লোহাগড়ায় পিআইও’র খালু শ্বশুর পেলেন গৃহহীনদের ঘর

0

শিমুল হাসান, লোহাগড়া (নড়াইল) ॥ লোহাগড়া উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তার (পিআইও) খালু শ^শুর পেয়েছেন সরকারি টাকায় দুর্যোগ সহনীয় গৃহহীনদের ঘর। অথচ খালু শ^শুরের রয়েছে তিনটি ঘর। অভিযোগ রয়েছে, সরকারি নিয়ম লঙ্ঘন করে লোহাগড়া ইউনিয়ন পরিষদের নামে বরাদ্দকৃত ওই ঘরটি নির্মাণ করা হয়েছে ছাতড়া গ্রামে। ঘরটি নির্মাণেও চলেছে হরিলুট। সরকারি নির্দেশনা অনুয়ায়ী গৃহহীনরাই ওই ঘর পাবেন। অথচ উপকারভোগী বাছাই ও ঘর নির্মাণে করা হয়েছে স্বজনপ্রীতি ও নানা অনিয়ম।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, লোহাগড়া উপজেলায় ২০১৮-২০১৯ অর্থ বছরে গত ৮ ডিসেম্বর ৪৩টি প্রকল্প অনুমোদন করেন তৎকালীন ইউএনও এবং বর্তমান পি.আই.ও। প্রতিটি ঘর নির্মাণে সরকারি বরাদ্দ ২ লাখ ৯৯ হাজার ৮৬০ টাকা। দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের টি.আর/কাবিখা-কাবিটা কর্মসূচির বিশেষ খাতের বরাদ্দকৃত টাকায় এ কার্যক্রম বাস্তবায়িত হচ্ছে। ওই প্রকল্পের ১৯ নং ক্রমিকের ঘরের মালিক ছাতড়া গ্রামের আমির মোল্লার ছেলে দুলাল মোল্লা। দুলাল মোল্লা পিআইও এস.এম.এ করিমের খালু শ^শুর। খোঁজখবর নিয়ে জানা যায়, লোহাগড়া পৌরসভার ১নং ছাতড়া ওয়ার্ডের বাসিন্দা দুলাল মোল্লা। দুলালের স্ত্রী রহিমা বেগম(৫০)। আর রহিমা বেগমের চাচাতো ভাগ্নী লাবণী। লাবণীর বাড়ি কাশিয়ানী উপজেলায়। লাবণীর স্বামী হলেন লোহাগড়া উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা(পিআইও) এস.এম. এ করিম। রহিমার ভাগ্নী জামাই পিআইও করিম। সেই হিসেবে দুলাল মোল্লা পিআইও’র খালু শ^শুর।
রহিমা বেগম জানান, পি.আই.ও এস.এম.এ করিম সাহেব আমার আত্মীয়। জামাই নিজে আমাকে সরকারি টাকার ঘর দেছে। কিন্তু ঘর নির্মাণে ঠিকাদার নানা অনিয়ম করেছে। তিনি জানান, জয়পুর ইউনিয়নের মেম্বার বাচ্চুকে দিয়ে পিআইও সাহেব ঘরটির নির্মাণ কাজ করেছেন। তিনি অভিযোগ করেন,নতুন ঘরের চাল দিয়ে পানি পড়ছে। বাথরুমের টিনের চালের বেড়া ছোট তাই পানি ঢোকে। বাথরুমের কূপ এখনো খোঁচা হয়নি। রান্না ঘরের ভেতর ও বাহিরের প্লাস্টারের কাজ বাকি রয়েছে। দুই রুমের মেঝেতে পানি জমে থাকে। তিনি আরও বলেন, পিআইও সাহেবকে এসব সমস্যার কথা বলেছি। তিনি বাচ্চুকে গালিগালাজ করেছেন। বলেছেন সব ঠিক করে দেবেনে। কিন্তু করেনি।