পবিত্র ঈদে মিলাদুন্নবী : মহানবীর (সা.) আদর্শই শান্তির পথ

0

আজ পবিত্র ঈদে মিলাদুন্নবী। এদিন মানবকুলের শিরোমণি আমাদের প্রিয় নবী (সা.) আরবের মক্কা নগরীতে জন্মগ্রহণ করেন। মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামীন মানবজাতিকে সঠিক পথপ্রদর্শনের জন্য সৃষ্টির শুরু থেকে যুগে যুগে নবী-রাসূল প্রেরণ করেছেন। তাঁদের মধ্যে সর্বশ্রেষ্ঠ ও সর্বশেষ নবী হলেন আমাদের প্রিয় মহানবী হযরত মুহাম্মদ (সা.)। তিনি সাইয়িদুল মুরসালিন- সব নবী-রাসূলের নেতা। নিখিল বিশ্বের নবী। তিনি যখন জন্মগ্রহণ করেন তখন আরব দেশ নিমজ্জিত ছিল অশিা, অজ্ঞতা ও কুসংস্কারের ঘোর তমসায়। সেই যুগকে বলা হতো ‘আইয়ামে জাহেলিয়া’ বা অন্ধকারের যুগ। সেই বর্বর যুগে পাশবিক স্বভাবের তাড়নায় মানুষের মানবিক গুণাবলীর অপমৃত্যু ঘটেছিল। এই নিকষ তমসা থেকে মানবজাতিকে পরিত্রাণ করতে, আলোর পথে নিয়ে আসতে আল্লাহতায়ালা মহানবীকে (সা.) পৃথিবীতে প্রেরণ করেন। মহান আল্লাহতায়ালা মুসলমান তথা সমগ্র মানবজাতির জন্য সর্বাপো প্রজ্ঞাময়, কল্যাণকর, পরিপূর্ণ জীবনবিধান সংবলিত পবিত্রতম গ্রন্থ কোরআনুল কারিম নাজিল করেন মহানবীর (সা.) ওপর। এই গ্রন্থ বিশ্ব মানবের ইহকাল, পরকাল ও সামগ্রিক কল্যাণের পথপ্রদর্শকরূপে এক সার্বজনীন, শাশ্বত ও পূর্ণাঙ্গ ধমগ্রন্থ। এটিই সর্বশেষ আসমানি কিতাব।
আরবের ৫৭০ খ্রিস্টাব্দে মরুপ্রান্তরে শান্তি ও কল্যাণের স্নিগ্ধ বারিধারার মতো যে মহামানবের আবির্ভাব ঘটেছিল, তিনি কেবল আরবেই নন, সারাবিশ্বে এক অভূতপূর্ব বিপ্লব ঘটিয়েছিলেন। এ ছিল উঁচু-নীচু, ধনী-দরিদ্র, নারী-পুরুষ, ধর্ম-বর্ণ-গোত্র নির্বিশেষে সব মানুষের সমমর্যাদার বিপ্লব। মানবতার বিপ্লব। মহানবী (সা.) তাঁর প্রচারিত ধর্ম ইসলামের মাধ্যমে এই পৃথিবীতে যে জাগতিক ও আধ্যাত্মিক বিপ্লব ঘটিয়েছেন, তার প্রতি সশ্রদ্ধ স্বীকৃতি জানিয়েছেন পাশ্চাত্যের জ্ঞানী-গুণী পণ্ডিতরাও। মার্কিন ইতিহাসবিদ মাইকেল এইচ হার্ট তার আলোড়ন সৃষ্টিকারী ‘দ্য হান্ড্রেড’ গ্রন্থে বিজ্ঞানসম্মত চুলচেরা বিশ্লেষণের মাধ্যমে বিশ্বের ইতিহাসে সর্বাধিক প্রভাব বিস্তারকারী যে একশ’জন নেতৃস্থানীয় ব্যক্তির জীবন ইতিহাসে লিপিবদ্ধ করেছেন, সেই শ্রেষ্ঠ মনীষীদের মধ্যে শ্রেষ্ঠতম হলেন আমাদের প্রিয় নবী হযরত মুহাম্মদ (সা.)। পরিতাপের বিষয়, অনেক মুসলমান এখনও মহানবীর (সা.) আদর্শ থেকে বিচ্যুত। তারা কোরআনের শিা ভুলে গেছে। বিভিন্ন স্থানে মুসলমানরা পরস্পর হিংসা-বিদ্বেষ ও হানাহানিতে লিপ্ত। অনেকে ধর্মের অপব্যাখ্যা দিয়ে চালাচ্ছে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড। এতে পৃথিবীর বিভিন্ন স্থানে জ্বলছে অশান্তির দাবানল। মানবিক অনুভূতি তলানিতে গিয়ে ঠেকেছে। মানুষের প্রতি মানুষের করুণা, মমতা, ভালোবাসা ও দয়া-প্রীতির ধারা হচ্ছে ীণ থেকে ীণতর। মানুষ একে অপরকে নির্বিচারে হত্যা করার মতো নৃশংসতায় লিপ্ত হয়েছে। জনজীবনে দগদগে তের মতো বাসা বেঁধেছে সন্ত্রাস। নৈরাজ্য আর অনিয়মই হয়ে যাচ্ছে নিয়ম। দুর্নীতি পরিণত হয়েছে সামাজিক আচারে। অথচ নবীজী (সা.) প্রবর্তিত ইসলাম ধর্মের শিা হল ইহলৌকিক ও পারলৌকিক কল্যাণ ও মঙ্গল। প্রিয়নবী (সা.) মানুষের দুঃখ-কষ্ট বুক পেতে নিয়েছেন। তিনি ছিলেন বিশ্বের সর্বশ্রেষ্ঠ মানবতাবাদী। তিনি সমাজদেহ থেকে অন্যায়ের মূলোৎপাটন করেছেন।
রাসূলুল্লাহ (সা.) কেবল আরিক অর্থেই ইবাদত ও কোরআন পাঠের প্রতি গুরুত্ব আরোপ করেননি, মানবজাতির সার্বিক কল্যাণ ও শান্তির জন্য তিনি এর অন্তর্নিহিত অর্থ অনুধাবনের কথা বলেছেন। দয়ায়, মায়, দানে-কর্মে, উদারতায়, মহত্ত্বে, জ্ঞানে, ধর্মে প্রিয় নবী (সা.) সর্বকালের মানুষের আদর্শ। তাঁর আদর্শ অনুসরণ করলে সব অশান্তি-অনাচারের যন্ত্রণা প্রশমিত হতে বাধ্য আজ আমরা মহানবীর স্মরণে মহান আল্লাহর দরবারে প্রার্থনা করবো। চাইবো শেষ বিচারের দিন আমরা যেন তাঁর সাফায়েত পাবার পরম সৌভাগ্য অর্জন করতে পারি।