কেন্দ্রীয় পানি কমিটির সংবাদ সম্মেলন কপালিয়া বিলে টিআরএমসহ পাঁচ দফা বাস্তবায়নের দাবি

0

স্টাফ রিপোর্টার,কেশবপুর (যশোর) ॥ যশোরের কেশবপুর প্রেসকাবে কেন্দ্রীয় পানি কমিটির পক্ষ থেকে সংবাদ সম্মেলন হয়েছে। শনিবার সকালে কাবের সম্মেলন কক্ষে অনুষ্ঠিত এ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন পানি কমিটির নেতা ও প্রাক্তন অধ্যক্ষ এ বিএম শফিকুল ইসলাম। তিনি উল্লেখ করেন যে, অকাল জলাবদ্ধতা নিরসনে অবিলম্বে কপালিয়া বিলে টাইডাল রিভার ম্যানেজমেন্ট (টিআরএম) বাস্তবায়ন, আমডাঙ্গা খাল সংস্কার ও প্রশস্তকরণ, ভবদহের ২১ ও ৯ ভেন্টের মাঝখান দিয়ে টেকা-মুক্তেশ্বরী নদীর সাথে হরিনদীর অবাধ সংযোগ, পোল্ডার অভ্যন্তরের আবদ্ধ নদীগুলো উন্মুক্ত করে ভৈরব, কপোতা এবং বিল ডাকাতিয়ার নদীগুলোর সাথে সংযোগ প্রদান। অভ্যন্তরীণ বিল, খাল ও স্লুইসগেট ব্যবস্থাপনা এবং সকল কাজে জনগণের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা।
লিখিত বক্তব্যে তিনি আরো উল্লেখ করেন যে, ভবদহ অঞ্চলের জলাবদ্ধতা ইস্যুটি বহুল আলোচিত জাতীয় পর্যায়ের একটি ইস্যু। বতর্মানে ভবদহ অঞ্চল অতিক্রম করে সমস্যাটি নিম্নে তেলিগাতী-ঘ্যাংরাইল অববাহিকা পর্যন্ত বিস্তৃত হয়ে পড়েছে। জলাবদ্ধতায় আক্রান্ত অসহায় মানুষদের জীবন জীবিকায় দেখা দিয়েছে স্থবিরতা। নিচু বসতি এলাকা বসবাসের অনুপযোগী হয়ে পড়ায় ঐসব এলাকা থেকে ব্যাপকহারে মানুষ স্থানান্তরিত হয়ে অন্যত্র চলে যেতে বাধ্য হচ্ছে। খুকশিয়া বিলে ৭ বৎসর ধরে টিআরএম বাস্তবায়নের পর পরবর্তীতে বিল হিসেবে পার্শ¦বতী কপালিয়া বিলে টিআরএম বাস্তবায়নের উদ্যোগ নেওয়া হয়। কিন্তু জনগণ ও পানি উন্নয়ন বোর্ডের মধ্যে দ্বন্দ্ব সংঘাতের কারণে ওই বিলে টিআরএম কার্যক্রম স্থগিত হয়ে যায়। জনগণের সাথে দ্বন্দ্ব সংঘাতের মূল কারণ ছিল খুকশিয়া বিলে টিআরএম বাস্তবায়নে বিল অধিবাসীদের ভোগান্তি। এর প্রভাব পড়ে বিল কপালিয়ার অধিবাসীদের উপর।
কপালিয়া ও খুকশিয়া বিল পাশাপাশি দুটি বিল। কপালিয়া বিল অধিবাসীদের অনেকের জমি রয়েছে খুকশিয়া বিলে। বিভিন্ন ধরণের জটিলতার কারণে খুকশিয়া বিলের অধিকাংশ জমির মালিক সরকারের বরাদ্দকৃত তিপূরণের টাকা উত্তোলন করতে পারেনি। তাছাড়া বিলের পেরিফেরিয়াল বাঁধ ভেঙ্গে প্রায় প্রতি বৎসর এলাকা প্লাবিত হওয়া, বিল ব্যবস্থাপনায় কর্তৃৃপরে উদাসীনতা প্রভৃতি কারণে তাদের দীর্ঘ ৭ বৎসর যাবৎ চরম মানবেতর জীবন যাপন করতে বাধ্য হতে হয়েছে। এতে পার্শ্ববতী বিল কপালিয়ার অধিবাসীদের মনে এ ধারনা দৃঢ়মূল হয় যে, তাদেরকেও অনুরূপ ভোগান্তির শিকার হতে হবে। জনগণের এ ধরণের মনোভাবকে পুঁজি করে ঘের মালিকরা এবং রাজনৈতিক দলাদলিতে দ্বন্দ্ব সংঘাতের সৃষ্টি হয় এবং শেষ পর্যন্ত কপালিয়া বিলে টিআরএম বাস্তবায়ন স্থগিত হয়ে যায়। বর্তমানে কপালিয়া বিল অধিবাসীদের মনোভাব টিআরএম বাস্তবায়নের অনুকূলে।
বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ডের বর্তমান নথিপত্রে ২৪ নং পোল্ডারকে ভবদহ এবং তার সন্নিহিত এলাকাকে ভবদহ এলাকা হিসাবে বিবেচনা করা হচ্ছে। এই অঞ্চলের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে হরি-শ্রী, টেকা-মুক্তেশ্বরী, আপারভদ্রা, হরিহর ও বুড়িভদ্রা নদী। প্রশাসনিক দিক থেকে এলাকাটি যশোর জেলার সদর, মণিরামপুর, অভয়নগর, কেশবপুর উপজেলা, খুলনা জেলার ডুমুরিয়া উপজেলা এবং সাতীরা জেলার তালা উপজেলার আংশিক এলাকা নিয়ে গঠিত। এলাকার আয়তন প্রায় ৮০ হাজার হেক্টর, জনসংখ্যা প্রায় ১৫ ল এবং গ্রাম সংখ্যা ৪শ ৯৫টি। চিহ্নিত এলাকার সকল নদীর পানি কাসিমপুর ত্রিমোহনায় মিলিত হয়ে তেলিগাতী-ঘ্যাংরাইল নামে প্রবাহিত হয়ে বারআড়িয়া মোহনায় মিলিত হয়েছে।
বিগত ২০১৮ সালের ১২ সেপ্টেম্বর পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ের যাচাই বাছাই কমিটির সভায় বিল কপালিয়ার জন্য প্রস্তাবিত টিআরএম কার্যক্রমকে বাদ দিয়ে ৬শ৫৬ কোটি ৮৮ লাখ ৯৬ হাজার টাকার একটি সংশোধিত প্রকল্প প্রণয়ন করা হয়েছে। এ সিদ্ধান্ত এলাকাবাসীর জন্যে চরম ক্ষতিকর বলেও দাবি করা হয়। এতদিন স্থানীয়রা ধারনা করছিলেন টিআরএম হবে এবং বিলটি আবার মানুষের কল্যাণে আসবে। কিন্তু এ ধরণের বাস্তবতা বিবর্জিত প্রকল্পে মানুষ হতাশ হয়েছে। তাই এলাকাবাসী দাবি বিল কপালিয়ায় অবিলম্বে টিঅরএম চালু কার হোক। সংবাদ সম্মেলনে পানি কমিটির কেন্দ্রীয় ও স্থানীয় নেতাকর্মী ছাড়াও বিল কপালিয়া এলাকার মানুষ উপস্থিত ছিলেন।