টিকা আসবে কোথা থেকে?

0

লোকসমাজ ডেস্ক॥ করোনাভাইরাসের টিকা সংগ্রহের চেষ্টায় আছে সরকার। ইতিমধ্যে সম্ভাব্য টিকা উৎপাদনকারী কয়েকটি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে সরকারের আলোচনা চলছে। শিগগিরই টিকা সংগ্রহে চুক্তি স্বাক্ষরের সম্ভাবনা রয়েছে। গত শনিবার স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক জানিয়েছেন দু-চার দিনের মধ্যেই করোনার ভ্যাকসিন আনার বিষয়ে চুক্তি করা হবে। তবে এই টিকা বা ভ্যাকসিন কোথা থেকে আসবে তিনি অবশ্য সেটা খোলাসা করেননি। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ও অধিদপ্তর সূত্র জানিয়েছে, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার টিকাকেন্দ্রিক গাইডলাইন ধরেই টিকা সংগ্রহের চেষ্টা চলছে। নভেম্বরের মধ্যেই টিকা বাজারে আসতে পারে এমন ভাবনা মাথায় রেখেই টিকা সংগ্রহের পরিকল্পনা নেয়া হয়েছে। যুক্তরাজ্যের অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় ও এস্ট্রাজেনেকার তৈরি টিকা এবং চীনের সিনোভ্যাকের তৈরি টিকাকে এই মুহূর্তে বেশি গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে।
তালিকায় আছে রাশিয়ার তৈরি করোনা ভ্যাকসিনও। এই তিন দেশ থেকে টিকা আনার ক্ষেত্রে সংরক্ষণ ও পরিবহন ব্যবস্থাপনা আমাদের জন্য অনেকটা সহজ হবে বলে মনে করা হচ্ছে। সূত্র বলছে, সরকার আপাতত ফাইজার বা মডার্নার টিকা নিয়ে কম ভাবছে। কারণ এই দুটি কোম্পানির টিকা যে তাপমাত্রায় পরিবহন ও সংরক্ষণ করতে হবে, সেই ব্যবস্থা আমাদের জাতীয় টিকাদান কর্মসূচির আওতায় নেই। এমনকি উপমহাদেশেও নেই। এটা করা অনেক ব্যয়বহুলও। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পরিচালক (সম্প্রসারিত টিকাদান কর্মসূচি বা ইপিআই) ডা. শামসুল হক বলেন, এখন আর আমরা দেরিতে টিকা আসার বিষয়টি মাথায় রাখছি না। বরং ডিসেম্বরের মধ্যেই আসতে পারে, সেদিকে নজর রেখেই নভেম্বরের মধ্যে প্রয়োজনীয় সব প্রস্তুতি শেষ করতে চাই। এই লক্ষ্য নিয়ে কাজ করা হচ্ছে। এজন্য কাজ করা কমিটিগুলো তাদের পরামর্শ ও দিকনির্দেশনাগুলো দ্রুত সময়ের মধ্যে মন্ত্রণালয়ে পাঠাবে। সেখান থেকে প্রয়োজনমতো যাবে প্রধানমন্ত্রীর দপ্তরে। পাশাপাশি যারা মাঠ পর্যায়ে টিকা প্রয়োগ করবেন তাদের করোনার টিকা প্রয়োগের দক্ষতামূলক প্রশিক্ষণ দেয়া এবং প্রয়োজনীয় সুরক্ষা ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করার বিষয়ে কাজ চলছে বলে তিনি জানান। তিনি বলেন, ইপিআইয়ে যারা আছেন তাদের মাধ্যমেই সরকারি ব্যবস্থাপনায় টিকা দেয়ার পরিকল্পনা রয়েছে। এক্ষেত্রে কিছুটা সীমাবদ্ধতা আছে। সারা দেশে আমাদের ২২ হাজার স্বাস্থ্যকর্মীর পদ থাকলেও কর্মরত আছেন ১৭ হাজার। বাকি ৫ হাজারের মতো পদ শূন্য। যদিও টিকা দেয়ার সময় আরো স্বেচ্ছাসেবী নিয়োগ করা হবে; তারাও প্রশিক্ষণ পাবেন।