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, দুলাল মোল্লা ও রহিমা বেগম দম্পত্তির নিজের ১৮ শতক জমির ওপর রয়েছে উত্তর পাশের পোতায় ১টি দেওয়াল ও মেঝে পাঁকা করা টিনশেড ঘর, পশ্চিম ও পূর্ব পাশের পোতায় ২টি মেঝে পাঁকা করা টিনশেড ঘর। আর দক্ষিণ পাশের পোতায় সদ্য নির্মিত সরকারি টাকার গৃহহীনদের পাঁকা দেওয়াল ও মেঝে পাঁকা করা টিনশেড ঘর। দক্ষিণ পোতার দেওয়াল ও মেঝে পাঁকা করা টিনশেড ঘরে দুটি সোলার প্যানেল স্থাপন করা রয়েছে। আবার সরকারি টাকার গৃহহীনদের নির্মাণ করা ঘরেও নতুন সোলার প্যানেল স্থাপন করা হয়েছে।
সরকারি টাকায় দুলাল মোল্যার ওই ঘর নির্মাণকারী ঠিকাদার জয়পুর ইউনিয়নের ৩ নং ওয়ার্ডের মেম্বার বাচ্চু শেখ জানান, রহিমা বেগম পি.আই.ও স্যারের আত্মীয়। পি.আই.ও করিম সাহেবের অনুরোধে ঘরের নির্মাণ কাজ করেছি। আমি রং ও টয়লেটের কুয়া বানানো বাদে সব কাজই করেছি। আমাকে পি.আই.ও স্যার ২ লাখ ২৫ হাজার টাকা দিয়েছেন। বাকি প্রায় ৭৫ হাজার কি করেছেন জানি না। তবে, লোহাগড়া পৌরসভার ১ নং ছাতড়া ওয়ার্ডের কাউন্সিলর বিশ^নাথ দাস ভুন্ডুল ও পি.আই.ও স্যারের এক আত্মীয় শুনেছি ওই ঘরের কিছু কাজ করেছেন। আমাকে দিয়ে এস্টিমেটের চেয়ে অনেক বেশি কাজ করিয়েছেন পি.আই.ও সাহেব, আমি আরও টাকা পাবো।
লোহাগড়া পৌরসভার ১নং ছাতড়া ওয়ার্ডের কাউন্সিলর বিশ^নাথ দাস ভুন্ডুল বলেন, কাগজ কলমে ওই ঘর নির্মাণ প্রকল্পের সভাপতি আমি। অথচ ঘর নির্মাণ করবার পর আমি বিষয়টি জেনেছি। আমি শুধু রং ও বাথরুমের কাজ করেছি। পি.আই.ও সাহেবের আত্মীয় বাড়িতে ঘরটি নির্মাণ করা হয়েছে । লোহাগড়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান সিকদার নজরুল ইসলাম বলেন, এ ঘরের বিষয়ে আমি কিছুই জানি না। আমার ইউনিয়নের নামে বরাদ্দ দিয়ে পৌরসভার মধ্যে ঘর কিভাবে হলো খোঁজ নিচ্ছি। অনিয়ম হলে আইনগত ব্যবস্থা নেবো। লোহাগড়া উপজেলা নির্বাহী অফিসার রোসলিনা পারভীন বলেন, আমিতো ওই সময় লোহাগড়াতে দায়িত্বে ছিলাম না। পি.আই.ও সাহেব ভাল বলতে পারবেন। তবে,খোঁজ নিয়ে দেখবো। পি.আই.ও এস.এম. এ করিম এর বক্তব্য নিতে তার ০১৭৮৫-৫৭৬৬২৫ নাম্বারে বারবার কল দিলেও তিনি রিসিভ করেননি। তবে, পি.আই.ও অফিসের অফিস সহকারী মো. মনিরুজ্জামান বলেন, স্যার তার আত্মীয়র বাড়িতে ছাতড়া গ্রামে সরকারি টাকায় গৃহহীনদের ঘর করেছেন। কিভাবে কি করলেন জানি না।