মার্কিন ইতিহাসে উত্তেজনাকর নির্বাচন

0

লোকসমাজ ডেস্ক॥ বিভেদ অবসানের বার্তা দিয়েছেন জো বাইডেন। নির্বাচনী প্রচারণার শেষ বার্তায় পেনসিলভ্যানিয়া থেকে তিনি বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্র এক নতুন দিগন্তের দ্বারপ্রান্তে। তবে দোষারোপের সুর তুলেছেন ক্ষমতাসীন প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্প। তিনি বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্রে বিশৃঙ্খল অবস্থার জন্য তৎপর হয়ে আছে জো বাইডেনের সমর্থকরা। দাঙ্গা, লুটপাট আর অগ্নিসংযোগের প্রস্তুতি নিচ্ছে তারা। মিশিগানে নির্বাচনী সভা থেকে এমন বার্তা দিয়েছেন ট্রাম্প। রাজপথে সহিংসতা ছড়িয়ে পড়ার সতর্কতাও দিয়েছেন তিনি। পেনসিলভ্যানিয়ায় মেইলে দেয়া ভোট গণনা করার জন্য তিনদিন অতিরিক্ত সময় দেয়ায় যুক্তরাষ্ট্রের সুপ্রিম কোর্টের সমালোচনা করেছেন ট্রাম্প।
বলেছেন, এর ফলে রাজপথে সহিংসতা ছড়িয়ে পড়বে। নির্বাচনকে কেন্দ্র করে যুক্তরাষ্ট্রে বিরাজ করছে এক থমথমে পরিস্থিতি। সম্ভাব্য সহিংসতার আশঙ্কায় অনেক স্থানে বাড়তি নিরাপত্তারক্ষী নিয়োগ করা হয়েছে। ব্যবসায়ী নেতারা সবাইকে শান্ত থাকার আহ্বান জানিয়েছেন। অনেক স্থানে দোকানের দরজা-জানালায় কাঠ জোড়া দিয়ে অতিরিক্ত নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হয়েছে। কোনো অনভিপ্রেত অবস্থার সৃষ্টি হলে দু’পক্ষই আইনি লড়াই চালানোর প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছে। আগে থেকেই ট্রাম্প জানিয়ে রেখেছেন, পরাজিত হলে তিনি শান্তিপূর্ণভাবে ক্ষমতা হস্তান্তর করবেন না। তিনি যদি পরাজিত হন তাহলে কী ঘটবে তা নিয়ে আতঙ্ক চারদিকে! নির্বাচনের ভোটগ্রহণ শেষ হলেও কে বিজয়ী হয়েছেন- তা এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত জানা যায়নি। তবে ভৌগোলিক অবস্থানগত কারণে যখন এই খবর পাঠকের হাতে পৌঁছাবে, তখন হয়তো ভোট গণনা চলছে। নানা কারণে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচন এবার ব্যতিক্রমী। কারণ, করোনা মহামারির মধ্যে নিয়ন্ত্রিত পরিবেশে হয়েছে ভোটযুদ্ধ। এতে ডেমোক্রেটদের প্রধান ইস্যু ছিল করোনাভাইরাস মোকাবিলায় ট্রাম্পের ব্যর্থতা। উল্টো জো বাইডেন যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনীতিকে ধ্বংস করে দেবেন বলে আক্রমণ শানিয়েছেন ট্রাম্প। কিন্তু তার বিতর্কিত নানা মন্তব্য ও কর্মকাণ্ডের কারণে তারই বিরুদ্ধে এবার অবস্থান নিয়েছেন নিজের দল রিপাবলিকানের অনেক নামিদামি নেতা। তার মধ্যে রয়েছেন প্রয়াত ম্যাককেইনের স্ত্রী সিন্ডি ম্যাককেইন, প্রভাবশালী রিপাবলিকান মিট