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য অনুসারে, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা গঠিত টিকা সমন্বয় উদ্যোগ বা কোভ্যাকসের শর্ত ও নীতিমালা অনুসারে, বাংলাদেশ মোট জনসংখ্যার ২০ শতাংশ টিকা কোভ্যাকস থেকে পাবে। সেই হিসাবে ৩ কোটি ৪০ লাখ মানুষের জন্য টিকা আসবে বাংলাদেশে। এরমধ্যে প্রথম দফায় করোনায় সম্মুখ যোদ্ধা যারা তারা পাবেন ৫১ লাখ ভ্যাকসিন। দেশের জনসংখ্যার ৩ শতাংশ হারে প্রথমে এটা পাওয়া যাবে। এরপর যাদের বয়স বেশি (৬০-বছরের উপরে) এবং কো-মরবিডিটি (জটিল রোগে) ভুগছেন তারা অগ্রাধিকার ভিত্তিতে ভ্যাকসিন পাবেন। দুই ডোজের টিকা হলে লাগবে ৬ কোটি ৮০ লাখ ডোজ। পুরোটা একবারেই আসবে না, আসবে কিস্তিতে কিস্তিতে। কোভ্যাকসের নির্ধারিত দাম অনুসারে প্রতি ডোজ টিকার জন্য দিতে হবে ১ দশমিক ৬ ডলার থেকে দুই ডলার পর্যন্ত। সেই হিসাবে প্রতি ডোজের দাম দুই ডলার ধরা হয়েছে। দুই ডোজের জন্য জনপ্রতি ধরা হয়েছে ৪ ডলার করে। আর এর সঙ্গে পরিবহন ও অন্যান্য খরচ বাবদ জনপ্রতি ধরা হয়েছে ২ ডলার করে। অর্থাৎ কোভ্যাকসের টিকা প্রয়োগে মাথাপিছু খরচ ধরা হয়েছে প্রাথমিকভাবে ৬ ডলার করে। তবে বেসরকারি কোনো কোম্পানির কাছ থেকে যদি সরকার টিকা কেনে, এর দাম অনেক বেশি পড়বে।
স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের সূত্র জানায়, বিদেশ থেকে কীভাবে টিকা সরকারের হাতে আসবে সেটা নিয়ে পরিকল্পনা করা হয়েছে। যেহেতু ধরে নেয়া হচ্ছে, কোভ্যাকসের মাধ্যমে স্বল্পমূল্যে টিকা পেতে কিছুটা দেরি হতে পারে, তাই প্রয়োজনে সরকারের কাছ থেকেই আলাদা টাকা নিয়ে টিকা কেনা হবে। এ জন্য অর্থ বরাদ্দ করা আছে। দুই প্রক্রিয়া অনুসরণ করেই টিকা কেনার চিন্তা আছে। প্রচলিত সাধারণ ক্রয় প্রক্রিয়া অনুসরণ করলে যেহেতু হাতে পেতে প্রায় ৩ মাস চলে যায়, তাই প্রয়োজনে জরুরি বিবেচনায় প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা নিয়ে সরাসরি টিকা কেনার সুযোগ রাখা হচ্ছে। অন্যদিকে সরকার নিজ উদ্যোগে সরাসরি দেশের বাইরের কোনো কোম্পানি থেকেও টিকা সংগ্রহ করতে পারবে। স্থানীয় কোনো কোম্পানি যদি টিকা এনে সরকারকে সরবরাহ করে, সেটারও পথ খোলা রাখা আছে। এদিকে টিকা কেনার জন্য সরকার এরই মধ্যে ৬০০ কোটি টাকা বরাদ্দ দিয়ে রেখেছে প্রাথমিকভাবে। অন্যদিকে চীনের সিনোভ্যাকের টিকার বাংলাদেশে ট্রায়ালের বিষয়টি ঝুলে থাকলেও ভারতের বায়োটেক টিকার ট্রায়ালের বিষয়টি বিবেচনায় রয়েছে। গতকাল সচিবালয়ে এক সভায় করোনার দ্বিতীয় ঢেউ আসলে তা মোকাবিলায় সরকার পুরোপুরি প্রস্তুত রয়েছে বলে জানিয়েছেন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রী। মন্ত্রী এ প্রসঙ্গে বলেন, করোনায় দ্বিতীয় ঢেউ মোকাবিলায় পূর্বের সকল প্রস্তুতি ধরে রেখে কাজ করা হচ্ছে। ডেডিকেটেড হাসপাতালগুলো যেভাবে করোনার জন্য কাজ করেছে তা অব্যাহত রাখা হবে। চিকিৎসক ও নার্সদের প্রশিক্ষণ চলমান থাকবে। পিপিই দেশে পর্যাপ্ত পরিমাণে রয়েছে তা ভবিষ্যতেও মজুত থাকবে। এর পাশাপাশি জেলা ও উপজেলা পর্যায়ের কমিটিগুলোকে প্রচারণা আরো বৃদ্ধি করতে বলা হয়েছে। একই সঙ্গে কোভিড এর দ্বিতীয় ঢেউ মোকাবিলায় অন্যান্য মন্ত্রণালয় ও বিভাগগুলোতেও অবগত করা হয়েছে।