ ছিল ৭০ হাজার ৫৩৩ গিগাওয়াট ঘণ্টা, যার প্রায় ৬৮ দশমিক ৪৯ শতাংশ উৎপাদনে প্রাকৃতিক গ্যাস জ্বালানি হিসেবে ব্যবহার করা হয়েছে।
অপরদিকে ২০১৭-১৮ অর্থবছরে দেশের সরকারি খাতে বিদ্যুৎকেন্দ্রে ২১১ বিলিয়ন ঘনফুট প্রাকৃতিক গ্যাস ব্যবহার করা হয়েছে। এ কারণে প্রাকৃতিক গ্যাসের চাহিদা মেটাতে একটি অনশোর তরলায়িত প্রাকৃতিক গ্যাস (এলএমজি) টার্মিনাল নির্মাণ করবে সরকার। ৭ মিলিয়ন টন ধারণ ক্ষমতার এই টার্মিনালে বছরে ১৫ মিলিয়ন টন পর্যন্ত বৃদ্ধি করার সুবিধা থাকবে। বাংলাদেশ ইতিমধ্যে কাতারের রাস লাফফান প্রাকৃতিক গ্যাস কোম্পানি লিমিটেডের সঙ্গে ১ দশমিক ৮ থেকে ২ দশমিক ৫ এমটিপিএ এলএনজি সরবরাহের জন্য ১৫ বছরের ক্রয় বিক্রয় চুক্তি স্বাক্ষর করেছে।
এছাড়া ওমানের ওমান ট্রেডিং ইন্টারন্যাশনালের (ওটিআই) সঙ্গে দশ বছর মেয়াদী আরও একটি চুক্তি করা হয়েছে। সেখান থেকে বছরে ০ দশমিক ৫ থেকে ১ এমটিপিএ এলএনজি আমদানি করা হবে। এলএনজি টার্মিনাল নির্মাণের জন্য ইতিমধ্যেই জাপানি কোম্পানি দিয়ে ফিজিবিলিটি স্টাডির কাজ শুরু হয়েছে। কক্সবাজারের মাতারবাড়ির কাছে এই টার্মিনাল নির্মাণের জন্য ৬ মাস ধরে ফিজিবিলিটি স্টাডির কাজ চলবে। এরপরেই মূল কাজ শুরু হবে। ২০২৪ সালের মধ্যেই টার্মিনাল নির্মাণের কাজ সম্পন্ন হবে।
সূত্র জানায়, স্বল্প ব্যয়সম্পন্ন বিদ্যুৎ উৎপাদনের পন্থা অবলম্বনের জন্য প্রয়োজন স্বল্প ব্যয়ভিত্তিক জ্বালানি। জলবিদ্যুৎ, প্রাকৃতিক গ্যাস ও কয়লা, এগুলো প্রতিটি স্বল্পব্যয় বিদ্যুৎ উৎপাদনের অংশ। তরল জ্বালানি (ফার্নেস অয়েল ও ডিজেল) উচ্চ ব্যয়সাধ্য জ্বালানি। এগুলো ব্যবহার কমেও যাচ্ছে। ভৌগলিক গঠন বিন্যাসের জন্য বাংলাদেশে জলবিদ্যুৎ উৎপাদনের সম্ভাবনাও কম। তবে দেশে প্রাকৃতিক গ্যাসের মজুদ রয়েছে কিন্তু সেগুলো দ্রুত শেষ হয়ে যাচ্ছে। এজন্য নতুন গ্যাসক্ষেত্র আবিষ্কারের করতে আন্তর্জাতিক তেল কোম্পানির সঙ্গে অংশীদারিত্ব গড়ে তোলার প্রচেষ্টা চলছে।
এলএনজি আমদানির জন্যে একটি দীর্ঘমেয়াদি কৌশল গ্রহণ করা হয়েছে। ইতিমধ্যেই ১ লাখ ৩৮ হাজার বর্গমিটার আয়তনের দুটি ভাসমান স্টোরেজ ও পুনর্গ্যাসীকরণ ইউনিট ইতোমধ্যে স্থাপন করা হয়েছে। প্রতিটি ইউনিটের সক্ষমতা ৫০০ এমএমএসসিএফডি। বছরে ৩ দশমিক ৭৩ মিলিয়ন টনের প্রসেসিং সক্ষমতা সম্বলিত প্রথম ইউনিট স্থাপিত হয় যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক এক্সিলারেট এনার্জির মাধ্যমে এবং ২০১৮ সালে অগাস্ট মাসে এটার উৎপাদন শুরু হয়। দ্বিতীয়টি সামিট এলএনজি টার্মিনাল কোম্পানি লিমিটেডের মাধ্যমে শুরু হয়েছিল ২০১৯ সালের এপ্রিলে। উভয় ইউনিটের অবস্থান কক্সবাজার মহেশখালীতে।
এ প্রসঙ্গে পেট্রোবাংলার পরিচালক প্রকৌশলী মোহাম্মদ কামরুজ্জামান বলেন, মাতাবাড়িতে পেট্রোবাংলার আরও একটি এলএনজি টার্মিনাল নির্মাণের কাজ শুরু করা হয়েছে। প্রাথমিকভাবে ফিজিবিলিটি স্টাডির কাজ শুরু হয়েছে। ছয় মাস পরে আমরা মূল কাজ শুরু করতে পারবো। মাতারবাড়িতে বিদ্যুৎহাব হবে, এই পরিকল্পনার অংশ হিসেবেই নির্মাণ করা হবে এলএনজি টার্মিনাল।