রমনি প্রমুখ। এই নির্বাচনী যুদ্ধের দিকে তাকিয়ে সারাবিশ্ব। কারণ, যুক্তরাষ্ট্রে নির্বাচিত প্রেসিডেন্টকে দেখা হয় বিশ্বে সবচেয়ে শক্তিধর ব্যক্তি হিসেবে। তার ওপরই নির্ভর করে পুরো বিশ্বের অর্থনীতি, কূটনীতি, পররাষ্ট্রনীতি, বাণিজ্যিক নীতি। এক কথায় বলা যায়, পুরো বিশ্বের ওপর প্রভাব বিস্তার করেন তিনি। তাই এ নির্বাচনে কে আসছেন নির্বাচিত হয়ে সেদিকে অধীর আগ্রহে তাকিয়ে বিশ্ব। হোয়াইট হাউসের চাবি কার হাতে উঠবে তা নির্ধারণে এবার রেকর্ড সংখ্যক ভোটার আগাম ভোট দিয়েছেন। এ সংখ্যা প্রায় ১০ কোটি। ২০১৬ সালে যুক্তরাষ্ট্রে যে পরিমাণ মানুষ ভোট দিয়েছিলেন, তার চার ভাগের তিন ভাগের সমান এই সংখ্যা। এর মধ্যে বেশির ভাগই ডেমোক্রেট সমর্থক। তাদের মধ্যে অন্য রকম এক উৎসাহ লক্ষ্য করা গেছে এবার। বিশেষ করে সুইং স্টেটগুলোতে ব্যবধান অল্প হলেও জনমত জরিপে জো বাইডেন এগিয়ে থাকায় তাদের মনোবল বেড়েছে। হয়তো দূর থেকে বিজয়ের ঘ্রাণ পেয়েছেন জো বাইডেন। তাই তিনি নতুন দিগন্তের স্বপ্ন দেখতে পেয়েছেন। পেনসিলভ্যানিয়ার কৃষ্ণাঙ্গবহুল এলাকায় মোটর শোভাযাত্রা করে প্রচারণার শেষ বক্তব্য দিয়েছেন বাইডেন। তিনি বলেছেন, আমার বার্তা খুবই পরিষ্কার। পরিবর্তনের সব ক্ষমতা জনগণের হাতে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ডনাল্ড ট্রাম্প কীভাবে চেষ্টা করছেন, এ নিয়ে আমার ভাবনা নেই। দেশের জনগণকে তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ থেকে ট্রাম্প কোনো চেষ্টা করেই বিরত রাখতে পারবেন না। ট্রাম্প চান না সবাই ভোট দিয়ে তাদের মতামত জানাক। জো বাইডেন বলেন, আমাদের অনেক কাজ করতে হবে। নির্বাচিত হলে প্রথম দিনেই করোনাভাইরাস মোকাবিলার পরিকল্পনা গ্রহণ করা হবে। যুক্তরাষ্ট্রকে ঐক্যবদ্ধ করা হবে। উন্মোচিত হচ্ছে এক নতুন দিগন্ত। বিভেদ আর বিশৃঙ্খলার অবসান ঘটছে নির্বাচনের মধ্য দিয়ে। অন্যদিকে জনমত জরিপ, সংবাদ মাধ্যম, যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা, এবার ভাইস প্রেসিডেন্ট পদে ডেমোক্রেট প্রার্থী কমলা হ্যারিসের কড়া সমালোচনা করেন ট্রাম্প। তিনি জনমত জরিপকে ভুয়া বা ফেক বলে আখ্যায়িত করেন। মিশিগানে শেষ নির্বাচনী সভায় ট্রাম্প বলেন, ৩রা নভেম্বরের বিকালটি বেশি উত্তেজনাকর হয়ে উঠবে। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প মিশিগানের সভায় দাঁড়িয়ে বলেন, সহজেই এ রাজ্যে জিতবেন তিনি। তার অভিযোগ, পেনসিলভ্যানিয়াসহ সবখানে ডেমোক্রেটরা ভোট জালিয়াতির চেষ্টা করছে। এ কথা বলে ট্রাম্প আগে থেকেই ভোটে কারচুপি, জালিয়াতি নিয়ে জটিলতা সৃষ্টির আগাম বার্তা দিয়ে রাখছেন জনগণকে।